পাবলিক প্লেসে ধূমপান: প্রতিকার চাই

সাইদুর রহমান শাহিদ
| আপডেট : ১৪ মে ২০২৩, ১৩:২৯ | প্রকাশিত : ১৪ মে ২০২৩, ১০:০১

ধূমপান বিষপান একথা আমাদের সবারই জানা। তবে তাতে ফল নেই। এ কথা জেনেও আমরা যেন তা পা দিয়ে মাড়িয়ে ধূমপান করেই যাচ্ছি। দিন দিন মহামারি রূপে বাড়ছে ধূমপানকারীর সংখ্যা। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বালক থেকে শুরু করে বার্ধক্যে কাবু হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরাও এই মহামারিতে আক্রান্ত। সম্প্রতি নারীদের মাঝেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে ধূমপানের প্রবণতা। বিশেষত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীদের কাছে ধূমপান যেন স্বাধীনতার স্বরূপ। আজকাল টি-স্টলগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের হাতেও দেখা যায় জ্বলন্ত সিগারেট। বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ প্রণয়ন করে। সেই আইনের সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী ‘পাবলিক প্লেস’ এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, লিফট, আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্র, হাসপাতাল, ক্লিনিক, আদালত, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, নৌ-বন্দর, রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনাল ভবন, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী কেন্দ্র, থিয়েটার হল, বিপণি ভবন, চারদিকে দেওয়াল আবদ্ধ রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক, মেলা বা পাবলিক পরিবহনে আরোহণের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সারি, জনসাধারণের সম্মিলিতভাবে ব্যবহার্য অন্য কোনো স্থান অথবা সরকার বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাধারণ বা বিশেষ আদেশে সময় সময় ঘোষিত অন্য যেকোনো বা সকল স্থান।

‘পাবলিক পরিবহন’ এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, মোটরগাড়ি, বাস, রেলগাড়ি, ট্রাম, জাহাজ, লঞ্চ, যান্ত্রিক সব ধরনের জনযানবাহন, উড়োজাহাজ এবং সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে নির্দিষ্ট করা বা ঘোষিত অন্য যেকোনো যান।

উপরোক্ত জায়গাগুলোতে ধূমপান করলে রয়েছে শাস্তিরও বিধান। আইনানুযায়ী যে কোন পাবলিক প্লেসে ধূমপানকারীর শাস্তি অনধিক তিনশত টাকা অর্থদণ্ড এবং পুনরায় আইন অমান্যকারীর জন্য রয়েছে দ্বিগুণ অর্থদণ্ডের বিধান। কিন্তু আমাদের দেশে সে আইনের ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার প্রচারণার অভাবে আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তাছাড়াও ধূমপানকারীদের দ্বারা সংঘটিত পরিবেশে পরোক্ষ ধূমপানকারীদেরও আইনের আশ্রয় নেয়ায় বেশ উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। তারা যেন নীরবেই তা সয়ে যাচ্ছেন। আইনে পাবলিক প্লেসের ব্যাখায় উল্লেখিত পাবলিক প্লেসগুলোর মধ্যে ফুটপাথে সবচেয়ে বেশি ধূমপান সংঘটিত হয়। আমাদের দেশের ফুটপাথে গড়ে ওঠা ছোট ছোট দোকানগুলোর প্রধান পণ্যই চা আর তামাকজাত দ্রব্য। স্বভাবতই সেখানে ধূমপানকারীদের ভিড় লেগেই থাকে। তারা বেশ খোলা মনে সেখানে ধূমপান করে থাকেন। যার ফলে পথচারীরা তাদের দ্বারা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। অনেকেই বিড়ি সিগারেটের ধোঁয়া থেকে বাঁচতে নাক মুখ ঢেকে সেই স্থান অতিক্রম করেন। ফুটপাথে ধূমপানকারীর উৎপাতে শিশু থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। শুধু ফুটপাথেই নয়, আমাদের দেশের বাস স্টপেজ, হাট-বাজার, খাবার হোটেল, রেঁস্তোরা, থিয়েটার, টিকেট কাউন্টার, গণপরিবহণসহ বহু জনসমাগমপূর্ণ স্থানে বেপরোয়া মানসিকতায় ধূমপান করতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষ ধূমপানের ন্যায় পরোক্ষ ধূমপানও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী পরোক্ষ ধূমপানের কারণে পৃথিবীতে বছরে ১২ লাখ মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তারা আরও জানান তামাকের ধোঁয়ায় রয়েছে সাত হাজার রাসায়নিক পদার্থ যার মধ্যে ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। ফুসফুস ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগসহ উপরোক্ত ধূমপানের কারণে সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ পরোক্ষ ধূমপান। ধূমপান বন্ধে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। যেমন: ১. ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। এক্ষেত্রে পত্র-পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেকট্রিক মিডিয়া ভূমিকা রাখতে পারে।

২. শিক্ষা ও সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় বন্ধসহ তা বিপণনে জড়িতদের নিরুৎসাহিত করতে হবে।

৩. ধর্মীয় অনুশাসন মানার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে।

৪. অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। সন্তানরা কোন কোন সঙ্গীর সাথে মিশছে তা সতর্ক দৃষ্টিতে খেয়াল করতে হবে।

পাবলিক প্লেসে ধূমপান রোধে.......

১. ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন মান্য করতে এবং ভুক্তভোগীদের আইনের আশ্রয় গ্রহণে সচেতন করতে হবে।

২. আইনের সহজ ব্যাখা এবং শাস্তির ব্যাপারে সর্বসাধারণকে অবহিত করতে হবে।

৩. আইনের প্রয়োগ ঘটাতে জনগণ ও প্রশাসনের সদিচ্ছা ও সহযোগী মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে।

আসুন সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধূমপান রোধ করি এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবন গড়ি।

সাইদুর রহমান শাহিদ, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :