পাবনায় অনলাইন জুয়ার ছড়াছড়ি, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কিশোররা

পলাশ হোসাইন, পাবনা
 | প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:২৫

পাবনায় শহর, গ্রাম ও চরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়া। বিশেষ করে এই জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। জুয়ার নেশায় পড়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা লাটে উঠছে, উল্টো হাজার হাজার টাকা নষ্ট হচ্ছে প্রতি মাসে। পুলিশ প্রশাসন কোনোভাবেই অনলাইন জুয়ার এই মহামারি ঠেকাতে পারছে না।

তবে সময়ের প্রবাহে প্রযুক্তির প্রসারে এই জেলাতেও সবখানেই মানুষের হাতে পৌঁছে গেছে স্মার্টফোন। রয়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা। স্থানীয়রা বলছেন, সেই স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের কল্যাণেই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে অনলাইন গেম আর জুয়া খেলায়। বিভিন্ন বেটিং সাইট ও অ্যাপের বদৌলতে এই অনলাইন জুয়া মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। কিশোর-তরুণরা এর প্রধান শিকার হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।

পাবনা পৌর ৯ নং ওয়ার্ড শালগাড়ীয়া ফরেস্ট এর পাশে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার প্রতিটি দোকানে নিচে সাত-আটজন কিশোরের প্রত্যেকের হাতে স্মার্টফোন। তারা প্রত্যেকেই মগ্ন অনলাইন গেম ও জুয়া খেলায়। কথা বলতে চাইলে খেলা দেখতে সমস্যা হবে বলে কেউ খুব একটা আগ্রহ দেখাল না।

শালগাড়ীয়া আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেল, এলাকার দোকান, ভবন, গাছতলা কিংবা সড়কের বিভিন্ন স্থানে দিনের প্রায় সব সময়ই দেখা মেলে এ রকম দলবদ্ধ কিশোর-তরুণদের। এসব জায়গায় নিয়মিতই বসে অনলাইন গেম ও জুয়ার আসর। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা জানালেন, দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়ই এসব কিশোর-তরুণের চলে যাচ্ছে এই নেশার পেছনে। পড়ালেখা, খেলাধুলা, কাজকর্ম কিছুতেই তাদের মন নেই। অনেকেই পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। কেউ কেউ অনলাইন জুয়ায় টাকা জিতলেও হারছে বেশি। সেই টাকা জোগাড় করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে মাদক অপরাধে।

কথা বলতে অনাগ্রহী কিশোর-তরুণরা জানায়, ফ্রি ফায়ার, ক্যাসিনো, জেডউইন, বাবু৮৮, জেডবার্ড, মারবেল, বাজি৯৯৯, টেনবার্ডটি, পাবজি, লুডু, ক্যারম বোর্ড, ওয়ানএক্স বেটের মতো সব অনলাইন গেম ও জুয়ার সাইট ও অ্যাপ রয়েছে। এসব প্ল্যাটফর্মে নানা ধরনের আকর্ষণীয় সব অফারের মাধ্যমে আকৃষ্ট করা হয় তাদের। একবার ব্যবহার করা শুরু করলে আর এসব প্যাটফর্ম থেকে কেউ বের হতে পারে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন বলেন , ‘ঢাকায় কাজ করে টাকা জমিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি স্মার্টফোন কিনেছি। প্রতিদিন ১০ টাকা করে এমবি কার্ড কিনে মোবাইলে বাজি ও অনলাইন গেম খেলি। সার্ভার বন্ধ থাকলেও ভিপিএনের মাধ্যমে এসব গেম ও বাজি খেলা যায়। এই বাজি খেলতে গিয়ে আমার লেখাপড়া শেষ।’

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাকিল বলেন, ‘মোবাইলে গেম ও জুয়া খেলতে খেলতে আমার এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকা চলে গেছে। কোনো লাভ হয়নি। উল্টো পড়ালেখার ক্ষতি হয়েছে। চোখেরও ক্ষতি হয়েছে।’

অনলাইন জুয়ার বাইরে কেউ কেউ গেমিংয়ে আসক্ত। তাদের একজন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলল, ‘আমার সাত-আট মাসে এমবি কার্ড কিনতেই ১০ হাজারের বেশি টাকা খরচ হয়ে গেছে। এগুলো টাইম পাস ছাড়া আর কিছু না। একটানা মোবাইলে থাকলে মেধা ও স্মরণশক্তি কমে যায়। আমাদের এই অঞ্চলে তৃতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে এর চেয়ে বেশি বয়সী বেশির ভাগ ছেলেই এই মোবাইল গেম ও জুয়ায় আসক্ত।’

অভিভাবকরা বলছেন, ছোট-বড় ছেলেরা গাছতলা, দোকানঘর, চা-দোকানসহ রাস্তার দুই ধারে বিভিন্ন স্থানে দল বেঁধে বসে থেকে মোবাইল গেম ও অনলাইন জুয়ায় মত্ত থাকে। নিষেধ করলেও তারা মুরব্বিদের কথা শোনে না। আর স্থানীয় দোকানদার যাদের ওয়াইফাই সংযোগ রয়েছে, তারা টাকার বিনিময়ে এসব কিশোর-তরুণকে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড সরবরাহ করে থাকেন।

কয়েকজন অভিভাবক বলেন, দোকান মালিকরা গোপনে দিনে ৫-৭ টাকা করে নিয়ে বাচ্চাদের পাসওয়ার্ড দেন। এভাবে তারা একেকজন দিনে ৩০০-৪০০ টাকা বাড়তি আয় করছেন। তা ছাড়া ওয়াইফাই ব্যবহার করা বাচ্চাদের কাছে বাড়তি চা-সিগারেট বিক্রি করছেন। তরুণ প্রজন্ম এভাবে মোবাইলের নেশায় বুঁদ হয়ে গেলেও এসব দোকানদারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

অভিভাবকরা আরও বলেন, ‘এই অনলাইন জুয়ার নেশায় পড়ে অনেকের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব করতে গিয়ে এখন বাচ্চারা টাকার জন্য আমাদের ওপর চাপ দেয়। কেউ কেউ চুরিতেও জড়িয়ে গেছে। এ রকম চলতে থাকলে এসব ছেলের কোনো কাজের দক্ষতাই তৈরি হবে না। তখন হয়তো তারা চুরি-ছিনতাই, মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়বে। আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে তাই সরকারকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

জানতে চাইলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, পাবনায় এ বিষয়ে অনেক মামলা চলমান আছে । অনলাইন ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপে খেলে কেউ নিঃস্ব হয়েছে, কেউ অনেক টাকা পেয়েছে। এসব জুয়ার টাকা খুব সহজেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হাতবদল করা যাচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় আছে। অনলাইন জুয়ার সফটওয়্যার ডেভেলপার এর আগে অনেক জনকে আটক করা হয়েছে। অনলাইন বাজি বন্ধে পাবনা জেলা পুলিশ নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

(ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/এআর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :