আঘাত হেনেছে মিগজাউম, অন্ধ্র প্রদেশে তাণ্ডব
ভারতের তামিলনাডু রাজ্যে তাণ্ডব চালিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে অন্ধ্র প্রদেশে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম। দুপুর ৩টার পর এটি অন্ধ্রপ্রদেশের স্থলভাগে আঘাত হানে।
অন্ধ্র প্রদেশ উপকূলে এখন ঘণ্টায় ৯০-১১০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। মিগজাউমের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়া ছাড়াও গাছপালা এবং বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এছাড়া বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়েছে রাজ্যের বহু এলাকা।
স্থলভাগে আঘাত হানার আগেই দক্ষিণাত্যের তামিলনাডুতে তাণ্ডব চালায় মিগজাউম। রবিাবর থেকেই ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতে গতকাল সোমবার তামিলনাডুর রাজধানী চেন্নাইসহ বিভিন্ন শহর পানিতে তলিয়ে যায়।
মঙ্গলবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড় মিগজাম চেন্নাই থেকে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে আঘাত হেনেছে। এই সময়ে তামিলনাডু রাজধানী চেন্নাইয়ের পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও এখনো পানির নিজে ডুবে আছে শহরের বহু অঞ্চল।
পূর্ব গোদাবরী, পশ্চিম গোদাবরী, এলুরু, কৃষ্ণা, এনটিআর, গুন্টুর, বাপাতলা এবং পালনাডু প্রকাশম জেলার কয়েকটি জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি নেল্লোর এবং বাপাতলার কাছেই উপকূল অতিক্রম করবে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তর।
গত ২৪ ঘণ্টায় অন্ধ্র প্রদেশের নেল্লোর ও তিরুপতি জেলার বেশ কিছু অংশে ২৫ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া প্রবল বাতাসের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাজার হাজার বিদ্যুতের খুঁটি উপড়িয়ে পড়েছে।
চলতি মৌসুমে ফসল কাটার সময় সামনে রেখে আসা ঝড়ে প্রায় ৯৮ হাজার হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে। আরও ৩০ হাজার হেক্টর জমি ফসল কাটার পর ক্ষেতে পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র নেল্লোর জেলায় ৯৮টি পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং ৬,০০০ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় পৌঁছিয়েছেন।
ইতোমধ্যে ভারতের দুই রাজ্যেই হাজার হাজার গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে পরিবহন ব্যবস্থা। রাজ্য দুটিতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে এবং অন্ধ্র প্রদেশের চারটি জেলায় স্কুল-কলেজ, ব্যাংকে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে চেন্নাইয়ে মিগজাউমের প্রভাবে ঘরবাড়ি ধসে পড়া ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু কবর পাওয়া গেছে। সোমবার থেকেই রাজধানী চেন্নাইয়ের প্রায় পুরোটাই পানিতে ডুবে আছে।
বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে কোথাও গলা সমান পানি, কোথাও কোমর ডোবা সমান। এমন একটি ভিডিওতে দেখা গেছে একটি মালবাহী ট্রাক প্রায় সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। আরেকটি ভিডিওতে একটি কুমিরকে জলমগ্ন রাস্তায় চলতে দেখা গেছে।
তামিলনাডুর বন দপ্তরের সচিব সুপ্রিয়া চাগু সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্ট করে জানিয়েছেন, চেন্নাইয়ের বেশ কিছু জলা এলাকায় কুমির থাকেই। এরা এমনিতে নিরীহ এবং সাধারণত মানুষের থেকে দূরেই থাকার চেষ্টা করে।
তবুও কুমির দেখলে সেটির কাছে মানুষ যাতে না যান, সেই সতর্কবার্তাও দিয়েছে বন দপ্তর।
চেন্নাই শহরে বিগত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কোথাও কোথাও বাড়ির একতলা প্লাবিত হওয়ায়, দুই বা তিন তলায় বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ।
জলাবদ্ধতার ফলে চেন্নাইয়ের পরিবহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। রাস্তায় গাড়ি, বাস ইত্যাদি যেমন আটকে আছে, তেমনই একাধিক সুড়ঙ্গ পথও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে অন্তত দেড়শোটি ট্রেন। এমনকি চেন্নাই বিমানবন্দর সোমবার বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।
তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে চেন্নাইতে বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে, বিমানবন্দর আবারও চালু হয়েছে।
কিন্তু শহরের সিংহভাগ অঞ্চল এখনও জলে ডুবে রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে কিছু এলাকা থেকে জল নামতে শুরু করেছে।
রয়টার্স এও জানিয়েছে যে চেন্নাই ও তার আশেপাশের ইলেকট্রনিক্স শিল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পৌর প্রশাসন মন্ত্রী কে এন নেহরু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন চেন্নাইয়ে বসবাসকারী প্রায় তিন লক্ষ মানুষ বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং যেখানে লোকেরা বাইরে বের হতে পারছেন না, সেখানে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে সরকার।
জেলা প্রশাসন এবং চেন্নাই কর্পোরেশন নিচু এলাকার মানুষকে নিকটবর্তী ত্রাণ কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে। অনেককেই নৌকা করে উদ্ধার করতে হচ্ছে।
চেন্নাই কর্পোরেশন, দমকল বিভাগ এবং পুলিশ রাস্তায় পড়ে থাকা গাছগুলি সরানোর কাজ চালাচ্ছে।
(ঢাকা টাইমস/০৫ডিসেম্বর/এসআইএস/ইএইচ)
মন্তব্য করুন