প্রতি ৬৮৭ জন ভোটারের নিরাপত্তায় একজন পুলিশ

৭ জানুয়ারির ভোট ঠেকাতে ভোটবর্জন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের সমমনা দলগুলো। অন্যদিকে বিরোধী শিবিরের এই আন্দোলন মোকাবিলা করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে মাঠে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সবমিলিয়ে ভোটারদের মধ্যে এক ধরণের নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মাঠে নামার কথা রয়েছে সেনাবাহিনীর।
এদিকে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কতটা সক্ষম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। তবে বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, এখ নপর্যন্ত ভোটের পরিবেশসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো সহিংসতা ঘটেনি এবারের ভোটে। সামনের দিনগুলোতে যেন সুস্ঠুৃ পরিবেশ নিশ্চিত থাকে তার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা সাজিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নির্বাচনের নিরাপত্তা দিতে দেশজুড়ে মাঠপর্যায়ে পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, ৩শ’ আসনে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬লাখ ৯১হাজার ৬৩৩ জন।
বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে সরাসরি নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য ১ লাখ ৭৪ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে।
সে হিসাবে ৬৮৭জন ভোটারের নিরাপত্তায় থাকছে একজন পুলিশ।
তবে এর বাইরেও সারাদেশে র্যাব, বিজিবি, আনসার, এপিবিএন, কোস্টগার্ড ও সেনাসদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এক লাখ ৮৯ হাজার পুলিশ সদস্য রয়েছে।
নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি জানিয়েছে, এবার পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭লাখ ৭১হাজার ৫৭৯ জন, নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯লাখ ১৯হাজার ২০২ এবং তৃতীয় লিঙ্গ ভোটার সংখ্যা ৮৫২ জন। ৩শ আসনে প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ৮৯৫ জন।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, ভোটের মাঠে নিরাপত্তা দিতে পুলিশের সকল ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ সময় কোনো পুলিশ সদস্য অসুস্থতাজনিত ছুটিও পাবেন না। অসুস্থ অবস্থায় মাঠপর্যায়ে কাজ করতে না পারলেও ওই পুলিশ সদস্যদের অফিসে বসে তদারকি বা পর্যবেক্ষণের কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
ডিএমপি সূত্র জানায়, রাজধানীতে মোট ২ হাজার ১৪৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেকের বেশি অতিঝুঁকিপূর্ন। কম ঝুঁকিপূর্ণ ৪৭৮টি কেন্দ্র।
কয়েকটি রাজনৈতিক দল ভোট বর্জনের ডাক দেওয়ায় এবং বিভিন্ন আসনে দলীয় প্রার্থীদের তুলনায় শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তা দেয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আসনে প্রার্থীদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ঘটছে। ভোটের আগেই সহিংসতায় জড়াচ্ছেন প্রার্থীদের সমর্থকেরা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ৩শ’ আসনের ঝুকিপূর্ন কেন্দ্রের তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। স্থানীয় পর্যায়ে কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তারা ঝুকিপূর্ন কেন্দ্র বাছাই করছে। কিছু কেন্দ্রের তালিকাও তৈরি করেছে গোয়েন্দারা।
এদিকে ভোটের আগেই নির্বাচনি মাঠে শুরু হয়েছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। জেল থেকে ছাড়া পেয়েই বিভিন্ন চিহ্নিত অপরাধীরা পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।
পুলিশ বলছে এসকল অপরাধীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তারা কোন অপরাধ ঘটানোর চেষ্টা করলেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই মাসে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) ২২১টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় ৪৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় ১৮-২৯ ডিসেম্বর ১০ দিনে ১৮৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ২১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সারা দেশে ১ হাজার ১৫১ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ৮ হাজার ৫০০ আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য, ২০০ প্লাটুন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) আগামী ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবে। এরমধ্যে এপিবিএন ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোতায়েন থাকবে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকার ৪৩টি ইউনিয়নে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার ৫ লাখ ১৬ হাজার আনসার, ৪৬ হাজার ৮৭৬ বিজিবি, ২ হাজার ৩৫০ কোস্টগার্ড ও র্যাবের ৭ শতাধিক টহল দল থাকবে। তাদের সঙ্গে ভোটের মাঠে থাকবে সশস্ত্র বাহিনী।
বিগত দিনের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিভিন্ন আসনের একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের। অনেক ভোটার জানিয়েছেন, ভোটের দিন প্রশাসন ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন। বিভিন্ন কেন্দ্রেই সংঘাত হয়। তবে সেই সময় পুলিশ চাইলেও সহজে সহিংসতা নিয়ন্ত্রন করতে পারে না।
ভোটের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচনি মাঠে শুধু পুলিশই নয়Ñ সেনা সদস্য, র্যাব, বিজিবি, আনসার, এপিবিএন, কোস্টগার্ড সদস্যরা এবং ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। সেই দিক থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে আমরা সংখ্যায় কম নয়। সকলের সমন্বয়ে আমরা নির্বাচনি ভোটের মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে সংখ্যক পুলিশ রয়েছে, তাতে আমরা সকলের সমন্বয়ে ভোটের মাঠে নিরাপত্তা দিতে স্বয়ংসস্পূর্ণ রয়েছি এবং আমাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।’
(ঢাকাটাইমস/০২জানুয়ারি/এইচএম/বিবি)

মন্তব্য করুন