সড়কে অবস্থান প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের, পুলিশের বাধা

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মা‌সিক ভাতা ৮৫০ টাকা থে‌কে বা‌ড়ি‌য়ে পাঁচ হাজার টাকা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভাতা দুই হাজার টাকা করার দাবিতে রাজপথে নেমেছে সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ। তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রায় পুলিশের বাধার মুখে সড়কে বসে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে শাহবাগমুখী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আন্দোলনকারীদের ভাষ্য মতে, প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবি না মানলে সড়ক থেকে উঠবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে তাদেরকে রুখতে সজাগ দৃষ্টিতে অবস্থান করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে রবিবার সকাল থেকে শুরু হয় আন্দোলনকারীদের অবস্থান কর্মসূচি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখান থেকে কর্মসূচি শেষে যাত্রা শুরু করলে তাদেরকে শাহবাগেই আটকে দেয় পুলিশ। পরে একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কা ধাক্কির ঘটনাও ঘটে। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহীনির সদস্যরা তাদের সড়ক আটকে দিলে তারা সড়কে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহীনির সদস্যরা বার বার তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ।

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, আমাদের ১১ দফা দাবি পূরণ না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি পালন করবো। প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ আমাদের দাবি না মেনে নেবে ততক্ষণ আমরা সড়কে অবস্থান করবো।

এর আগে অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা বলেন, ১ জুন অর্থমন্ত্রী আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন, ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল আকারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র এক লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কোনো ভাতার পরিমান বৃদ্ধি করা হয়নি।

তারা বলেন, বর্তমানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা মাসিক ৮৫০ টাকা, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই বাজারে যা খুবই অপ্রতুল। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় খুবই কম। সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ প্রতিবন্ধী মানুষসহ সমাজের সব পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নে কোনো উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ না থাকায় এবং তাদের চাওয়ার প্রতিফলন না ঘটায় এই বাজেট ক্ষোভের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছে।

১১ দফা দাবি:

১৷২০২৩-২৪ জাতীয় বাজেটেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা মাসিক ন্যূনতম মাসিক ৫০০০ টাকা এবং শিক্ষা উপবৃত্তি

মাসিক ২০০০ টাকা চাই। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ভাতা ও উপবৃত্তি উভয়ই বরাদ্দ কর।

২।প্রতিবন্ধী মানুষের সরকারি চাকরিতে নিয়োগে বিশেষ নীতিমালা (কোটা) প্রণয়ন কর।

৩। চলতি বাজেটেই বাংলাদেশ ব্যাংকে ১০০০ কোটি টাকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উদ্যোক্তা তহবিল গঠন কর।

৪। অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতরকে কার্যকর কর।

৫।বাংলা ইশারা ভাষা ইন্সটিটিউট প্রণয়ন এবং বিদ্যালয়, আদালতসহ সকল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে

বাংলা ইশারা ভাষার দোভাষী সেবা নিশ্চিত কর।

৬। শিক্ষা ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অভিন্ন জাতীয় শ্রুতিলেখক নীতিমালা চাই।

৭। নিরন্ন, শ্রমজীবী- মেহনতি প্রতিবন্ধী মানুষদের ১টি বাড়ি ১টি খামার ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল কর।

৮। গুরুতর প্রতিবন্ধী মানুষের স্বাস্থ্য ও কেয়ারগিভার ভাতা চালু কর।

৯। প্রবেশগম্য অবকাঠামো এবং গণপরিবহন নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ কর।

১০।ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয় সংসদ, স্থানীয় থেকে জাতীয়, সকল পর্যায়ে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতিনিধিত্ব

নিশ্চিত কর।

১১। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট চাই।

অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, পিএনএসপি, এনজিডিও, কৃষ্টি, বি-স্ক্যান, জাতীয় বধির সংস্থা, জাতীয় অন্ধ সংস্থা, এসডিএসএল, ডিডিপি-বাড্ডা, ইউবিপিইউএস-উত্তর বাড্ডা, জাগরন প্রতিবন্ধী কল্যান সংস্থা- জেপিইউএস-বনানী, পিএমকেমএস-মিরপুর, এসপিইউএস-সাঁতারকুল, ঢাকা-ডিপিওডি, ডিসিএফ, কেপিইউএস-রাজশাহী, কেপিকেএস-কুড়িগ্রাম, আরপিইউপি-রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম বধির সংস্থা, চট্টগ্রাম বধির উন্নয়ন সংঘ, স্পন্দন (নরসিংদী), সেবা-নরসিংদী, এসএনইউএস-সাতক্ষীরা কেএমপিইউএস-খুলনা ।

(ঢাকাটাইমস/০৪জুন/কেআর/কেএম)