স্বাধীনভাবে চলাফেরাসহ সরকার সব মৌলিক অধিকার হরণ করেছে: দেলাওয়ার হোসেন

সরকার স্বাধীনভাবে চলাফেরাসহ সব মৌলিক অধিকার হরণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার করে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সাজা দিচ্ছে। এই সরকার জনগণের ভোটাধিকার, বেঁচে থাকা ও মত প্রকাশের অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকারসহ সকল মৌলিক মানবাধিকার হরণ করেছে।
শনিবার সকালে রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত নিম্ন আদালতে প্রহসনের বিচার, ফরমায়েশি রায় ও গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে একথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর মতিঝিল থেকে শুরু হয়ে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
দেলাওয়ার হোসেন বলেন, সরকার নির্বাচনের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করতে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যেই এই ফরমায়েশি তফসিল সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন প্রত্যাখ্যান করেছে। অথচ সরকার নির্বাচনি বৈতরণী পার করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যা ও বায়বীয় মামলায় গ্রেপ্তার করে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। আদালত মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল অথচ সরকার আদালতকে অপব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। যা আইনের শাসনকে ভূলুণ্ঠিত ও বিচার বিভাগকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তিনি সরকারের এহেন হীন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, গ্রেপ্তার করে, মামলা দিয়ে, গুপ্ত হত্যা ও ফরমায়েশি রায়ে সাজা দিয়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই জনগণ তার দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবে ইনশাআল্লাহ।
দেলাওয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান গণবিরোধী সরকার আদালতকে অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে ব্যবহার করে দেশের বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সরকারের ছক অনুযায়ী নিম্ন আদালতে বিচারকার্য পরিচালনা করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি সব নিয়ম লঙ্ঘন করে গভীর রাত পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুনানি ছাড়াই বিরোধী দলের সম্ভাব্য নির্বাচনি প্রার্থীদেরকে দ্রুত সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭ শতাধিক বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা বিচারক ও বিচার ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগের এসব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে, সকল নেতৃবৃন্দ ও আলেম ওলামাদের মুক্তির জন্য এবং জনগণের অধিকার আদায়ে চলমান আন্দোলনকে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে। এজন্য তিনি সবাইকে রাজপথে আরও কার্যকর ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী দলের ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করছে। দেশব্যাপী আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাসা-বাড়িতে হানা দিয়ে নেতাকর্মীদের না পেলে পরিবারের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করে জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। এমনকি তাদের হাত থেকে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও রেহাই পাচ্ছে না। মানবতাবিরোধী এই সরকার দলীয় বাহিনী এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে আবারো গুপ্তহত্যা শুরু করেছে।
‘সম্প্রতি রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁসহ বিভিন্ন স্থানে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা নম্বরবিহীন গাড়িতে চড়ে জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে গুরুতর আহত ও হাত-পা ভেঙ্গে দিচ্ছে এবং নির্মমভাবে হত্যা করছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী ও রংপুরে জনপ্রতিনিধি ও অভিজ্ঞ ডাক্তারসহ ৩ জনকে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সরকারের এই সকল গুপ্তহত্যা ও অপরাজনীতির ধিক্কার জানাচ্ছি। অবিলম্বে খুনি ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় জনগণ গণআদালতে এই সকল হত্যাকারী ও তাদের মদদদাতা এই সরকারের বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবে।’জামায়াত নেতা বলেন, আমাদের এই মাতৃভূমি এই সরকারের কাছে এক মুহূর্তের জন্য নিরাপদ নয়। সরকারের দুঃশাসনের কারনেই পশ্চিমা বিশ্ব দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছে। সুতরাং এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে এই সরকারের পতনের বিকল্প নেই। দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নিজেদের অধিকার আদায়ে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজপথে নেমে আসুন, এই ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকার পালাবার পথ খুঁজে পাবে না। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, শামছুর রহমান, ড. মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, আব্দুর রহমান, কামরুল আহসান, মহানগরীর মজলিশে শূরা সদস্য শাহীন আহমেদ খান, অ্যাডভোকেট শাহ মাহফুজুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী পূর্বের সভাপতি তাকরিম হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ঢাকা কলেজ সভাপতি আসিফ তাজওয়ার শিশিরসহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন থানা আমির ও সেক্রেটারিরা।
ঢাকাটাইমস/০৯ডিসেম্বর/জেবি/ইএস

মন্তব্য করুন