মেয়রকে ভূমিদস্যু বলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে জখম, পরে গ্রেপ্তার
জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানুর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলে ফেসবুক লাইভে বক্তব্য দেওয়ায় সাবেক শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর হোসেন আবাহনীকে পিটিয়ে জখম ও মাথার চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পরে মেয়র বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই সাবেক ছাত্রলীগের নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন।
বুধবার (২৯মার্চ) রাতে জামালপুর পৌর শহরের পাথলিয়া এলাকায় শহর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নুর হোসেন আবাহনীকে মারধরের এ ঘটনা ঘটে।
বুধবার (২৯মার্চ) বিকালের দিকে ওই ছাত্রলীগ নেতা তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক থেকে লাইভে গিয়ে এসব বক্তব্য দেন। সাথে সাথে ওই লাইভ ভিডিওটি ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়েন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার ইফতারের আগে মেয়রের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন ও পিটিয়ে দুই পা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করেন। সন্ধ্যার পর খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নিয়ে যান। পরে আহত ছাত্রনেতা আবাহনীকে চিকিৎসার জন্যে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় মেয়র ছানোয়ার হোসেন নিজেই বাদী হয়ে ওই নেতার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন।
এ বিষয়ে আহত ছাত্রনেতা নুর হোসেন আবাহনী নির্যাতনের বর্ণনায় বলেন, ‘আমার হাতে পায়ে ইচ্ছা মতো তিন দফা মারলো। আমি বাকরুদ্ধ। আমি আর কী করমু। রক্তাক্ত হয়ে গেছি, বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। আমার অসুস্থ ভাঙা পা নিয়ে আমারে চার হাত পা করে তুলা করে বাড়ির ভিতর দিয়ে নিয়ে হোন্ডরে করে তুলে ওর ইটের ভাটায় নিয়ে যায়। ইটের ভাটায় নেওয়ার পরে আমার চুল কাটছে, আমার ভোরু কাটছে। চার পাশ দিয়ে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তার পরে আবার আমাকে মারে। তারপরে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ সব সময় করতাম। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ফলে আজকে ভুমিদস্যূ মেয়র আমার এ অবস্থা করছে।
এ প্রসঙ্গে মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, এটা আমার বাবার জমি। এটা কি ওর বাপের জমি? আমার বাপের জমিতে সে এসব করছে। আপনারা আসেন, দেখেন।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, ‘জামালপুর পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানুর বিরুদ্ধে ফেসবুকে বক্তব্য দেয়ার ঘটনায় এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে তার ওপর চড়াও হয়। তাকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে। তার বিরুদ্ধে মেয়র ছানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন’।
উল্লেখ্য, ২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের লাইভে সাবেক ছাত্রনেতা নুর হোসেন আবাহনীকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রিয় জামালপুরবাসী, আজকে আপনাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখাবো। আপনারা অতীতে দেখেছেন যে কীভাবে পাকিস্তানিরা আমাদের শাসন এবং শোষণ করেছে। এখন আপনারা দেখতে পারবেন পাথালিয়া পশ্চিমপাড়ায় যে কীভাবে শাসন এবং শোষণ হচ্ছে। সেই পাকিস্তানি স্টাইলে, সেই স্টাইলটা আপনারা দেখতে পারবেন। এদিকে যা দেখতেছেন এটা হচ্ছে যে আমাদের মেয়র মহোদয় ছানোয়ার হোসেন ছানু বাড়ি করবে বলে, এই জমিগুলা নিয়েছে। প্রথমে সে (মেয়র) স্টাইলটা কী করছে, সে (মেয়র) স্টাইলটা করেছে, তার বাবার একমাত্র একটা সেচ পাম্প (মেশিনপাড়) ছিল, ওই সেচ পাম্পটা দিয়ে, (মেশিনপাড়টা) তিনি কৃষকদের আগে পানি দেওয়া বন্ধ করেছে। পানি দেওয়া বন্ধ করার ফলে আমাদের কৃষক যারা ছিল, তারা সেখানে আবাদ করতে পারে নাই। আবাদ না করার ফলে ওই যে ছোট ছোট খুঁটিগুলা দেখতেছেন এই খুঁটিগুলা লক্ষ্য করে সে একদমই বাছাই করে নিয়েছে যে সে এইভাবেই জমি জমা দখল করে নেবে। মাঝখানে কার জমি পড়েছে, সেটা তার দেখার বিষয় নাই।’
(ঢাকাটাইমস/৩০মার্চ/এআর)