কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বাসে হামলা, আহত ১০

কুবি প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:০০| আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১০:১১
অ- অ+

'পূর্বের ঘটনার' জের ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাসে হামলা করে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ ঘটনাস্থল থেকে হামলাকারীদের মধ্য থেকে একজনকে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাত ৮টায় বাসটি টমছম ব্রিজ এলাকায় এলে এ ঘটনা ঘটে।

শহর থেকে শিক্ষার্থীদের বাস ক্যাম্পাসে আসা মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা হাত তালি দিয়ে বাসটিকে গোল চত্বরে নিয়ে আসেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের সরিয়ে বাসের ভেতর থাকা ব্যক্তিকে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়।

হামলার শিকার হওয়া বাসটি ক্যাম্পাসে আসলে দেখা যায়, বাসের লুকিং গ্লাস ও দরজার সামনের জানালা ভেঙে ফেলেছে হামলাকারীরা।

শিক্ষার্থীরা যে ব্যক্তিকে তুলে এনেছে তার নাম মো. রাকিব। তিনি বিশ্বরোড ও টমছম ব্রিজ এলাকায় অটো চালায়। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। তার পিতার নাম মো.রুহুল আমিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে পুলিশের উপস্থিতিতে এসব তথ্য দেন হামলাকারী ব্যক্তি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসমুখী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বহনকারী নীল বাস (কুমিল্লা-স ১১০০-৩২) টমছম ব্রিজ এলাকায় এলে হঠাৎ একটি বলাকা বাস সামনে চলে আসে। বলাকা বাসটি বিশ্ববিদ্যালয় বাসকে আটকায় এবং সে বাস থেকে ২০-২৫ জন বিভিন্ন লাঠি-সোঠা নিয়ে নামে। তারা বাস ছেড়ে বিশ্ববিদ্যলয় শিক্ষার্থীদের নেমে যেতে বলে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা না নামলে একপর্যায়ে গিয়ে তারা বাসে ভাঙচুর শুরু করে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা বাস থেকে তাদের থামাতে নামলে দুর্বৃত্তরা শিক্ষার্থীদের উপরেও চড়াও হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরাও নিজেদের বাঁচাতে পাল্টা জবাব দেয় এবং একজনকে বাসে তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে।'

এই হামলার ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তরা হলেন, অর্থনীতি বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ মাসুম, লোকপ্রশাসন বিভাগের ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়ের মাহমুদ সাকিব, আবদুল বাসেদ, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আদনান হোসেন সাহেদ, মো. রিফাতুল ইসলাম, আতিক রহমান, রিয়াজন হক সজীব, মো. রাসেল চৌধুরী। এছাড়া বাসের হেলপার জহিরুল ইসলাম ও বাস ড্রাইভার সুমন দাসসহ প্রায় ১০জন আহত হয়েছেন।

এই বিষয় প্রত্যক্ষদর্শী এবং বাসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ১৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, 'আমরা নীল বাস দিয়ে টমছম ব্রিজ দিয়ে যাচ্ছিলাম। বাস টমছম ব্রিজের অগ্রণী ব্যাংকের সামনে আসার পর হঠাৎ একটি বলাকা বাস দেখতে পেলাম। বাসটি সম্পূর্ণ খালি ছিল। আমি ভাবছিলাম হয়তো ব্রেক করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই বাসটি আমাদের বাসকে আটকায়। মুহূর্তের মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জন সন্ত্রাসী বাশ, রড, স্টিলের পাইপ, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাস ঘেরাও করে আগ্রাসীভাবে আমাদের বাস থেকে নামার জন্য বলে। যখন দেখলো আমরা নামছি না তখন তারা বাস ভাঙা শুরু করল। বাঁশ এবং রড নিয়ে জানালা দিয়ে আমাদেরকে আক্রমণ করার সময় তারা বাসের হেলপার এবং ড্রাইভারকে নামতে বলে।'

বাসে থাকা আরেক শিক্ষার্থী লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৩তম আবর্তনের নাসরিন আক্তার বলেন, 'গতকাল আমাদের বাস ড্রাইভারের সঙ্গে ওখানকার স্থানীয় অটো চালকদের বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। সেই রেশ ধরে আজকে তারা আমাদের শিক্ষার্থী বাসে হামলা করে। জানালর দিক থেকে বাঁশসহ বিভিন্ন লাঠি, রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে। বাসের সামনের দরজার গ্লাসটিও ভেঙে ফেলে তারা।'

পূর্বের ঘটনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বাসের হেল্পার মো. জহির আহমেদ বলেন, 'গতকাল সন্ধ্যায় শহরের টমছম ব্রিজ থেকে বাস ইউটার্ন নেওয়ার জন্য আমি বাস থেকে নেমে সামনের অটোগুলোকে একটু সরতে বলি। তখন তারা কয়েকজন আমাকে ও ড্রাইভারকে বাজে ভাষায় কথা বলে এবং আমার গায়ে হাত তুলে। তখনই বাসে থাকা কিছু শিক্ষার্থী বাস থেকে নেমে আমাকে উদ্ধার করেন। তখনও তারা আমাদেরকে গালি ও হুমকি দিচ্ছিল।'

আজকের ঘটনার বিষয় তিনি বলেন, 'আজকে সন্ধ্যায় আমাদের বাসটি একই স্থানে গেলে প্রায় অর্ধশতক লোক আমাদের বাসটিকে ঘিরে হামলা চালালে আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের একজনকে বাসে উঠিয়ে নেন। তৎক্ষণাৎ আমরা বাস নিয়ে ক্যাম্পাসমুখী হই।'

বাসের ড্রাইভার সুমন দাশ বলেন, 'গতকাল আমাদের বাস ইউটার্ন নেওয়ার সময় অটোড্রাইভারের কাছে সাইড চাওয়া হয়। এরপর এ নিয়ে বাসের হেল্পারের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। বিষয়টি সেখানে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আজ (বুধবার) রাতে বহিরাগতরা লাঠি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে আমার মাথায় ও পায়ে আঘাত করে। তারপর বাসের ভেতর থেকে শিক্ষার্থীরা নেমে আসে।'

শিক্ষার্থী কর্তৃক তুলে আনা হামলাকারী মো. রাকিব বলেন, 'এখানে হামলা করার সময় কয়জন ছিল। আমি ছয়জনকে চিনি, ছয় জনের নাম বলছি। আর যে ২০-২৫ জন ছিল তাদের মধ্যে এক জনের নাম বললে হেরা সবার নাম বার কইরা দিত পারব।'

মো. রাকিব যাদের নাম বলেছেন তারা হলেন- রুহুল আমিন, সোহান (২৬), সৈকত (২০), শিহাব (২৮), সিয়াম(১৮), আশরাফুল।

এ বিষয়ে কোটবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস এম আরিফুর রহমান বলেন, ' যে সকল শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি এবং যেই ব্যক্তিকে শিক্ষার্থীরা তুলে নিয়ে এসেছে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি মামলা করে তাহলে আমরা তদন্ত শুরু করবো।'

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ আহত শিক্ষার্থীদের ও তুলে আনা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সর্বশেষ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে তুলে আনা ব্যক্তিটি।'

(ঢাকাটাইমস/৩০নভেম্বর/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মির্জাপুরে উদ্ধার হওয়া গরু ফিরিয়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা চাইলেন এসআই
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর: তাদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, তবুও বহাল...
পাকিস্তান থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে ফেরানো হবে রিশাদ ও নাহিদকে!
মেঘনায় অনুমোদনহীন ডেন্টালে জীবাণুযুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ছড়াচ্ছে হেপাটাইটিস বি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা