মাদারীপুরে তরমুজের কেজি ৩০ টাকা!
গত কয়েক দিনের বৃষ্টি আর সরবরাহ বেশি হওয়ায় মাদারীপুরের বাজারে তরমুজের দাম কমতে শুরু করেছে। আগে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে তরমুজ ক্রেতাদের মধ্যে।
শনিবার (১ এপ্রিল) সরেজমিনে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাদারীপুরের মস্তফাপুর ফলের আড়তে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তরমুজ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। দলে দলে খুচরা বিক্রেতারা আসছে সেই তরমুজ কিনতে। কেউ ট্রলি বা অকোবাইকে করে ভয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বাজারে। আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি তরমুজ এসেছে আড়তগুলোতে। ফলে কেনাবেচাও বেড়েছে। রোজার শুরুতে প্রতিটি আড়তেও তরমুজ কেজি দরে বিক্রি হতো। কিন্তু বর্তমানে সরবরাহ বেশি হওয়ায় আড়ত থেকে পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারেও পিস বিক্রি করছে কেউ কেউ। তবে বিভিন্ন সাইজের তরমুজের বিভিন্ন দামও রয়েছে।
তরমুজ বিক্রেতা ও কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমানে চিত্র উল্টো। বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা অনেকেই বড় ধরনের লোকসান থেকে বাঁচতে আধাপাকা তরমুজ কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাতে বাজারে বেড়ে গেছে সরবরাহ, কিন্তু আশানুরূপ দাম মিলছে না। বড় ধরনের বৃষ্টি বা শিলা বৃষ্টি হলে পথে বসতে হবে কৃষকদের। তাই তারা আগেভাগেই তরমুজ কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে ক্রেতাদের এতে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। তারা বাজার মনিটরিংয়ের দাবিও করেন।
মাদারীপুর পৌর শহরের ইটেরপুল বাজারের তরমুজ বিক্রেতা রাজু হোসেন বলেন, ‘আমরা আগে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা ধরে কিনে আনছি আড়ত থেকে। বিক্রি করেছি ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজি। এখন আড়তেও দাম কমেছে, তাই আমরাও দাম কম রাখি। বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে। অনেক ক্ষেত্রে পিস হিসেবে বিক্রি করছি। সাইজ বুঝে এর দাম ধরা হয়।’
একই বাজারের তরমুজ ক্রেতা এসএম আরাফাত শরীফ বলেন, ‘রমজানের শুরুতে তরমুজের দাম আকাশচুম্বি ছিল, বর্তমানে দাম অনেকটা কমেছে। আগে যে তরমুজ কিনতাম প্রতি পিস তিন শ’ থেকে চার শ’ টাকা দরে তা এখন দেড় শ’ থেকে দুই শ’ টাকা দরে কিনছি। তবে কয়েক বছর আগে তরমুজের দাম এতটাও ছিল না, যেটা এখন আছে। এটা সামগ্রিকভাবেই বাজার দর বেশি হওয়ায় প্রভাব পড়েছে।’
মাদারীপুর জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, জেলার বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে কৃষকদের খেতে এখন তরমুজের সমারোহ। কাটা ও বিক্রিতে ব্যস্ত কৃষক। তবে তরমুজ চাষের বড় এলাকা হচ্ছে শিবচর ও কালকিনি উপজেলায়। এখানের তরমুজ সুস্বাদু ও মিষ্টি বলে জেলার বিভিন্ন বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অনেকেই আগাম তরমুজ চাষ করেছেন ভালো দাম পাওয়ার আশায়। বিগত বছরের চেয়ে এবার তরমুজ চাষে খরচ পড়েছে বেশি। দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির ফলে তাদের খরচও বেশি হয়েছে।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সন্তোষ চন্দ্র চন্দ জানান, ‘এ বছর মাদারীপুরে তরমুজের আবাদের লক্ষ্যমাত্র ছিল ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে তার চেয়ে বেশি। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এবার জেলায় তরমুজও উৎপাদন বেশি হয়েছে। আগামীতে তরমুজ চাষাবাদে কৃষকদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হবে। বিশেষ করে কৃষকদের সার, বীজ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।’
(ঢাকাটাইমস/০১এপ্রিল/এআর)