চলনবিলে দ্রুত কমছে বন্যার পানি
দেশি মাছের শুঁটকি উৎপাদন ব্যাহতের আশঙ্কা
দেশি মাছের নানা ধরনের শুঁটকি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত চলনবিল। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শেষে চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে ওঠা কয়েক শতাধিক চাতালে হরেক রকম দেশি মাছ শুঁটকি করা হয়। সেই শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়েও বহির্বিশ্বে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করা হয়।
তবে এবার সেই শুঁটকি উৎপাদনের ছন্দ পতন ঘটেছে। দ্রুত চলনবিলের বন্যার পানি কমার কারণে দেশের বৃহত্তম বিলে দেশি মাছ তেমন একটা ধরা পড়ছে না। মাছের অভাবে ফাঁকা পড়ে আছে বেশিরভাগ শুঁটকি চাতাল। ফলে শুঁটকি উৎপাদন ব্যাহতের আশঙ্কা করছেন চাতাল মালিক শ্রমিকরা। দেশের মৎস্য ভান্ডার চলনবিল অঞ্চলে জলাভূমি থেকে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই মাছ আহরণ করে। সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের এই তিন জেলা জুড়ে বিস্তৃত মিঠাপানির বড় উৎস এই চলনবিল। শুকনো মৌসুমে বিলে একদিকে যেমন রেকর্ড পরিমাণ শস্য উৎপাদন হয় তেমনি মাছেরও বড় যোগান আসে এখান থেকেই। বর্ষায় এখানকার হরেক প্রজাতির দেশি মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এলাকার ভিন্ন এক কর্মব্যস্ততা চলে। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে কর্মতৎপর হয়ে ওঠে এখানকার শুঁটকি পল্লীর চাতালগুলো। তিন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বর্ষা মৌসুমে দেশি মাছের শুঁটকি তৈরির জন্য গড়ে ওঠে ৫ শতাধিক চাতাল। দেশের বিভিন্ন স্থানের মহাজনরা এখানে বিল ও সড়কের পাশে শুঁটকির চাতাল দেন। দিনভর চলনবিল থেকে আহরিত মাছ কিনে এসব চাতালেই শুঁটকি করা হয়। মিঠা পানির দেশি প্রজাতির মাছ এখানে রোদে শুকিয়ে প্রাকৃতিকভাবে শুঁটকি করার কারণে এর সুনাম দেশ ছেড়ে বিদেশেও। সৈয়দপুর, নিলফামারী, রাজধানীসহ ১০/১২ টি পাইকারি আড়তে বিক্রি হয় এসব শুঁটকি মাছ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত চলনবিলের মাছের শুঁটকি ভারত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। এ থেকে শতকোটি আয় হয়।
দুপুরে সরজমিনে চলনবিলের তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে শুঁটকি তৈরির চাতাল। সেখানে নারী পুরুষ শ্রমিকরা শুঁটকি তৈরি ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত। পাশেই মহিষলুটি বিশাল মাছের আড়ৎ। পুরো বিলের মৎস্য শিকারীরা দিনভর মাছ ধরে এনে আড়তসহ শুঁটকি চাতালে বিক্রি করেন। চাতাল মালিকরা বিভিন্ন হাটবাজার থেকেও মাছ কিনে এখানে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন।
এসব চাতালে টাকি, টেংরা, পুটি, কৈ, শিং, মাগুর, রূপচাঁদা,শোল, বোয়াল, খলসা, ডানকোনা, রয়না, বেলে, সরপুটি, ছোট চিংড়ি, বাইম, চাপিলা, চেলাপুটি ও চাঁদা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করা হয়।
চলনবিলের তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি এলাকার বাসিন্দা কৃষক আবু সুফিয়ান জানান, এবার তেমন বন্যা হয়নি। ধাপে বন্যার পানির আসা যাওয়ার কারণে মাছের বংশ বৃদ্ধিতে বিঘ্ন ঘটেছে। এখন দ্রুত বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে। এতে বিলে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
মহিষলুটি চাতালে মাছ বিক্রি করতে আসা রুহুল আমিন জানান,চাতালে অটোভর্তি পুঁটি মাছ বিক্রি করতে আসছি। কিন্তু তেমন দাম বলছে না। ৩ টাকা কেজি হিসাবে চাতাল মালিক দাম বলছেন। এতে আমার আড়তে আনার অটো ভাড়াই উঠবে না। একই কথা জানালের আরেক মৎস্যজীবী আলম মিয়া। তাড়াশের মহিষলুটি শুটকি আড়তের আড়ৎদার নান্নু হোসেন,জাহিদুল ইসলাম,আলম মিয়া জানান, গত বছর ৭০ টন শুঁটকি করেছিলাম।
কিন্তু এবার পানি নেমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী শুঁটকি করা নিয়ে চিন্তায় আছি। কিছু ছোট মাছ পাচ্ছি। তবে গরম বেশি হওয়ার কারণে শুঁটকি সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহিনুল আলম জানান, চলনবিলের দেশি মাছের শুঁটকির চাহিদা দেশ ছাপিয়ে বিদেশেও। গতবার এ জেলায় প্রায় ৩শ’ টন শুঁটকি হয়েছিলো। এবার বন্যার পানি দ্রুত নেমে গেলেও আমরা আশা করছি ভাল শুঁটকি উৎপাদন হবে।
(ঢাকাটাইমস/২৩ সেপ্টেম্বর/ইএইচ)