অর্থ বছরের তিন মাসে রপ্তানি হয়েছে ১৩৬৮ কোটি ডলারের পণ্য

অর্থনীতিতে তৈরি হওয়া সংকটে আশার আলো দেখাচ্ছে দেশের রপ্তানি খাত। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানিতে ১ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলারেরও বেশি আয় হয়েছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে দেশের গার্মেন্টস খাত। ওভেন ও নিটওয়্যার এ দুই খাতেই আয় এসেছে ১ হাজার ১৬১ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদকৃত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, আলোচ্য সময়ে নিটওয়্যার খাত থেকে দেশের রপ্তানি আয় এসেছে ৬৭৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এ খাতে রপ্তানি হয়েছিল ৫৬৫ কোটি ডলার। যা চলতি বছরে ১১১ কোটি ডলার বেশি রপ্তানি হয়েছে। এরপরের অবস্থানে থাকা ওভেন গার্মেন্টস থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৪৮৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ কোটি ডলার বা ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি। গেল বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে এ খাতে মোট রপ্তানি হয়েছিল ৪৬২ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের সমপরিমাণ পণ্য।
তবে চলতি বছর সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে হোম টেক্সটাইল পণ্য। এ খাতে চলতি অর্থবছরের তিন মাসে রপ্তানি কমেছে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম। এ বছর তিন মাসে এ খাতে রপ্তানি আয় এসেছে ১৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। যা আগের বছরে ছিল ৩৫ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। এ খাতে আয় কমার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা ডলারের দামকে দায়ী করছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মাদ আলী খোকন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের বড় প্রতিযোগী পাকিস্তান অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের চেয়ে ওরা ডলারের রেট বেশি পেয়ে থাকে। পাকিস্তানে ১ ডলারের বিনিময়ে ২৫০ টাকা পাওয়া যায়। যার ফলে ওদের রপ্তানি খাত এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখানে এখনো ১১০ টাকাও পাওয়া যায় না এক ডলার রপ্তানি করলে। তাই পাকিস্তানের সাথে পেরে উঠছি না আমরা।’
এছাড়া বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েকটি বছর ধরে আমরা সংকটের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছি। করোনার কারণে ২টি বছর গেল। এরপর ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ। এরপর শুরু হলো উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্য যুদ্ধ। এতে করে সবার ক্রয় ক্ষমতাই সীমিত হয়েছে। এখন মানুষ গুরুত্ব দেয় মৌলিক চাহিদার প্রতি। খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই এখন পোশাক কিনছেন না। এদিকে হোম টেক্সের চাহিদা হচ্ছে পোশাক খাতের মধ্যে পাঁচ নাম্বারে। প্রথমত মানুষ সাধারণ পোশাক যেমন টি-শার্ট, লুঙ্গি, ট্রাউজার এসব কেনে। এরপর চাহিদা থাকে শার্ট, জ্যাকেটের। এসব কেনার পরে মানুষ বিছানার চাদর, পর্দা এসব কেনে। এসব কারণেই আমাদের রপ্তানি কমেছে।’
রপ্তানিতে এরপরের অবস্থানে থাকা কৃষিজাত পণ্যেও নিম্নমুখী। এ খাতের রপ্তানি আয় আগের বছরের তুলনায় কমেছে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ। প্রথম তিন মাসে
কৃষি পণ্যে রপ্তানি হয়েছে মোট ২৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার যা আগের বছর হয়েছিল ২৭ কোটি ১৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে এ খাতে ১ কোটি ৪১ লাখ ডলারের। রপ্তানি আয় কমেছে পাটজাত পণ্যেও। এ খাতে চলতি অর্থবছরের তিন মাসে আয় এসেছে ২২ কোটি ১৮ লাখ ডলারের। যা আগের বছর একই সময়ে এসেছিল ২৪ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে রপ্তানি আয় কমেছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের বা ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
রপ্তানি আয়ে ভাটা পড়েছে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যেও। এ খাতে রপ্তানি আয় কমেছে ৬ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি আয় করেছে এ খাতটি মোট ২৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের। যা আগের বছর ছিল ৩২ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। হিমায়িত এবং কাঁচা মাছ রপ্তানি আগের চেয়ে কমেছে। এ বছরের তিন মাসে এ খাতে রপ্তানি আয় এসেছে প্রায় ১০ কোটি ডলারের। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৩ কোটি ২৮ লাখ ডলার। এ কাতে আয় কমেছে ৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার বা ২৫ দশমিক ০৫ শতাংশ।
এদিকে রাসায়নিক পণ্যে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি রপ্তানি আয় বেড়েছে। এ খাতটিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আয় এসেছে ৯ কোটি ৩২ লাখ ডলারের যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬ কোটি ৯১ লাখ ডলার সমমূল্য। অর্থাৎ এ সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। প্ল্যাস্টিক পণ্য খাতেও এ বছর রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এ খাতে আয় এসেছে ৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার যা আগের বছরের তুলনায় ৭০ লাখ ডলার বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এসেছিল ৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
এছাড়া প্রকৌশল খাতে রপ্তানি আয় কমেছে চলতি বছরে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে এ খাতে আয় কমেছে ২ কোটি ৩২ লাখ ডলার বা ১৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ বছর এ খাতে ১২ কোটি ১১ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় এসেছে। যা আগের বছর ছিল ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। এদিকে অন্যান্য খাতের রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার। এসব খাতে চলতি সময়ে রপ্তানি আয় এসেছে ৭৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬২ কোটি ৯৩ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় হয়েছিল ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ডলারেরও (৫৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন) বেশি। চলতি অর্থবছরে এ অংক ছাড়িয়ে যাবে রপ্তানি আয় বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রপ্তানি আয়কে এগিয়ে নিতে সরকারের পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে নীতি যত সহজ হবে রপ্তানি তত বেশি হবে। সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি বাড়াতে তাদের সেবা যত সহজ করবে, সহযোগিতা যত বেশি করবে দেশের রপ্তানি আয় তত বেশি বাড়বে। রপ্তানিকারকদেরও আরো বেশি দক্ষ হতে হবে। আমরা তো কেবল পোশাক খাত দিয়েই চলছি। যা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হতে পারে। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম কিন্তু এখন পোশাক ছেড়ে চিপসেট উৎপাদন শুরু করেছে। অথচ আমরা পোশাকেই পড়ে আছি। সে পোশাকও কমদামি হয় আমাদের। উচ্চমূল্যের পোশাক আমরা বানাতে পারছি না। যদিও এর বাজার অনেক বিস্তৃত।’
তিনি আরো বলেন, ‘রপ্তানিকারকরা যদি আরো অগ্রসর হয় তবে দেশের অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাবে।
(ঢাকাটাইমস/২৫অক্টোবর/এএস/কেএম)

মন্তব্য করুন