দেওয়ানগঞ্জ মডেল মসজিদের কাজ ৪ বছরেও শেষ হয়নি

জামালপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:৫৬ | প্রকাশিত : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৫২
মসজিদের অপূর্ণ কাজ।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ না করেই তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি কাজ।

নির্মাণকাজের ৩০ শতাংশ বাকি রেখে প্রায় দেড় মাস আগে উদ্বোধন করায় নানান প্রশ্ন এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মনে। এক বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় সাড়ে চার বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি সাব-ঠিকাদার জামালপুর-৫ (সদর) আসনের এমপি মোজাফফর হোসেন। মোহাম্মদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি লাইসেন্সে কাজটি করছেন জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেন। আর ওই এমপির স্থানীয় প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান কাজটির তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গত ৩০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে পঞ্চম পর্যায়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মোবারক হোসেন, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.সোলাইমান হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন্নাহার শেফা, দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল চন্দ্র ধর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান আকন্দ, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, পৌর মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরন্নবী অপু প্রমুখ।

সরেজমিনে দেখা যায়, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের তিন তলা ভবনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নির্মান সামগ্রী। নির্মান কাজ বন্ধ, নেই কোন শ্রমিক। নিচ তলার অজুখানা, টাইলস, বিদ্যুৎ, প্লাস্টার, দরজা-জানালা কোন কাজ শেষ হয়নি। এখানে সিঁড়ির কাজ বাকি রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় নামাজ শুরু হলেও এখানে এসি ও কার্পেটের কাজ শেষ হয়নি। তৃতীয় তলার অজুখান, দরজা, জানালা, ফ্যানও এসির কাজ বাকি রয়েছে। এখন নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

মুসল্লি ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এই মসজিদটির নির্মাণ কাজ করছেন একজন সংসদ সদস্য। তিনি তাঁর খেয়াল খুশি মতো কাজটি করছেন। যখন তাঁর মন চাই কাজ করেন, আবার বন্ধ করেন। তিনি তাঁর প্রভাব খাঁটিয়ে কাজ শেষ না করেই উদ্বোধন করেছেন। মসজিদ উদ্বোধন হওয়ার পরে কাজ বন্ধ রেখেছেন তিনি। নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মুসল্লিরা। মসজিদের কাজটি অনেক দিন ধরে চলছে। কাজের গুণগতমানও খারাপ। শুরু থেকেই কাজটির বিভিন্ন অংশে নিন্মমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে।

জানা যায়, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ নারী-পুরুষের জন্য অজু ও নামাজের জন্য পৃথক স্থান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণাকেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগে আচার-অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা, হেফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও ইসলামি দাওয়াতের জন্য সম্মেলনকক্ষ, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র। এছাড়াও দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধা থাকবে এসব মসজিদে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদটিতে এখনো অনেক কাজ দৃশ্যমান হয়নি।

গণপূর্ত বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা গণপূর্ত বিভাগ মসজিদের ভবন নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয় ৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাব-ঠিকাদার হিসেবে জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেন ২০১৯ সালের ২১ জুলাই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন। ২০২০ সালের ২২ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। চার বছর তিন মাস পার হয়েছে। মসজিদটির কাজ বাকি রেখেই উদ্বোধন করা হয়েছে।

মসজিদের মোয়াজ্জিন মো.রাশেদুল ইসলাম বলেন, মসজিদের কাজ ৩০-৩৫শতাংশ কাজ বাকি রেখে উদ্বোধন হয়েছে। আমি যতটুকু জানি সংসদ সদস্য মহোদয় কথা দিয়েছিলেন, উদ্বোধনের পর দ্রুত তিনি কাজ শেষ করে দিবেন।

দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের বেলতলী এলাকার মো.গোলাম মওলা বলেন, কাজ শেষ না করেই উদ্বোধন করা হয়ছে। আমি বুঝতে পারছি না একটি মসজিদ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ না করে কিভাবে উদ্বোধন হয়। দেশে মনে হয় আর কোন মসজিদ কাজ শেষ না করে উদ্বোধনের নজির নেই। আমাদের নামায আদায়ের দুর্ভোগ লাঘবে নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে কথা হয় মডেল মসজিদের নির্মাণকাজের নিরাপত্তায় নিয়োজিত মো.বকুল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আপাদৎ কাজ বন্ধ আছে। যে কাজ বাকি আছে, সেই কাজ শেষ করতে সর্বচ্চো এক মাস সময় লাগবে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্যে এমপি মো. মোজাফফর হোসেনের মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

জামালপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোবারক হোসেন বলেন, কিছু কাজ এখনো বাকি রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে চাচ্ছেন না। উল্টো তারা অগ্রিম বিল চান। আমরা কাজ শেষ না হলে অগ্রিম বিল দিবো না। এমপি হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগের অংশ হিসেবে পঞ্চম পর্যায়ে গত ৩০ জুলাই রবিবার এ মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৯ অক্টোবর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :