বাণিজ্যমেলার বাইরেও মেলা, ক্রেতা দর্শনার্থীর ভিড়ে উৎসবমুখর পূর্বাচল

শাকিল আহম্মেদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
| আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:০২ | প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৩৬

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নতুন শহর প্রকল্পের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে গত ৩ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এবার ২৮ তম আসরকে ঘিরে মেলার আশপাশ এমনকি পুরো পূর্বাচলে দেখা গেছে উৎসবমুখর পরিবেশ। মেলায় আসা লোকজন কেনাকাটা ছাড়াও পূর্বাচলের ৩শ ফুট সড়ক, লেক ও আশপাশের পার্ক ঘুরে দেখছেন। মেলার ১৩তম দিন শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকায় সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়।

তবে মূল বাণিজ্য মেলার বাহিরে মিলেছে আরও একটি মেলা। যেখানে রয়েছে খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে এ আয়োজন করা হয়েছে। মেলার ভেতরে থাকা হোটেলগুলোর চাইতে এখানকার খাবার হোটেলগুলোতে দাম কম রাখা হচ্ছে। ফলে দর্শনার্থীদের একটা অংশ পরিবেশ বিবেচনা না করে খাবার খাচ্ছেন মেলার বাইরে বসানো এসব হোটেলে।

সরেজমিন বাণিজ্যমেলা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মেলায় প্রবেশের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশে বসানো হয়েছে শতাধিক খাবার হোটেল। পাশাপাশি খোলা খাবার বিক্রির জন্য রয়েছে ভাসমান হকার। এসব দোকানে খাবার যে দামে বিক্রি হচ্ছে ওই সব খাবার মূল মেলার স্টলে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ দাম রাখা হচ্ছে।

কথা হয় মেলায় ঘুরতে আসা নরসিংদীর গণমাধ্যমকর্মী আকরাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলার ভেতরে যে রুটির দাম ৬০ টাকা একই রুটির দাম বাহিরের দোকানে ৩০ টাকা, মুরগি চাপ ভেতরে ২৫০ টাকা আর বাহিরে ১শ থেকে দেড়শ টাকা, মেলার ভেতরে গরুর মাংস প্রতি প্লেট ৩শ টাকা করে নিলেও পরিমাণে কম দেওয়া হচ্ছে। আর বাহিরে ২শ টাকা নিলেও পরিমাণে পর্যাপ্ত দেওয়া হয়। মুরগি ঝাল ফ্রাই মেলার ভেতরে রাখা হয় ২৫০ টাকা, বাহিরে এর দাম ১২০ টাকা। এভাবে সকল খাবারের দাম বেশি রাখার পাশাপাশি অন্যান্য জিনিসপত্রও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ভাসমান এক খাবার হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, মেলার বাহিরে হোটেল দিয়েছি তাতেও অনেক খরচ হয়েছে। তার মতে, ডেকোরেটর খরচের পাশাপাশি পুলিশের লোকজনকে দৈনিক ১০ হাজার টাকা করে দিতে হয়। একই সঙ্গে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে মেলার ভেতরের চেয়ে বাহিরে দাম কম রাখতে হচ্ছে। তবে এতে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

মেলার ভেতরে থাকা ঢাকা হাজী বিরিয়ানির পরিচালক আলম মিয়া জানান, মেলায় স্টল পেতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় তা ওঠাতে দাম বাড়ানো ছাড়া গতি নাই। কিন্তু রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো আমাদের মূল্য বেঁধে দিয়েছেন। আবার ট্যাক্স দিতে হয়, কর্মচারী খরচ, আরও নানা খরচ দেওয়ার পর দাম যা রাখি তাও কম। আর বাহিরে যারা দোকান দেয়, তারা কিছু লোককে ম্যানেজ করে ব্যবসা করে। সেখানে তাদের অতিরিক্ত খরচ নাই। তাই তারা কম দামে খাবার বিক্রি করতে পারে।

তবে বিক্রিও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে মেলা জমাতে নিত্য পণ্যের দোকানে ছাড় দেওয়া শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। তবে বিদেশি পণ্যের দাম নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের।

মেলার বাহিরে অবস্থান নেওয়া দোকান সম্পর্কে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমির খসরু বলেন, মেলার বাহিরে দোকান বসাতে দেওয়া হয়নি। একটু দূরত্বেই কেউ কেউ প্লট মালিকদের ম্যানেজ করে দোকান বসিয়েছেন। এতে পুলিশের কোনো হাত নেই। আর হকাররা নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা ভাসমান দোকানে কিছু বিক্রি করছেন। তা মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। তবে খাবারের দাম আর মান দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়।

এদিকে মেলায় আসা লোকজন মেলায় প্রবেশের পূর্বে কিংবা বাসায় ফেরার পথে মেলা সংলগ্ন তিনটি পার্ক, ৩শ ফুট সড়ক ও আশপাশের বিনোদন এলাকা ঘুরে দেখছেন।

জানা যায়, এবারের মেলায় সর্বমোট ৩৩০টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন অংশ নিয়েছে। যার মধ্যে বিদেশি স্টল রয়েছে ১৩টি। এছাড়া স্থানীয় উদ্যোক্তারাও তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির স্টল সাজাচ্ছেন।

তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে শুরুর দিকে দর্শনার্থী কিছুটা কম ছিল। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাড়তে থাকে ক্রেতা ও দর্শনার্থী। বেড়েছে বিক্রিও। সব মিলিয়ে এবারের মেলায় ৫শ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ পাবে বলে আশা করছে ইপিবি।

উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূর্বাচলের স্থায়ী ভ্যানুতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেছেন।

(ঢাকা টাইমস/০২ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :