রাজশাহীতে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার কর কর্মকর্তা, রামেকে ভর্তি

রাজশাহী ব্যুরো, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৩, ১৬:২৫| আপডেট : ২৯ মে ২০২৩, ১৭:০৬
অ- অ+

রাজশাহীতে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রাজশাহী আঞ্চলিক কর অফিসের স্টেনো (মুদ্রাক্ষরিক) এম সুলতার আহমেদ (৩৮)। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ১৭ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত শুক্রবার (২৬মে) বিকাল ৪টার দিকে মোহনপুর থানার মৌগাছি বিদিরপুর বসন্তকেদার এলাকায় ছোট বোন হ্যাপির বাসায় ডেকে ব্যাপক মারধর করার অভিযোগ তার নিজের বোন ও দুলাভাইদের বিরুদ্ধে।

এম সুলতান আহমেদ তিনি রাজশাহী আঞ্চলিক কর অফিসে স্টেনো (মুদ্রাক্ষরিক) পদে কর্মরত আছেন। তার বাবার নাম আব্দুস সোবহান (মৃত) তিনি রাজশাহী বেতারে চাকরি করতেন। বসবাস করেন রাজপাড়া থানাধীন ডিংগাডোবা ব্যাংক কলোনী এলাকায়।

এ ঘটনায় জড়িত সুলতান আহমদের মেজো বোন সুইটি ও তার স্বামী মামুনুর রশিদ (মামুন), সেজো বোন সুমাইয়া বেগম লাকী, ৩য় বোন হ্যাপি ও তার স্বামী নুরুনবীর বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন স্ত্রী মোছা. মুন ইয়ামুন লাবনী।

অভিযোগকারী মুন ইয়ামুন বলেন, ষড়যন্ত্র করে আমার ছোট ননদ হ্যাপির স্বামী নুরুনবী তাদের পারিবারিক অশান্তির কথা বলে ফোন দিয়ে ডাকেন সুলতানকে।

রাজশাহী নগরীর ডিংগাডোবা ব্যাংক কলোনী এলাকায় আমার বড় ননদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তাদের নামে না লিখে দেয়ায় ব্যাপক মারধর করে। একপর্যায় আমার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশে সুইটির স্বামী মামুন তার বুকের ওপর উঠে চেপে ধরে। অন্যদিকে ৩য় বোন লাকী তার ওড়না গলায় ফাঁস দিয়ে টান দেয়। এতেও ব্যার্থ হলে পানির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে তারা।

তিনি আরও বলেন, বড় ননদ সাহানাজ বেগম বিউটি তিনি ঢাকায় কাস্টমস অফিসের নির্বাহী অফিসার পদে চাকরি করতেন। ডিংগাডোবা ব্যাংক কলোনি এলাকায় চার কাঠা জমির ওপর দুই ইউনিটের একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। উক্ত বাড়িটির অধ্যেক আমার স্বামী সুলতান আহমদের নামে এবং বাকি অংশ নিজের নামে রাখেন। এছাড়া নগদ ২০ লাখ টাকা রেখে যান আমার স্বামীর কাছে। এরই মধ্যে ২০১৮ সালে ঢাকার একটি ফ্লাট বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই কাস্টমস কর্মকর্তা। রেখে যাওয়া দুই ইউনিটের ২য় তলা বাড়ি ও ২০ লাখ টাকা যেন কাল হয়ে দাড়িয়ে যায় ননদ ও নন্দুদের কাছে।

ভুক্তভোগী সুলতান আহমদের শশুর ইকবাল আহমেদ বলেন, পাঁচ বোনের একমাত্র ভাই সুলতান আহমেদ। বাবা মৃত্যুর পর বড় বোন তাকে কোলে পিঠে মানুষ করেছেন। বড় বোনের কাছে খুব আদরের ছিলেন সুলতান আহমেদ। মেজো বোন অর্থাৎ সুইটি বেগম চাকরি করেন বাংলাদেশ রেলওয়েতে। তার স্বামী মামুনুর রশিদ (মামুন) চাকরি করেন বাংলাদেশ বেতার রাজশাহীতে। সেজো বোন সুমাইয়া বেগম লাকী চাকরি করেন বাংলাদেশ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে। বর্তমানে তিনি রাজশাহী সিআইডিতে কর্মরত আছেন। এছাড়া ছোট বোন জান্নাতুল নাইম বেবি তিনি একজন এমবিবিএস ডাক্তার। বর্তমানে ঢাকায় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে জব করছেন।

তিনি আরও বলেন, ডাক্তার জান্নাতুল নাইম বেবী বাদে রাজশাহীতে যেসকল বোন ও দুলাভাই রয়েছে তারা সকলে মিলে একজোট হয়ে অপতৎপরতা চালাচ্ছে জামাইকে বাড়ি থেকে বেদখল করতে। সেজো বোন লাকী তিনি পুলিশে চাকরি করার সুবাদে ব্যাপক প্রভাব খাঠাচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় গুন্ডাবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে হামলাও করিয়েছেন জামাই সুলতানের ওপর। দিয়ে যাচ্ছেন একেরপর এক হুমকি। এবাদেও রাজপাড়া থানায় আমার জামাইসহ আমার নামেও দিয়েছেন চুরির মিথ্যা মামলা। অন্যদিকে ছোট বোন হ্যাপির শশুর বাড়ি মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের বসন্তকেদার গ্রামে। তার স্বামীর নাম নুরুনবী। তার বাসায় পূর্বপরিকল্পিত ভাবে আমার জামাইকে ডেকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে। এবাদেও আমার মেয়ের ওপরও তারা তিন বোন নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।

এ ব্যাপারে মৌগাছি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার মেজর আলী বলেন, ঘটনার দিন বিকাল ৫টার দিকে আমি একটি বিশেষ কাজে বাইরে যাচ্ছিলাম। এসময় নুরুনবীর বাসায় ব্যাপক হট্টগোলের আওয়াজ শুনতে পায়। ঘটনাস্থল গিয়ে দেখি সুলতান মাটিতে গড়াগড়ি করছে। বিষয়টি জানার চেষ্টা করলে তাদের একজন জানায় সুলতান তাদের আপন ছোট ভাই। সে একজন মানুষিক প্রতিবন্দী। সুলতানকে মাটি থেকে তুলে বিস্তারিত শুনার চেষ্টা করছিলাম এসময় সুলতানের দুলা ভাই মামুন তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। পরে তাদের মধ্যে একটি আপোষ মিমাংশা করে দিয়ে আমি চলে আসি। এছাড়া আমি তারাহুরার মধ্যে ছিলাম।

এদিকে সিআইডির সাব-ইন্সপেক্টর সুমাইয়া বেগম লাকী বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আমার ভাই সুলতান একজন মানুষিক প্রতিবন্দী, আবার বলেন আমার আম্মাকে দেখভাল করেনা। এবাদেও সুলতান একজন চোর বলে জানান প্রতিবেদককে। তিনি বলেন সুলতানের বিরুদ্ধে রাজপাড়া থানায় তার আম্মা একটি চুরির মামলাও করেছেন। এছাড়া সুমাইয়া বেগম লাকী বলেন, এটি আমাদের পারিবারিক ব্যাপার, বিষয়টি আমারা দেখবো।

এ বিষয়ে মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম বাদশা বলেন, তারা উভয় পাল্টা পাল্টি অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, উভয়পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেছে থানায়। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯মে/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা