ডিম যেভাবে খেলে পুষ্টি মিলবে, ওজনও কমবে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০২৩, ১০:৪৫

পুষ্টি উপাদানের পাওয়ার হাউস ডিম। প্রাকৃতিকভাবে যেসব খাবারে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর উপাদান পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হল ডিম। বেশিরভাগ ডাক্তারই স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় ডিম রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একটা করে ডিম খেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমতে পারে। ডিম থেকে শারীরিক উপকার পেতে হলে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের খাদ্যগুণ রয়েছে ডিমে। প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফসফরাস, আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজসহ সব উন্নত পুষ্টি উপাদান থাকায় ডিমের গুরুত্ব অনেক। পেশির গঠনের জন্য ডিম অত্যন্ত উপযোগী। পেশি সুস্থ সবল রাখতে হলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন প্রয়োজন শরীরে।

আমাদের আশেপাশে প্রতিনিয়ত ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ারা ঘোরাঘুরি করছে। চোখে দেখা যায় না এমন ক্ষতিকারক এই ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াই শরীরের বেশিরভাগ রোগের পেছনে দায়ী। এদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শরীরে শক্ত-সামর্থ্য রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দরকার। তাছাড়া গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ডিম খেলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি হয়। মস্তিষ্ক সচল রাখতে সহায়তা করে ডিম।

অনেকেই চর্বি জমে যাওয়ার ডিম খেতে চান না। যেহেতু ডিমের কুসুমে অধিক মাত্রায় কোলেস্টেরল থাকে, তাই ধারণা করা হয়, যাদের হার্ট ডিজিজ রয়েছে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাদের জন্য ডিমের কুসুম ক্ষতিকর।

বর্তমানে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে, ডিমের কুসুম থেকে যে কোলেস্টরেল পাওয়া যায়, তা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় না।

ডিমে ফলেট, কোলিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, লেটিইন এবং জি-অ্যাকজানথাইন থাকে। অনেকেই কুসুম ছাড়া ডিম খান কিন্তু কুসুমসহ ডিম ক্ষতিকর নয়।

ভিটামিন বি১২-এর দারুণ উৎস হল ডিম। একটি সেদ্ধ ডিমে প্রায় ০.৬ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি১২ থাকে। যাঁদের দেহে ভিটামিন বি১২-এর মারাত্মক ঘাটতি তৈরি হয়, তাঁদের জন্য ডিম ভিটামিন বি১২-এর প্রধান উৎস হওয়া উচিত নয়। আসলে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, ডিম স্বল্প সময়ের মধ্যে ভিটামিন বি১২-এর মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। তবে প্রতিদিনের খাবার হিসেবে ডিম দারুণ উপকারী।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ডিমের মোট তিনটি অংশ রয়েছে। খোসা, কুসুম ও সাদা অংশ। ডিমের সাদা অংশের মধ্যে থাকে অ্যালবুমিন প্রোটিন। কুসুমও তৈরি প্রোটিন, কোলেস্টেরল ও ফ্যাট দিয়ে।

সকালের নাশতায় বা অফিসের টিফিনে, অথবা অনেক সময়ই দুপুরে ডালের সঙ্গে সিদ্ধ ডিম খান অনেকে। অনেক খাবারের সঙ্গেই সিদ্ধ ডিম খাওয়া যেতে পারে।

যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান তারা সিদ্ধ ডিম খাবেন। যাদের শরীরে অ্যালবুমিনের পরিমাণ কম তারা সেদ্ধ ডিম খাবেন। কিন্তু যাদের শরীরে অ্যালবুমিনের পরিমাণ বেশি তারা সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশ খাবেন না। ব্লাড প্রেসারের সমস্যাযাদের আছে তারাও সেদ্ধ ডিমে খেতে পারেন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান যারা তারা ভাজা ডিম অবশ্যই খাবেন না কারণ সেদ্ধ ডিমের থেকে ভাজা ডিমে ক্যালরি বেশি থাকে। যাদের ওজন বেড়ে যাচ্ছে, তাদের সাধারণত কুসুম বাদ দিয়ে ডিম খেতে বলা হয়৷

পুষ্টিবিদদের মতে, ‘ওজনে কোনো প্রভাবই ফেলে না ডিম। তেল-মসলার যেকোনো খাবারই ওজন বাড়ায়। ডিমও খুব কষিয়ে রান্না করলে বা ঘন ঘন ভেজে খেলে তেল-মসলার জন্যই মেদ বাড়ে। মেদ নিয়ে ভয় থাকলে ডিম বাদ দেওয়ার কোনো কারণই নেই। বরং বেশ কিছু উপায়ে ডিম খেলে মেদের সঙ্গে লড়া যায় নির্বিঘ্নে। শরীরও পায় পুরো পুষ্টিগুণ।’

ভাজাভুজি এড়াতে ঘন ঘন পোচ বা অমলেটকেও না বলুন। বরং ডিম খান এইসব উপায়ে :

পানি দিয়ে পোচ : তেল নয়, পোচ করুন পানি ও ভিনেগারের সাহায্যে। একটি পাত্রে কিছুটা পানি নিয়ে তাতে অল্প ভিনেগার যোগ করে পানিটা নেড়ে নিন। এবার খুব সাবধানে প্রথমে ডিমের সাদা অংশ ফেলুন জলে। তার ওপর ফেলুন ডিমের কুসুম। এমনভাবে কুসুম যোগ করতে হবে, যাতে তা ভেঙে না যায়। খানিক পরেই ডিমের সাদা অংশ ফুলে উঠে ঢেকে দেবে হলুদ কুসুমকে। সাদা আস্তরণের ভেতর টলটল করবে কুসুম। ঝাঁঝরি হাতা দিয়ে পোচটিকে আলতো করে তুলে নিন পানি থেকে। তেল ছাড়া এমন পোচই গোটা বিশ্বে জনপ্রিয়। ডিমের সবটুকু পুষ্টিগুণ মেলে এই পোচ থেকে। মেদ জমার ভয়ও থাকে না।

সালাদ : পালং, শসা, ব্রকলি, সিদ্ধ করা গাজর, কড়াইশুটি, টমেটো-পেঁয়াজের সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে দিন সিদ্ধ ডিমের কুঁচোনো অংশ। পর থেকে ছড়ান গোলমরিচ ও লেবুর রস। এতে গোটা ডিমের পুষ্টিগুণ যেমন মিলবে, তেমনই আবার সবুজ সবজি, শাক ও গাজরের প্রভাবে মেদ বাধা পাবে। ফলে ডিমে বাড়বে না ওজন।

ওটমিল ও ডিম : ডিমের সঙ্গে ওটমিল খান। ওটমিল পাচনমূলক এসিড ক্ষরণেও বাধা দেয়। তাই ওটমিল খেলে সহজে খিদেও পায় না। ওটমিল শরীরে বাড়তি কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড জমার পথে বাধা দেয়। এ দিকে ডিম জোগান দেয় প্রোটিনের। ফলে ওটমিল ও ডিম একত্রে লড়াই করলে মেদ জমা কঠিন হেয় দাঁড়ায়।

ওমলেট ও সিদ্ধ ডিমের গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে নিন

ওমলেট ডিমে রয়েছে ৯০% ক্যালরি, ৬.৮ গ্রাম ফ্যাট, ২ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ১০% ফসফরাস সেদ্ধ ডিমে রয়েছে ৭৮ % ক্যালরি, ৬.৩% গ্রাম প্রোটিন, ৫.৩% গ্রাম ফ্যাট, ০.৬% গ্রাম কার্বহাইড্রেট, ১.৬% গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ১২.১০% ভিটামিন 'বি', ৯% ফসফরাস।

বিশেষজ্ঞদের মতে কখনও এমন ডিম কিনবেন না যা ভাঙা বা ফাটা- কারণে সামান্য ফাটা থাকলেও সেখানে ধুলাবালি বা জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।

ডিমকে ভাল রাখতে তা ফ্রিজে রাখুন। ডিম বাক্সের ভেতরে থাকলে ডিমের সাদা অংশ তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ভাল থাকে। কিন্তু ডিমের কুসুম ভাল থাকে তিনদিন। বরফে হিমায়িত অবস্থায় ডিমের সাদা ও কুসুম ভাল থাবে তিন মাস পর্যন্ত।

ডিম খাওয়া গর্ভবতী মা, শিশু, কিশোর, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উপকারি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিমের সঙ্গে এমন অনেক খাবার একসঙ্গে খেলেই হতে পারে বিপদ। যেমন কলা, মধু, লেবু, টক দই ভুলেও খাবেন না ডিম খাওয়ার পরে।

ডিম রান্নার ব্যাপারে সবচেয়ে সহজ, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত হল ডিম সিদ্ধ করে খাওয়া। বেশিরভাগ পুষ্টিবিদদের মতে, ডিমের ওমলেট না করে খাবার পরামর্শ দেন কারণ ডিম যে তেলে ভাজা হয়, তার মধ্যেকার স্যাচুরেটেড ফ্যাট কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

কাঁচা ডিম বা হালকা করে রান্না ডিমও পুষ্টিযুক্ত, জীবাণু সংক্রমণের ব্যাপারে উদ্বেগ থাকলে ডিম রান্না করে খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

যারা ওজন ঠিক রাখতে চায় কিংবা বাড়াতে না চায় তাদের ডিম পোচ না খাওয়া ভালো। আর ব্লাডপ্রেশারের সমস্যা থাকলে এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুদের জন্য ডিম পোচ ভালো। ডিম খাওয়ার অরুচি হলে ডিমের কারি রান্না করে ভাত বা রুটির সঙ্গে খেতে পারেন।

(ঢাকাটাইমস/১৯ মার্চ/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :