শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমে যেসব গাছ ঘরে রাখলে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ জুন ২০২৩, ১৫:০৫ | প্রকাশিত : ০৫ জুন ২০২৩, ১৪:৩৮

যান্ত্রিক শহরে ইট-পাথরে গাঁথা বাড়ির প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে গাছ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। গাছ আমাদের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং জীবন বাঁচাতে সহায়তা করে। গাছ থেকে যে পরিমাণ অক্সিজেন আমরা গ্রহণ করি ঠিক সেই পরিমাণ মানুষের শরীর থেকে বের হওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নেয় গাছ। শুধুমাত্র বেশি বেশি গাছের ব্যবহারই নিশ্চিত করতে পারে বিশুদ্ধ বাতাসের আনাগোনা। গাছ কেটে সাফ করে ‘সভ্যতার’ বিকাশ যেভাবে হচ্ছে, তাতে আর কতদিন এই সভ্যতা টিকে থাকবে? গাছের অভাবে শহরের ঘরগুলোতে বেশিরভাগই দমবন্ধ পরিবেশ থাকে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অন্যতম যে অক্সিজেন গাছ তা সরবরাহ করে। গাছ কেবল নান্দনিকতাই বাড়ায় না, জীবন্ত করে তোলে গৃহকোণ। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে গাছ অনবদ্য।

ঘরের ভেতরের গাছ দিনের আলোয় কার্বন-ডাই-আক্সইডকে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনে পরিণত করে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো গাছ বেনজিন, ফর্মালডিহাইডের মতো দূষিত পদার্থকেও বাতাস থেকে টেনে নেয়। মানুষের অক্সিজেনের চাহিদা তুঙ্গে। অ্যাজমা, সাইনাস, ব্রঙ্কাইটিস থেকে শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। তবে এই পরিস্থিতিতে টাটকা প্রাকৃতিক অক্সিজেনের উপর ভরসা তো রাখতেই পারেন। সতেজ বাতাসে শ্বাস নিতে ঘরে রাখুন অক্সিজেন সমৃদ্ধ গাছ।

গবেষণায় দেখা গেছে, এমন কিছু গাছ রয়েছে, যা ঘরে রাখলে শুধুমাত্র অক্সিজেনই পাবেন না, সঙ্গে ঘরের মধ্যে থাকা দূষিত বাতাসও পরিষ্কার করার কাজ করবে এগুলো। দেখে নিন কোন কোন গাছ রাখবেন।

মানি প্লান্ট

ঘর সাজানোর গাছ হিসেবে মানি প্ল্যান্ট দারুণ জনপ্রিয়। সুদৃশ্য একগুচ্ছ পাতা নিয়ে এ গাছ গৃহশোভা বাড়ায়। বহু বাড়িতেই এই গাছ থাকে। একে বাঁচানোর জন্যও বিশেষ পরিশ্রম করতে হয় না। এমনকি মাটিও লাগে না এই গাছ বাঁচাতে। শুধু পানিতে রেখে দিলেও বেঁচে থাকে। অনেকে অ্যাকোয়ারিয়ামের ওপর মানি প্ল্যান্ট গাছ রেখে পানির মধ্যে এর শিকড় বাড়তে দেন। শিকড়গুলো নাইট্রেট লবণ শোষণ করে অ্যাকোয়ারিয়ামের পানি শোধন করে। এ গাছ বাতাস থেকে অনেক বিষাক্ত যৌগ ফরম্যালডিহাইড, বেনজিন, জাইলিন, টলুইন, ট্রাইক্লোরোইথেন দূর করে।

অ্যালোভেরা

বাংলা যাকে বলে ঘৃতকুমারি। ঘরের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে এর জুড়ি নেই। ঘরের মধ্যে থাকা কার্বন মনো-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, ফর্মালডিহাইডের (টক্সিন) মতো ক্ষতিকারক জিনিস শোষণ করে নেয়। মাত্র এখটি গাছই ৯টি বায়োলজিকাল এয়ার পিউরিফায়ার ক্যানের মতো বাতাস পরিষ্কার করার কাজ করতে পারে।

অ্যান্থুরিয়াম (ফ্ল্যামিংগো লিলি)

এটিও স্প্যাথিফাইলাম গোত্রের গাছ। কিন্তু এর ফুলের রং আলদা। অন্দরসজ্জা এবং বাতাস পরিশুদ্ধ করা— দু’টিই করতে পারে এই গাছ।

ফিকাস

খুব ভালো বাতাস পরিষ্কার করতে পারে। বিশেষত, বাতাসের টক্সিন শুষে নেয় এবং টাটকা বাতাসের জোগান দিতে থাকে। খুব একটা আলো বা জলের প্রয়োজন হয় না। তবে এখটি ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। ঘরে যদি ছোট বাচ্চা বা পোষ্য থাকে, তাদের থেকে গাছটিকে দূরে রাখবেন। কারণ এ গাছের পাতা শরীরে বিষক্রিয়া করতে পারে।

পার্লার পাম

বহু ধরনের পাম গাছ হয়। তার মধ্যে পার্লার পাম প্রজাতিটি ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ করতে সবচেয়ে কাজের। লেডি পাম এবং বাম্বু পামও এর কাছাকাছি।

রাবার গাছ

এটিও অত্যন্ত পরিচিত গাছ। অনেকের বাড়িতেই থাকে। এই গাছ বাতাস পরিশুদ্ধ করতে পারে। ফর্মালডিহাইড জাতীয় দূষিত পদার্থ টেনে নিতে এর জুড়ি নেই।

আইভি লতা

নাসার এর গবেষকদের মতে এই গাছ মাত্র ৬ ঘণ্টার মধ্যে ঘরের বাতাসের প্রায় ৬০ শতাংশ টক্সিন এবং ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত দুর্গন্ধ শুষে নিতে পারে। বাড়ির দেওয়ালে অনেকে এই গাছ লাগান। কিন্তু গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ঘরের ভিতরে রাখাই ভাল। তাতে বাতাসও পরিশুদ্ধ হয়।

স্পাইডার প্লান্ট

এই গাছটির বিশেষত্ব হল খুব কম আলোতেও এরা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে। ফলে অক্সিজেনের জোগান অব্যাহত রাখে। স্টাইরিন, গ্যাসোলিন জাতীয় টক্সিন বাতাস থেকে শুষে নিতে সক্ষম। একটা গাছ প্রায় ২০০ বর্গ মিটার এলাকার বাতাস পরিশুদ্ধ করে তুলতে পারে। এই গাছ ঘরের ভিতরে বাঁচানো খুব সহজ। ফর্মালডিহাইড এবং জাইলেনের মতো দূষিত পদার্থ বাতাস থেকে টেনে নেয় এই গাছ। শিশু এবং পোষ্যরাও নিরাপদ এই গাছ থেকে।

পিস লিলি

বাতাসে উপস্থিত রাসায়নিক এবং টক্সিন নিমেষের মধ্যে শুষে নেয়। বিশেষত ট্রাইক্লোরোথাইলিন এবং ফর্মালডিহাইড জাতীয় টক্সিন শুষে বাতাস পরিষ্কার করে দেয়। তবে এর পাতা শিশু এবং পোষ্যদের শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।

স্নেক প্ল্যান্ট

এ গাছ সহজে মরে না। বিশেষ আলো বা জলেরও প্রয়োজন হয়। টক্সিন পরিষ্কার বা অক্সিজেন সরবরাহ তো করেই। তার সঙ্গে সব থেকে ভালো ব্যাপার, রাতেও এরা অক্সিজেন ঘরের মধ্যে ছাড়তে থাকে। বেডরুমে রাখার জন্য সব থেকে আদর্শ গাছ এটা।

ঘরের ভিতরে গাছের যত্ন যেভাবে নিবেন

ঘরে আছে বলে নিয়মিত পানি দেবেন না, তা কিন্তু নয়। রোজ অল্প অল্প করে পানি দিন। তবে নজর রাখবেন পাত্রে যেন পানি জমে না থাকে।

গাছ কখনোই অল্প আলো বা কড়া রোদে রাখবেন না।

গাছ এমন জায়গায় রাখুন সব সময় পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়।

কখনোই এসির নিচে রাখবেন না গাছ। চেষ্টা করুন গাছ রাখার জায়গাটা এসির থেকে দূরেই রাখুন। এতে গাছ ঠিকঠাক বৃদ্ধি পাবে।

পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মাঝে মধ্যে গাছের পাতা পরিষ্কার করুন। কিংবা কাঁচা দুধ তুলাতে ভিজিয়ে গাছের পাতা মুছে দিন। এই উপায়ে তরতাজা থাকবে গাছ।

লক্ষ্য রাখুন গাছের টবে যেন পোকামাকড় না আসে। কাঁচা দুধের মধ্য়ে কিছুটা হলুদ মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিয়ে দিন, এতে পোকামাকড় হবে না।

(ঢাকাটাইমস/০৫ জুন /আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :