বিএনপির হরতাল বিদেশিদের ‘দেখাতে’, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এমনকি ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন প্রতিহত করতে ভোটের আগের দিন থেকে দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে তারা। তবে এতে ভোটের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা।
তারা বলছেন, বিদেশিরা কিছু একটা করবে এমন আশায় বসে আছে বিএনপি। পাশাপাশি নিজেরাও যে তৎপর সেটা বিদেশিদের জানাতে হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই হরতালে জনগণের কোনো সাড়া নেই। এটা ভোটের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
গত একমাস ধরে গণসংযোগের নামে লিফলেট বিতরণে সাধারণ মানুষের সাড়া না পেয়ে শেষমেষ হরতালকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো। দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কোনো হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি কখনই পালন না হলেও এবারই প্রথম বিএনপি শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হরতাল ডেকেছে।
কিন্তু বিএনপির এই হরতাল নির্বাচনের দিন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে কোনো বাধা সৃষ্টি বা প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, নির্বাচন প্রতিহতের কথা বলে হরতাল ডেকে বিএনপি তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো মূলত সাংবিধানিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে।
আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যে ভিসানীতি প্রয়োগের ক্যাটাগরির কথা বলেছে তাতে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো এই ক্যাটাগরিতে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে সংশ্লিষ্টরা।
সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ জমির বলেন, এসব হরতালের কোনো প্রভাব ভোটারদের ওপর পড়বে না। ভোটররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে যাবে। ভোট দিতে যাবে। হরতাল দিয়ে ভোটারদের কেন্দ্র বিমুখ করা যাবে না।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার বার বলে আসছে, তারা বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে।
এ ব্যাপারে শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি প্রকাশ্যে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাহলে এখনো কেন তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নীতি আসবে না, কেন তাদেরকে ভিসা নীতি দেওয়া হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জানতে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বিএনপির আন্দোলনে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না। একটা কিছু করতে হবে এ জন্য তারা এটা করেছে, হরতাল ডেকেছে। ছুটির দিনে হরতাল হয় না সেটা তারা ভালো করে তারা জানে। তবে কথা হচ্ছে, তারা এই যে হরতার ডাকল, এটা মানুষ জানল, বিদেশিরাও জানল বিরোধীরা কিছু একটা করছে।'
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আমার মনে হয় তাদেরকে কিছু একটা করতে হবে এজন্য তারা করেছে। কারণ কোনো হরতালই তো তারা করতে পারেনি। হরতাল করতে গেলে তো জনগণের সম্পৃক্ততা থাকতে হয়। কর্মীদের অংশগ্রহণ থাকতে হয়। এখানে এমনকিছু দৃশ্যমান নয়। কিছু একটা করতে হবে, সেকারণে এটা করা। যদি একেবারেই কিছু একটা না করে তাহলে কী মনে হতো, তাই করেছে। এর কোনো প্রভাব কোনোভাবেই ভোটে পড়বে না।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি গুরুত্ত্ব দিই। গণমাধ্যমও এটা গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তারাও (যুক্তরাষ্ট্র) ওরকম এটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কিছু একটা করতে হবে, করেছে। এখন দেখছে এসব করে কোনো লাভটাব হয় না। তারাও বুঝতে পেরেছে ভিসা বন্ধ করে বাংলাদেশে কিছু হবে না। এটা না বুঝার কোনো কারণ নেই। কিছু একটা করতে হবে বলে তারা একসময় করেছিল। কিন্তু এখন তারা ঠিকই বুঝতে পারছে এটা সম্ভব না। সেই হিসাবে তারা কী করবে এটা আমি জানি না। তবে আমার মনে হয় না, সেই ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেবে। সেই জন্য এটাকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।'
সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে গত দুই মাস ধরে ধারাবাহিক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এসব কর্মসূচিতে কয়েক শ যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে সাধারণ মানুষের। সবশেষ ডাকা হরতালের সমর্থনে একাধিক জায়গায় ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছে। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ, র্যাব আনসারের পাশাপাশি বিজিবি, সশস্ত্র বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মাঠে রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/০৫জানুয়ারি/এসএস/ইএস)

মন্তব্য করুন