সংগ্রামী মা সন্তানদের কষ্ট করে বুকে আগলে উচ্চ শিক্ষিত করেছেন

মোজাম্মেল হক
| আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:২১ | প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৩৪

একটি বৃদ্ধাশ্রমে কিছুদিন আগে একজন মায়ের সঙ্গে কথা হলো। তিনি প্রায় ১৫ বছর যাবত বিধবা। তাঁর ৫ সন্তান উচ্চ শিক্ষিত এবং সকলেই পরিবারসহ ইউরোপ, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। মা সন্তানদের সম্মান ক্ষুন্ন করে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে চান না। ছেলেরা মায়ের ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্য যাবতীয় খরচের টাকা-পায়সা নিয়মিত প্রবাস থেকে পাঠান এমনকি মাঝে মধ্যে ভিডিও কলে কথা বলেন।

কিন্তু মা তাঁর সন্তান ও নাতিপুতিদের সাহচর্য চান। হায়রে মা ৫ সন্তানদের কত কষ্ট করে গর্ভে বড় করেছেন, প্রচণ্ড প্রসব বেদনা সহ্য করেছেন, কষ্ট করে বড় করেছেন, লেখাপড়া শিখিয়েছেন। একসময় সন্তানরা মায়ের সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমাবে বলে জিদ ধরতো। বাবা মায়ের কষ্ট হলেও অনেক সময় খাটে আড়াআড়িভাবে ৫ সন্তানকে নিয়ে মা বাবা ঘুমাতেন। সন্তানদের বাবা বড় অসময়ে চলে গেছে। সংগ্রামী মা সন্তানদের অতি কষ্ট করে বুকে আগলে রেখে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করেছেন।

আশা ছিল মা সারাজীবন সন্তানদের মাঝে থাকবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজ মায়ের বার্ধক্যকালে সন্তানদের কেউই পাশে নেই। ইচ্ছে করলে একজন সন্তান মাকে প্রবাসে নিজের কাছে রাখতে পারতেন। মা সন্তানদের কাছে যেতেও চান। কিন্তু সন্তানদের কেউই মাকে কাছে রাখার দায়িত্ব নেননি। অথচ মা ৫ জন সন্তানেরই দায়িত্ব নিয়ে তাদের উচ্চ শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। শুনেছি তথাকথিত উন্নত দেশে মা-বাবা বৃদ্ধ হলে তাদের জায়গা হয় বৃদ্ধ নিবাস। সেখানে সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বৃদ্ধ নিবাস গড়ে তুলেছেন।

আমাদের দেশেও প্রয়োজনের তাগিদে বেশ কিছু মানবিক বৃদ্ধ নিবাস গড়ে উঠেছে। তবে আমাদের দেশে জন্মগ্রহণকারী উচ্চ শিক্ষিত সন্তানদের এই ধরনের মায়া-মমতাহীন নির্দয়তা কতটুকু মানবিক বা গ্রহণযোগ্য তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। বিষয়টি বিস্তারিত জেনে আমি খুবই মর্মাহত এবং কষ্ট পেয়েছি। তার কোনো টাকা-পয়সার অভাব নেই। তিনি শুধু সন্তানদের সঙ্গে জীবনের বাকি কটা দিন কাটাতে চান। অসহায় বৃদ্ধ মায়ের অনুরোধে তিনিসহ বৃদ্ধনিবাস ও সন্তানদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র সন্তানদের মানবিকতা এবং পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্বশীলতা বাড়াতে ঘটনাটি উল্লেখ করলাম।

লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :