চিনির বাজারে কারসাজি

১২৫ টাকার চিনি প্যাকেট খুলে ১৬০ টাকায় বিক্রি

পুলক রাজ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৯ জুন ২০২৩, ২১:১৩ | প্রকাশিত : ১৯ জুন ২০২৩, ১৯:৩৮

সরকার থেকে চিনির দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাত্রাতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম এমনিতেই বেশি। এর মধ্যে চিনি নিয়ে সিন্ডিকেট দিন দিন বেড়েই চলছে। প্যাকেটের গায়ে লেখা ১২৫ টাকা দামের এক কেজি চিনি প্যাকেট খুলে বিক্রি করা হচ্ছে ১৬০ টাকায়। কারণ, প্যাকেটে লেখা দামের চেয়ে বেশি দেবেন না ক্রেতারা, এমন ভাষ্য খুচরা বিক্রেতাদের। এই কারসাজি নিত্যাদিনের ঘটনা হলেও যেন দেখার কেউ নেই।

নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বাজারে চিনির দাম কেজিতে ২৫ টাকা বাড়ানোর কথা জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন মিল মালিকরা। সোমবার সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাণিজ্য সচিব বরাবর ওই চিঠি পাঠানো হয়। আগামী ২২ জুন এই দাম কার্যকর করতে চান তারা।

চলতি বছরের মে মাসের ১১ তারিখে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম কেজিতে ১৬ টাকা বাড়ায় সরকার। কথা ছিল প্রতিকেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ১২০ টাকা, আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকায় বিক্রি হবে। তবে বাজারে মনগড়া চিনি বিক্রি করছে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে কারওয়ান বাজার, মগবাজারসহ রাজধানীর বেশ কিছু খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফ্রেস কোম্পানির প্যাকেটজাত চিনির মূল্য লেখা ১২৫ টাকা কেজি, সেই চিনি পাইকারি ১৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা দোকানিদের কাছে। আর খুচরা দোকানিরা প্যাকেট খুলে খোলা বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়।

এছাড়া বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কোম্পানির আখের চিনির প্যাকেটে মূল্য না থাকায় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি প্যাকেটজাত চিনির মূল্য নেই প্যাকেটে। ফলে মনগড়া ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বরিশালের খোলা চিনি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, দেশি খোলা চিনি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া পাইকারি ফ্রেস কোম্পানির ২০ কেজির বস্তা ২৬৮০ টাকা, ইগলু কোম্পানির খোলা চিনির ৫০ কেজির বস্তা মূল্য ৬২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কাওরান বাজার এলাকার কিচেন মার্কেটের দোতলায় সোনালী ট্রেডার্সের মালিক আবুল কাশেম ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। কোম্পানি আমাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে। ফলে আমরাও বেশি দামে পাইকারি বিক্রি করি খুচরা দোকানিদের কাছে।

বাজারে প্যাকেটজাত চিনি না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আবুল কাশেম বলেন, খুচরা বিক্রেতারা ১৩৪ টাকা করে পাইকারি কিনে নেন প্যাকেটজাত চিনি। তারা প্যাকেট বিক্রি করতে পারেন না কারণ একটাই প্যাকেটের গায়ের মূল্য ১২৫ টাকা কেজি। ফলে তারা প্যাকেট কিনে নেয় ঠিকি কিন্তু নেওয়ার পর প্যাকেট খোলে খোলা দামেই বিক্রি করে।

কাওরান বাজার এলাকার বাহার জেনারেল স্টোরের মালিক ফারুক হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, কোম্পানি ও খুচরা দোকানিদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঝগড়া করতে হচ্ছে আমাদের। আমরা পাইকারি যারা বিক্রি করি দুই কুলের মধ্যে আছি।

ফারুক হোসেন বলেন, চিনি কিনতে গেলেই ঝগড়া করতে হয় কোম্পানির সঙ্গে। কোম্পানির গায়ের মূল্য এক, আর বিক্রি করে আরেক দামে। আমাদেরও বাধ্য হয়ে বেশি দামে কেনাবেচা করতে হচ্ছে।

মগবাজার এলাকার মুদি দোকানি জামাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, আামরা চিনি নিয়ে মহাবিপদে আছি। আমাদের কিছু করার নেই। গায়ের মূল্য ১২৫ টাকা আর পাইকারিতে কিনতে হচ্ছে ১৩৪ টাকায়। এখন প্যাকেট যদি না খুলে বিক্রি করি ক্রেতারা আমাদেরকে মারবে।

মগবাজার এলাকার মুদি দোকানি শাহ্ আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, যারা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আগে আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা ছোট ব্যবসায়ী আমাদের কোনো দোষ নেই।

মৌচাক এলাকার চিনি ক্রেতা মো. স্বপন ঢাকা টাইমসকে বলেন, চিনি কিনতে বাজারে গেলে মাথা নষ্ট। একেক দোকানে একেক মূল্য। ১৪০ টাকা থেকে শুরু করে ১৭০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে একি এলাকায়। আর খোলা চিনি ছাড়া তো পাওয়াই যায় না। প্যাকেটজাত চিনি তো সোনার হরিণ হয়ে গেছে।

কাওরান বাজার এলাকার চিনি ক্রেতা আব্দুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, সরকার চিনির দাম কমায়, বাড়ায় আর ব্যবসায়ীরা মনগড়া বেচাকেনা করে। আর আমরা জনগণ চিড়েচ্যাপ্টা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের অভিযান চলছে। সরকারের দেওয়া নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি করলে জরিমানাসহ কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের।

(ঢাকাটাইমস/১৯জুন/পিআর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :