সরকার মামলা করে শ্রমিকদের নামে মিথ্যা প্রচার করছে: ড. ইউনূস
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকার মামলা করলেও, শ্রমিকদের নাম করে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সামনে অনেক কাজ বাকি। এ সব নিয়ে বিচলিত নন তিনি।
রবিবার সকালে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সাজার বিরুদ্ধে শ্রম অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে স্থায়ী জামিন পাওয়ার পর সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
এসময় ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আশা, আপিলে বাতিল হবে নিম্ন আদালতের সাজা। তিনি বলেন, আজকের আদালত আমাদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে এবং নিম্ন আদালতের সম্পূর্ণ রায়কে সাসপেন্ড করেছে। একইসঙ্গে আগামী ৩ মার্চ নিম্ন আদালতের সেসব নথি আনার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছে। আর আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে আমরা আদালতে জামিন প্রার্থনা এবং আপিল করেছি। রাষ্ট্রীয় সর্বমহলে এমনকি বিদেশিদের কাছেও বলা হচ্ছে, এ মামলা সরকার করে নাই। এ মামলা শ্রমিক করেছে। কিন্তু ঘটনাটা সঠিক নয়। সরকার তার প্রতিষ্ঠান কলকারখানা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ মামলা করেছে। শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করা হয় নাই, বর্ধিত ছুটি দেওয়া হয় নাই এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশ দেওয়া হয়নি- এমন তথ্য দিয়ে এ মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান এ মামলা করেছে। এ মামলায় যে রায় হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। ৩০৭ ধারা অনুযায়ী এ মামলায় শাস্তি দেওয়ার বিধান নেই। কারণ লেবার আইনের ২৩৬ ধারা অনুযায়ীই এ মামলার শাস্তির বিধান আছে।
এ ধারাতেই বলা আছে, যদি বকেয়া থাকে তাহলে সেটা পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। এটা না করলে ১ লাখ টাকা জরিমানা, প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে। পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি আইন অনুযায়ী এটা আদায় করা হবে। কিন্তু সেসব ভায়োলেট করে বিশ্বের কাছে নন্দিত নোবেলজয়ী ড. ইউনূস ও তার বন্ধুদের সামাজিক ব্যবসা ধ্বংস করার জন্য এ সাজা দেওয়া হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে খুরশিদ আলম খানকে আইনজীবী নিয়োগ করেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। তিনি জানান, অনুমতি ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সে আবেদন করা হবে আদালতে।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সাজা বিরুদ্ধে রবিবার সকাল ১০টায় শ্রম অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করার পাশাপাশি জামিন প্রার্থনা করেন ড. ইউনূসসহ চার জন। পরে বিচারক মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের স্থায়ী জামিন দেন। এসময় আপিলে ড. ইউনূসের পক্ষে ২৫টি আইনি যুক্তি তুলে ধরা হয়।
এর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত ১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার আসামিকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। আপিল করার শর্তে তাদের ১ মাসের জামিন দেওয়া হয়। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করার অভিযোগ আনা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২৮জানুয়ারি/এসএম)