ফরিদপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ, হাসপাতালে স্যালাইন সংকট

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:১২ | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:১১

শীতের শুরুতেই ফরিদপুরে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রার্দুভাব। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। এ হাসপাতালে শয্যা ও শিরায় দেওয়া (আইভি) স্যালাইনের সংকট দেখা দেওয়ায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত শহরের প্রাণ কেন্দ্রে একশ শয্যার ফরিদপুর সদর জেনারেল হাসপাতাল। এখানে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র ১০টি বেড। চলতি শীতের আগমনের শুরুতেই শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সীরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। আর এতে স্বল্প পরিসরের (দশ বেডের), সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষের। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে পঞ্চাশের অধিক আক্রান্ত রোগী।

গত ১২ দিনে প্রতিষ্ঠানটিতে শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৬শতাধিক রোগী। বিপুল সংখ্যক এই রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে ওয়ার্ডের মেঝেতে এবং ওয়ার্ডের বাইরে। শিশু রোগীদের এক শয্যা তিনজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দশ বেডে ওই ডায়রিয়া ওয়ার্ড দেখা যায় ৫৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। অনেক রোগীকে রাখা হয়েছে ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দার ফ্লোরে। আর শিশু রোগীদের রাখা হয়েছে একই বেডে দুজন বা তিনজন করে। আর এভাবে চলছে চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা, তার ওপর রয়েছে স্যালাইন সংকট।

একদিকে শয্যা ও কলেরা স্যালাইন সংকট অন্যদিকে বাজারে ওষুধের দোকানে মিলছে না কলেরা প্রতিরোধের স্যালাইন। যা পাওয়া যাচ্ছে তা ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। অনেক রোগীর স্বজনেরা অধিক মূল্য দিয়েও পাচ্ছে না তাদের কাঙ্খিত স্যালাইন ।

এই প্রসঙ্গে ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম চিকিৎসা সেবা, সেখানে সদর হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন থাকবে না এটা হতে পারে না। কর্তৃপক্ষকে বলবো বিষয়টি দ্রুত সমাধান কল্পে ভূমিকা রাখতে।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে সাত হাজার কলেরা স্যালাইনের চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছিল। তার বিপরীতে এখন পযন্ত পাওয়া গেছে ১২শ। সম্প্রতি ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে স্যালাইন সংকট দেখা দেয়। গত ১৬ নভেম্বর পুনরায় চাওয়া হয় কলেরার স্যালাইন, তাতেও সাড়া মেলেনি এখনও। তবে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাপাতাল থেকে ধার করে ৫শ স্যালাইন আনা হয়েছে।

রোগীর স্বজনেরা ক্ষোভ জানিয়ে বলছেন, সরকারি হাসপাতাল স্যালাইন দিতে পারছে না, আমরা বাজারে গিয়ে টাকা দিয়ে পাচ্ছি না। যাও পাচ্ছি তার দাম নিচ্ছে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা। এতে রোগীদের দুভোর্গের মাত্রা বেড়েই চলছে।

শহরের শোভারামপুর থেকে আশা আব্দুল জলিলের পরিবার। এই পরিবারে প্রথমে জলিলের স্ত্রী আক্রান্ত হয় কলেরা রোগে। এরপর জলিলের ছেলের বউ। দিনমজুর জলিল দুজনকে নিয়েই বারান্দায় শয্যা না পেয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন সেখানে।

তিনি জানান, গত দুইদিন আমরা ভর্তি হয়েছি, আমার দুই রোগীর প্রতিদিন তিনটা করে ডায়রিয়া স্যালাইন প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি বেশি দিতে পারছে না। নিরুপায় হয়ে অনেক ঘোরাঘুরি করে ওষুধের দোকান থেকে সাড়ে ৩শ টাকা করে একটি স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। তাও সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি জানান, তার মত এই হাসপাতালে আসা অনেকেই স্যালাইন সংকটে ভুগছে।

শয্যা ও কলেরা রোগীর স্যালাইন সংকটের কথা স্বীকার করে ফরিদপুর সদর জেনারেল হাপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার গনেশ কুমার আগরওয়ালা বলেন, এই মুর্হুতে আমরা রোগীদের সচেনতার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে রোগীর চাপ অনেক বেশি। সেই তুলনায় কলেরার স্যালাইন সংকট প্রচুর।

তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রোগীর চাপ যদি স্বাভাবিক না হয়, আর সময় মতো স্যালাইন না পাই তাহলে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে।

ফরিদপুর জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, স্যালাইন সংকট সাময়িক। যেহেতু সারাদেশেই ডেঙ্গু রোগীর হার অনেক বেশি সেই কারণে স্যালাইন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডেঙ্গু রোগীদের জন্যই স্যালাইন প্রস্তুত করছে বেশি। আমরা আমাদের চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই চাহিদা অনুপাতে স্যালাইন পেয়ে যাবো।

তিনি বলেন, শীতের আগমনের কারণে দিনে গরম রাতে ঠান্ডা তাপমাত্রার এই ভারসাম্যহীনতার কারণেই কোল্ড ডায়রিয়ার আক্রান্ত হার বাড়ছে। আমাদের শিশু এবং বয়স্কদের এক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। তবে আমরা এই সমস্যা থেকে উত্তোলন হতে পারব।

(ঢাকা টাইমস/২৪নভেম্বর/প্রতিনিধি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :