খুলনায় পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর করল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা, সম্পাদককে হত্যাচেষ্টা

খুলনা ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ জুন ২০২৩, ২৩:১৪

জামালপুরে সাংবাদিক নাদিম হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে খুলনায় দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকার সম্পাদক ও নগর আওয়াম লীগের দপ্তর সম্পাদক মুন্সী মাহাবুব আলম সোহাগকে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় তার নিজস্ব পত্রিকা দেশ সংযোগ অফিসে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। হামলার সময় তাদের কয়েকজনের মাথায় হেলমেট পরা ছিল।

হামলার সময় পত্রিকার সম্পাদক মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ অফিসে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে সিসি টিভি ফুটেজে যে মারমুখি আচরণ ছিল সন্ত্রাসীদের তা দেখে সকল সাংবাদিকদের মনে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুর একটার দিকে নগরীর বেনীবাবু রোড ফুল মার্কেট এলাকায় অবস্থিত দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকা অফিসে এ হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

গত কয়েক মাস ধরে মহানগরীতে জুয়া, মাদক ও হোটেলুগলোতে দেহ ব্যবসা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জের ধরে জুয়াড়ী ও মাদক কারবারিরা এবং এদের সুবিধাভোগী কিছু কথিত সাংবাদিকের পরিকল্পনায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পত্রিকার কর্তৃপক্ষ। হামলার খবর পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তা, প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা ও পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার প্রতিদিনের মতো নগরীর ফুল মার্কেটে অবস্থিত দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকার কাজ চলছিল। দুপুরের নামাজের সময় চারটি মোটরসাইকেলে এসে ৬-৭ জন সন্ত্রাসী চাপাতি, রামদাসহ দেীশয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পত্রিকা অফিসে ঢুকে পড়ে। এ সময় পত্রিকার সম্পাদক মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ নামাজ পড়ছিলেন। সন্ত্রাসীরা পত্রিকা অফিসে এসে গালিগালাজ ও হুমকি-ধামকি দিয়ে কুপিয়ে সম্পাদকের ঘরের জানালা ভেঙে ফেলে। তখন সন্ত্রাসীরা সম্পাদক মাহবুব আলম সোহাগকে হত্যারও চেষ্টা চালায়। এ সময় পত্রিকা অফিসের অন্যরা বাইরে আসার চেষ্টা করলে তাদেরকে চাপাতি নিয়ে ধাওয়া করে সন্ত্রাসীরা। পরে পত্রিকা অফিসের পাশে কাকন প্রিন্টিং প্রেসের দরজার গ্লাস ভাংচুর করে হুমকি-ধামকি দিয়ে দ্রুত চলে যায়।

দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকার ম্যানেজার মো. শামীমুর আলম মান্দার বলেন, পত্রিকা অফিসে তারা কাজ করছিলেন। দুপুর একটার দিকে কয়েক লোক চাপাতি ও লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে অফিসের কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ সবকিছু কুপিয়ে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে তারা সম্পাদকের অফিসের জানালা কুপিয়ে ভেঙে ফেলে। এ সময় নানা রকম হুমকি-ধামকি দিয়ে সম্পাদককে হত্যার চেষ্টা চালায়। তখন অফিসের লোকজন বাইরে আসার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাদেরকেও অস্ত্র হাতে ধাওয়া করলে ভয়ে অফিসের স্টাফরা রুমের মধ্যে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। তখন সন্ত্রাসীরা পাশের একটি প্রেসের গ্লাস ভাংচুর করে চলে যায়।

দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকার সম্পাদক ও খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং খুলনা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ বলেন, তার পত্রিকার অফিসের পাশেই জামায়াত শিবির ও বিএনপিপন্থী কথিত কিছু সাংবাদিক প্রেসক্লাব খুলনার নাম দিয়ে সেখানে দিনরাত জুয়া ও মাদকের আসর বসায়। দীর্ঘদিন ধরে ওই বাড়ির মালিকের পৃষ্ঠপোষকতায় নগরীর শীর্ষ জুয়াড়ির নেতৃত্বে এ জুয়া ও মাদকের আসর চলছে। এর সঙ্গে সুবিধাভোগী স্থানীয় কথিত সাংবাদিক প্রেসক্লাব খুলনার এক কর্মকর্তা, সরকারের অনুমোদনবিহীন অবৈধ অনলাইন পোর্টালের কথিত সাংবাদিকসহ ৭-৮ জনের একটি গ্রুপ এবং কিছু অসাধু পুলিশের সহযোগীতায় এ জুয়া ও মাদকের আসর পরিচালিত হয়।

এ বিষয়ে গত ১৩ এপ্রিল থেকে দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকায় ‘জুয়ার নগরী খুলনা’সহ ধারাবাহিক কয়েকটি খবর প্রকাশিত হয়। এতে পুলিশ জুয়া ও মাদক ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি আবারও এই চক্রের সহায়তায় বেশ কয়েক স্থানে জুয়া ও মদের আসার চালু করা হয়েছে। এ সংবাদের সূত্র ধরে জুয়াড়ী ও মাদক ব্যবসায়ীরা এবং সুবিধাভোগী কথিত সাংবাদিকরা দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকা ও আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। বিভিন্ন সময় পত্রিকার সম্পাদকের বিুরদ্ধে কুৎসা রটনা ও হুমকি দিতে থাকে। এ ঘটনায় তিনি খুলনা সদর থানায় সাধারন ডায়েরি করেন। সে কারনে জুয়াড়ী, মাদক ব্যবসায়ী ও দেহ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্তরা এবং কথিত সাংবাদিকরা পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্যই এ হামলা চালিয়েছে। হয়তো সামনে পেলেই মেরে ফেলতো। এ ঘটনায় তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। তিনি হামলাকারীদের দ্রæত গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবী জানান।

খুলনা সদর থানার ওসি মো. হাসান আল মামুন জানান, দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকা অফিসে হামলর ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আপাতত দৃষ্টিতে কোন বিসয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দুবৃর্ত্তরা এ হামলা চালিয়েছে। তাকে হুমকির ঘটনায় তিনি জিডিও করেছেন। সেটির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ মাঝে মধ্যেই অপরাধের বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করে। এখানে প্রেসক্লাব খুলনার নামে কিছু লোক জুয়ার আসর বসায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে বেশ কয়েকজনকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তারপরও কিছূ লোক আবারও জুয়ার আসর চালাচ্ছে। তাদের বিুরদ্ধেও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আইনের আওতায় আনা হবে। হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতেই জড়িতদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২০জুন/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :