কুয়াকাটায় নানা অব্যবস্থাপনা, ভোগান্তিতে দর্শনার্থীরা

আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
 | প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:০৭

‘আমরা দ্বিতীয়বার কুয়াকাটা ভ্রমণে আসব না!’ সৈকতে এসে ভোগান্তির শিকার হয়ে প্রথমেই এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক সামিউল ইসলাম-সালমা দম্পতি। তারা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আসার প্রধান কারণ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দৃশ্য অবলোকন করা। সৈকতে প্রধান প্রবেশ পথে সড়কে চৌরাস্তা জিরো পয়েন্টে অটোভ্যান-ইজিবাইকের গড়ে ওঠা যত্রতত্র স্ট্যান্ড। সংকীর্ণ সড়কে স্বাভাবিক চলাচলে নিরাপত্তাহীনতা যেমন, আবার সৈকতে জিরো পয়েন্টে নামলেই মোটরবাইক, ফটোগ্রাফার, অটোভ্যান-ইজিবাইক, বীচ বাইকসহ সমুদ্রে গোসলে নেমে ওয়াটার বাইক, স্পীডবোট চালকদের যে পরিমান হয়রানির শিকার হতে হয়, এর জাতাকলে কুয়াকাটা ভ্রমণের স্বাদ মিটে গেছে। এসব পরিবর্তন না হলে আমাদের পরিচিত কাউকে কুয়াকাটা ভ্রমণে আসার জন্য বলব না! আর এমন অনিয়ম চলতে থাকলে কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র পড়বে হুমকির মুখে। আমাদের মতো অনেক পর্যটক ভ্রমণ বিমুখ হবেন এই সৈকতে।

পটুয়াখালীর সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা দেশের একটি অন্যতম পর্যটন নগরী। এই পর্যটন নগরী দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘের এই সমুদ্র সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রায় সারাবছর ভ্রমণে আসেন। তবে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের নিয়ম শৃঙ্খলায় দৃশ্যমান অবনতি দেখে হতবাক হচ্ছেন পর্যটকরা। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অব্যবস্থাপনা ও নানা অনিয়মে চিন্তিত বিনিয়োগকারীরাও। অচিরেই সৈকতের নান্দনিক পরিবেশ এবং নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা না গেলে মুখ ফিরিয়ে নেবেন ভ্রমণ পিপাসু মানুষজন।

পদ্মা সেতুর সুফলে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি সমুদ্র সৈকতে সেবার মান। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ঘিরে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বর্তমানে সেবার বিপর্যয় ও নানা অনিয়মের ফলে বিনিয়োগ বিমুখ হচ্ছেন অনেকেই। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় প্রশাসনসহ জেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ নিচ্ছে তা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। তবে সৈকত পরিপাটি রাখতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা সাময়িক। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা, আবাসিক এবং খাবার হোটেলের বর্জ্য, জেলেদের জাল-নৌকা, ভাঙাচোরা ও পলিথিনের ঝুঁপড়ি ঘর ও ময়লার ভাগাড়, ছাতা-বেঞ্চির পেছনে একই স্থানে জেলেদের জাল মেরামত ও মাছের কারবার; এসব আপসারণে প্রশাসনের উদ্যোগ কোনো কাজে আসছে না।

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটক আশরাফুল-নদী জামান দম্পতি বলেন, সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় পা রেখেই ভোগান্তি শুরু হয়। কুয়াকাটায় বর্তমানে সেবার যে অগ্রগতি তা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কখনোই প্রত্যাশা করা যায় না। আমরা এবার এসে যেসকল অনিয়ম উপলব্ধি করলাম এসব পরিবর্তন না হলে পরবর্তীতে কুয়াকাটা ভ্রমণে আসার প্রশ্নই আসে না। সৈকতের প্রতিটি সেক্টরেই অনিয়ম বিছানো।

মাদারীপুর থেকে আসা পর্যটক দেব, বাদল আর বাধন বলেন, বিচে নামলেই মোটরবাইক, ফটোগ্রাফাররা ঘিরে ধরে। ছবি তোলা, কোথাও যেতে ইচ্ছে না হলেও তারা পেছনে লেগে থাকে একের পর একজন। কোনো স্বস্তি পাওয়া যায় না মূল সৈকতে চলাফেরায়। এটি আমাদের জন্য খুবই বিরক্তির কারণ। সমুদ্রে গোসলে নামলে স্পিডবোটের লোকজনও একই অবস্থা করে তোলে। এমন অনিয়ম রোধে সৈকতে আইনি পদক্ষেপ জরুরি।

বাউফলের দর্শনার্থী নাঈম আব্দুল্লাহ বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পরিবেশের কোন পরিপাটি নেই। সৈকতের মধ্যে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা, জাল ফালানো, জেলেদের অপরিকল্পিতভাবে রাখা নৌকা, পলিথিন দিয়ে ঝুঁপড়ি ঘর, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ব্যবসায়ীদের ভাসমান দোকানপাট দেখে আমরা রিতিমতো হতাশ।

ঢাকার বনানী থেকে আসা পর্যটক আনোয়ার, খুলনার হাবিবুল্লাহ নিয়াজ, ভোলার শিমুল হাওলাদারসহ একাধিক পর্যটকরা জানান, সৈকতের প্রতিটি সেক্টরের জন্য আলাদা জোন করে দিলে কেউ আর হয়রানির শিকার হবে না। কুয়াকাটা বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট ভ্রমণ সুবিধার জন্য কোন দিকে কি আছে, দর্শনীয় স্পটে যাওয়া আসার কতটুকু পথ, সময় ও ভাড়া নির্দেশিত সাইনবোর্ড স্থাপন করে দিলে সৈকতে এসে কেউ আর ভোগান্তিতে পরবে না।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, কুয়াকাটা পৌরসভার পক্ষ থেকে সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কুয়াকাটা পৌরসভায় বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর আওতায় চৌরাস্তায় একটি গোল চতত্ত্বর করা হবে। এবং ডিজিটাল সাইনবোর্ড স্থাপন করা হবে সড়কের দুই পাশে, যাতে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা দর্শনীয় স্পট ভ্রমণে একটি দিক নির্দেশনা পায়। এতে করে যত্রতত্র যানবাহনের স্ট্যান্ড গড়ে ওঠার আর সুযোগ থাকবে না। তবে কুয়াকাটার উন্নয়নে পৌরসভা গঠন করা হলেও সৈকত উন্নয়নে পৌরসভার কোনো ভূমিকা নেই।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুয়াকাটা একটি আধুনিক মানের পর্যটন নগরী উপহার দিতে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যেসকল বিষয়গুলোতে পর্যটকদের আপত্তি রয়েছে এবং ভোগান্তির বিষয় সামনে এসেছে তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে বনায়ন করাসহ মেরিন ড্রাইভের আদলে একটি সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। অচিরেই কুয়াকাটা সৈকতে নান্দনিক সৌন্দর্য ফিরে পাবে। এছাড়াও যত্রতত্র ভাসমান ব্যবসায়ীদের দোকানপাট শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হয়েছে। সৈকতের অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে আমারা কাজ করছি। কুয়াকাটা পর্যটন নগরীর শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্যের প্রশ্নে আমরা কোন আপোষ করব না বলে জানান এই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/৩০ নভেম্বর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :