কিডনি পরিষ্কার করে ভেষজ ঔষধি ধনেপাতা

অসাধারণ গুণে ভরপুর সুপরিচিত ধনে বা ধনিয়া একটি সুগন্ধি ঔষধি গাছ। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার স্থানীয় উদ্ভিদ। বঙ্গ অঞ্চলের প্রায় সর্বত্র ধনের বীজ খাবারের মসলা হিসাবে আর এর পাতা সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ধনিয়া পাতার বৈজ্ঞানিক নাম কোরিয়নড্রাম সেটিভাম। এটি একটি একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াতে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র ধনের বীজ খাবারের মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ধনিয়া পাতা বোনা হয় সাধারণত মসলা হিসেবে ধনিয়া পাওয়ার জন্য। তবে বীজ হওয়ার আগে এ গাছের পাতা বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতে খুবই জনপ্রিয় একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া দেশেই উৎপাদিত হয় বলে সারা বছর বিশেষ করে শহরের বাজারগুলোতে ধনিয়া পাতার দেখা মেলে।
প্রাচীনকাল থেকে রান্নাকৃত খাদ্যের স্বাদ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ধনেপাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। ধনেপাতা খাদ্যের স্বাদ ও ঘ্রাণ অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেয়। ধনে শীতকালে চাষ করা হয়।
ধনেপাতাকে আমরা সালাদ এবং রান্নার স্বাদ বাড়ানোর কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শুধু স্বাদ এবং ঘ্রাণ বাড়ানোর কাজেই এর গুণাগুণ শেষ হয়ে যায় না। এ পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো একটি তৃণ জাতীয় খাবার।
ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘কে’, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন ইত্যাদি। মিনারেলের মধ্যে রয়েছে ম্যাংগানিজ, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন এবং জিংক, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমানে পলিফেনল ও ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটিতে কোলেস্টেরল এর মাত্রা শূন্য। তাই এ পাতাকে সাধারণ কিছু ভাবার কোনো কারণ নেই।
ধনে পাতায় রয়েছে ১১ প্রকার আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় তেল, ৬ প্রকার এ্যাসিড, এলকোহল, তারপিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফাইবার, ভিটামিন কে, ফসফরাস, প্রোটিন, থায়ামিন, বিরোফ্লাবিন, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ক্লোরিন, জিংক, ক্যালসিয়াম। এতে রয়েছে পলিফেনল ও ফাইটোকেমিকেল যা এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ধনেপাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা অনেক রোগ বশে রাখতেও সাহায্য করে। জেনে নিন ধনেপাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা-
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ধনেপাতা অনেক উপকারী। ধনিয়া শরীরে ইনসুলিন উৎপাদনে অবদান রেখে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। ধনিয়া রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা এলডিএল-এর পরিমাণ কমায়, উপকারী কোলস্টেরলের বা এইচডিএল-এর পরিমাণ বাড়ায়।
জ্বর-সর্দি-কশি কমায়
ধনেপাতা ও বীজে রয়েছে ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন, ফলিক এসিড এবং ভিটামিন সি। এই উপাদানগুলোর সবক’টিই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি এমনকি জ্বরের প্রকোপ কমাতেও সাহায্য করে।
কিডনি পরিষ্কার করে
একজন মানুষকে শারীরিকভাবে বিপন্ন করে তুলতে কিডনির রোগই যথেষ্ট। তাই কিডনি ভালো রাখা চাই। কিডনি ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, লবণ ও চিনি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া, ব্যায়াম ইত্যাদি জরুরি। প্রতিদিন ধনে পাতার শরবত খেলে কিডনি ভাল থাকে। ধনে পাতায় থাকা উপাদান কিডনিতে জমে থাকা ক্ষতিকর লবন ও বিষাক্ত পদার্থ প্রস্রাবের সাথ বের করে দিয়ে কিডনিকে রাখে সবল। কিডনি পরিষ্কার করার ঘরোয়া হলো এক মুঠো ধনেপাতা ও তিন গ্লাস পানি। একটি প্যানের মধ্যে পানি নিয়ে এর মধ্যে এক মুঠো ধনেপাতা নিয়ে সিদ্ধ করুন। অন্তত ১০ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে। এবার চুলা থেকে পানীয়টি নামিয়ে ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য একপাশে রেখে দিন। এবার পানীয়টি ছেঁকে পান করুন। প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে প্রতিদিন অন্তত এক কাপ এই পানীয়টি পান করুন।
ব্যাকটেরিয়া নিরাময় করে
ব্যাকটেরিয়ার কারণে কলেরা, টাইফয়েড, ডায়রিয়া ও আমাশয় ইত্যাদি নানান খাদ্যবাহিত ও পানিবাহিত রোগের সংক্রমণ ঘটে। ধনেপাতা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক ক্ষমতা এসব রোগ থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
শীতকালে ভালো-মন্দ যেমন খাচ্ছেন, তেমন নিয়ম করে ধনেপাতাও খান। বাড়তি ওজনের জন্য রাতের ঘুম উড়বে না। বিপাক হারও ভালো হবে।
হার্টের জন্য ভালো
ধনেপাতা খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
হজম বৃদ্ধি করে
ধনিয়া ও তাজা ধনেপাতা হজমের উপকারী। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুণ লিভার আর অন্ত্রের কাজ সঠিকভাবে করতে সাহায্য করে। হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম ও রস তৈরিতে ধনিয়া ও পাতা কার্যকর।
ভিটামিন সি এর উৎস
ধনেপাতায় অনেক দরকারি ভিটামিন যেমন ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন আমাদের খাবারে যে পরিমাণ ভিটামিন সি থাকা দরকার তার প্রায় ৩০ ভাগই আমরা পেতে পারি ধনেপাতা আর বীজ থেকে।
যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে
যৌবন ধরে রাখতে ধনে পাতার জুড়ি মেলা ভার। ধনেপাতা বেটে সেটার সঙ্গে মধু মিশিয়ে যদি খান তাতে বাড়বে যৌনশক্তি।
ক্যানসার প্রতিরোধী
ধনেপাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে আছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সিসহ প্রয়োজনীয় সব উপাদান, যা ক্যানসার কোষ প্রতিরোধে সক্ষম।
রক্তস্বল্পতা দূর করে
ধনেপাতায় আছে আয়রন। এই উপাদানটি রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। তবে রান্না না করে ভর্তা কিংবা সালাদ খেলেই বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধনেপাতা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিতে সক্ষম আর ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
বিষাক্ত ধাতুর ক্রিয়া প্রতিরোধে
সিসা, আর্সেনিক, অ্যালুমিনিয়াম, পারদের মতো বিষাক্ত ধাতু যদি কোনোভাবে মানুষের শরীরে জমে তবে তা নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে। আলঝেইমার, স্মৃতি ও দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, কার্ডিওভাসকুলার ও নিউরনের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার মতো বিভিন্ন মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
মন চাঙা করে তোলে
শুধু খাবারের স্বাদ নয়, ধনেপাতার গন্ধে মন-মেজাজ একেবারে ফুরফুরে হয়ে ওঠে। বিভিন্ন গবেষণায় তেমনই প্রমাণ মিলেছে।
ত্বকের যত্ন নেয়
রক্তে জমা দূষিত পদার্থ দূর করতে পারে ধনেপাতা। রক্ত পরিষ্কার হলে তার প্রভাবে ত্বক একেবারে ঝকঝকে হয়ে উঠবে।
ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক
ধনেপাতায় বিভিন্ন ধরনের ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসের অসাধারণ এক সমন্বয় থাকায় নার্ভকে শীতল রাখতে সক্ষম। তাই ঘুম হয় সহজে। যাদের নির্ঘুম রাত কাটে, তারা খেতে পারেন ধনেপাতা।

মন্তব্য করুন