ভোলাহাটের নারী ইউএনওকে গামছা পরিয়ে বিদায় করার হুঁশিয়ারি উপজেলা চেয়ারম্যানের

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে তাবাসসুমকে আগামী ঈদের পর গামছা পরিয়ে বিদায় করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রাব্বুল হোসেন।

সোমবার ভোলাহাট মেডিকেল মোড়ে বিকাল ৫টার দিকে উপজেলা যুবলীগের শান্তি সমাবেশে তিনি এ বক্তব্য দেন। ২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে পুরো সময়জুড়ে ইউএনওর বিষোদগার করেন তিনি। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

এতে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রাব্বুল হোসেন বলেন, আমাকে বরখাস্ত করার জন্য উৎপাত চলছে। আমার কর্মচারী গাড়িচালকের ওভারটাইম বেতন দেওয়া হচ্ছে না। শুধু জামায়াত-বিএনপি নয়, প্রশাসনে বসে শেখ হাসিনার নামে যারা ষড়যন্ত্র করছে বর্তমান ইউএনও তার সঙ্গে যুক্ত।

ইউএনওকে হুঁশিয়ারি করে তিনি বলেন, আগামী ঈদের পর ইউএনও উম্মে তাবাসসুমকে গামছা পরিয়ে এখান (ভোলাহাট) থেকে বিদায় করা হবে। এখানে দাঁতভাঙা জবাব কেউ দেখেনি, সবাই চুপচাপ আছেন। ইনশাআল্লাহ ঈদের পর সেই রূপ দেখতে পাবেন। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানকে সরানোর পাঁয়তারা করছো। ঈদের পরে তোমার চৌদ্দগোষ্ঠীর দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা এই ইউএনওকে কন্ট্রোল করুন, নয় তো বিদায় করুন। ঈদের পরে জামায়াত-বিএনপির আন্দোলন তীব্রতর হলে এবং এই ইউএনও ভোলাহাটের মাটিতে থাকলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অর্ধেক নেতাকর্মীকে কারাগারে থাকতে হবে।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সামনে ২৫ তারিখের মধ্যে কনো স্টেপ (পদক্ষেপ) না নেওয়া হলে যতগুলো প্রকল্পের কাজ চলছে আমি কোনো প্রকল্পে স্বাক্ষর করবো না।

এদিকে সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম বাবু। তিনি মুঠোফোনে বলেন, চেয়ারম্যান ইউএনওকে হুমকি দেবে বিষয়টি কারও জানা ছিল না। প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া ঠিক হয়নি। এ নিয়ে আমরাও বিব্রত।

এ বিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে তাবাসসুমের বক্তব্য জানতে তাকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যানের বক্তব্য দেওয়ার ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ মুঠোফোনে বলেন, একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রকাশ্যে নারী ইউএনওকে হুমকি দেওয়া দল সমর্থন করে না। আমরা এমন ঘটনায় বিব্রত। ভাষা সংযত করে কথা বলতে পারতো। আর যদি ইউএনওর দোষত্রুটি থাকে তাহলে জেলা আওয়ামী লীগসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানাতে পারতো।

সেই সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন শাহ, উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গরিবুল্লাহ দবিরসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা।

আরও পড়ুন: মধুমতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

একজন নারী নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্য এখন ভোলাহাটে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২০জুন/এসএম)