মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির কৌশল, জেনে নিন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৬

মস্তিষ্ক মানুষের দেহের অন্যতম অপরিহার্য অঙ্গ। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক না থাকলে মানুষ যেন জড় পদার্থের সমান। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়লে এর পরিণাম হতে পারে ভয়ংকর। স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন একে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম বলে। নানা কারণে স্মৃতিভ্রংশ রোগ হতে পারে। যেমন: অ্যালঝেইমার ডিজিজ, থাইরয়েড ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা ইত্যাদি। মস্তিষ্ক ভাল থাকলে স্মৃতিশক্তিও তীক্ষ্ণ হবে।

বিজ্ঞান বলছে, ব্রেন তৈরি হয়েছে অসংখ্য কোষের সমন্বয়ে। এই কোষকলা একসঙ্গে যুক্ত হয়ে অবাক করা কাজ প্রতিদিন করে চলেছে। তবে মুশকিলটা অন্য জায়গায়। আমাদের অহেতুক চাপ নেওয়ার অভ্যাস কিন্তু মস্তিষ্কের কোষকে করে দেয় দুর্বল। মস্তিষ্ক এবং স্মৃতিশক্তি ওতোপ্রতভাবে জড়িত। সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে হলে আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঙ্গে মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের ২০% শর্করা এবং শক্তি আপনার মস্তিষ্কে যায়। মস্তিষ্কের কাজের পুরোটাই নির্ভর করে তার গ্লুকোজের মাত্রার ওপর। শরীরে গ্লুকোজের মাত্রায় হেরফের হলে আপনার মনেও দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। যেসব খাবার আপনারা খুব পছন্দ সেগুলো খেলে আপনার মস্তিষ্কের 'রিওয়ার্ড এরিয়ায়' ডোপামিন রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আপনার মনে খুশি খুশি ভাব হয়। কিন্তু মস্তিষ্কের শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি আপনার পেটের দিকেও নজর রাখতে হবে।

গবেষণা বলছে, আমাদের খাদ্যাভ্যাসও এর জন্য কিছুটা দায়ী। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে খাদ্যাভ্যাস বেশ ভালো সুফল আনে। দৈনন্দিন খাদ্যাভাসের সঙ্গে স্মৃতিশক্তির দারুণ একটা সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জেনে নিন মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির কৌশল।

সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল

মানুষের মাথার প্রায় বেশিরভাগ অংশই ফ্যাট। এই ফ্যাট ভালো পরিমাণে থাকে সামুদ্রিক খাবারে। মাছের তেল ব্রেন সেল গঠন করে এবং মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায় ও মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। এছাড়া, মাছের তেলে ওমেগা-৩ পাওয়া যায়, যা ব্রেনের জন্য উপকারী। পমফ্রেট মাছ থেকে শুরু করে সমুদ্রের অন্যান্য মাছ খেতে পারেন। এছাড়া ইলিশ, চিংড়িও ভালো। তাই এই মাছও খেতে পারেন।

ডার্ক চকলেট

ডার্ক চকলেটে থাকে ‘ফ্লাভানয়েড যা একটি শক্তিশালী ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদান। কোনো কিছু শেখা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ানো, মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ বাড়ানো, নিউরনকে সুরক্ষিত সবকিছুর পেছনেই ডার্ক চকলেটের উপকারী ভূমিকা আছে। ৭০ শতাংশ কোকো আছে এমন ডার্ক চকলেট বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ মেগান ওয়াং, আরডি।

ডালিমের রস

ডালিমের রস পান করলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। কারণ ডালিমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া ডালিম খেলে ব্লাড সার্কুলেশন স্বাভাবিক থাকে, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ করে। দুপুরে খাবারের আগে বা পরে ডালিমের শরবত খেলে মস্তিষ্ক সুস্থও স্বাভাবিক থাকে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ে।

গ্রিন টি, চা ও কফি

গ্রিন টি, চা ও কফি আপনাকে সজাগ থাকতে সাহায্য করে, আলঝেইমার্স রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের দক্ষতার উন্নতি ঘটায়। গবেষণায় বলা হয়, নিয়মিত কফি পান স্মৃতিভ্রম রোধ করে। কফি ‘সাইকোস্টিমুলেন্ট হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ নতুন তথ্য সামাল দেওয়ার গতি বাড়ায়। আর এই প্রভাব কফি পান করা শেষ হওয়ার পরও বজায় থাকে। এছাড়াও মস্তিষ্কে তৈরি হওয়া বিষাক্ত উপাদান অপসারণে ‘ক্যাফেইনয়ের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

বাদাম

বাদাম মস্তিষ্কের জন্য খুব ভালো খাবার। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-ই, মোনোস্যাচুরেটেড চর্বি, এবং উপকারী মিনারেল থাকে। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। খাদ্য তালিকায় বাদাম রাখলে মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধি সাধন করবে।

পানি

মস্তিষ্কের ৭৫ শতাংশই পানি। তাই শরীরে পানির অভাব থাকলে তা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমাবে সেটাই স্বাভাবিক। পানির অভাবে মনযোগ কমে, সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হয় এবং স্বল্প সময়ের জন্য স্মৃতিশক্তির কমার লক্ষণ দেখা দেয়।

কলা

কলাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি, যা নার্ভ ইমপালস্ ট্রান্সমিশনে সাহায্য করে এবং ব্রেনকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

কলিজা

মাংসের কলিজায় থাকে আয়রন ও ভিটামিন বি, যা মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। এছাড়াও বিভিন্ন শাকসবজি, পালং শাক, বিভিন্ন ফল, সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, তেলের বীজ, বিনস্ ইত্যাদি মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।

ডিম

কোলিন নামক উপাদান থাকে ডিমে যা স্নায়ুকোষের ‘ট্রান্সমিশনয়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও এই উপাদান স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের গঠন বজায় রাখতে কাজ করে। মনযোগ বাড়াতেও এর ভূমিকা আছে।

মিষ্টি কুমড়ার বীজ

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে জিঙ্ক বেশ জরুরি একটি খনিজ উপাদান। মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর জিঙ্ক এবং আরও কিছু উপকারী খনিজ উপাদান। যা মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

অপরিশোধিত শস্যজাত খাবার

অপরিশোধিত শস্যজাত খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, যাতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। এই উপকারী উপাদানসমূহ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, ওটস ইত্যাদি মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাবার।

গাজর

গাজর চোখের জন্য ভালো এটা আমরা সবাই জানি, কিন্তু এটি মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী তা অনেকেই জানি না। গাজরে উচ্চমাত্রার লুটিওলিন আছে, যা বয়স সংক্রান্ত স্মৃতিক্ষয় এবং মস্তিষ্কের ইনফ্লামেশন কমাতে পারে।

পালংশাক

পালংশাক মস্তিষ্কের জন্য দারুণ উপকারী। মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে পালংশাক। এতে আছে বিটা ক্যারটিন, লুটেইন ও ফোলেট, যা ভুলে যাওয়ার রোগ কমায়।

সাইট্রাস ফল

সাইট্রাস ফল যেমন লেবু বা কমলাজাতীয় খাবার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা যায়, যেসব লোক প্রতিদিন সাইট্রাস ফল খান, তাদের মস্তিষ্ক তীক্ষ্ণ হয়। তাই এ ধরনের সাইট্রাস ফল আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন।

যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন

অ্যালকোহলজাতীয় পানীয়: মদ্যপান যাঁরা করেন, তাঁরা জানেন, সামান্য পরিমাণ মদেরও প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের উপর। কোনও ভাল খাবারের সঙ্গে প্রিয় সুরা অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু সেই মদ যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়, তা রীতিমতো কঠিন প্রভাব ফেলতে পারে মস্তিষ্কের উপর। বুদ্ধি লোপ তো পায়ই, সঙ্গে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়, ভাবনা ওলট-পালট হয়ে যায়। এমনকি, দৃষ্টিশক্তিও কমে।

নরম পানীয়: অতিরিক্ত চিনি দেওয়া যে কোনও খাবার মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। তার মধ্যেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হল চিনিযুক্ত সব নরম পানীয়, এবং বোতলবন্দি ফলের রস।

ফ্যাটযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত ফ্যাট আছে, এমন খাবার খেলে শুধু যে ওজন বাড়ে তা নয়, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও কমতে থাকে। সেই সঙ্গে কমতে থাকে বুদ্ধির প্রখরতাও। বিশেষ করে পাঁঠার মাংস খেলে এমন আশঙ্কা থেকে যায়। তাই চিকিৎসকেরা রোজ রোজ মাংস বা ফ্যাট আছে, এমন খাবার খেতে বারণ করেন।

চিনি: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম চিনি খায় তাদের তুলনায়, যারা নিয়মিত অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি খায় তাদের স্মৃতিশক্তি খারাপ এবং মস্তিষ্কের ঘনত্বের পরিমাণ কমে যায়। সুতরাং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে চিনি কম খেতে হবে।

এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে। পাশাপাশি মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য ব্যায়াম, সঠিক নিয়মে ঘুমানো, বিশ্রামও দরকার। আবার মানসিক স্ট্রেস কমালে মস্তিষ্ক ভালো থাকে। স্মৃতিশক্তি নষ্টের বড় কারণ হলো মানসিক স্ট্রেস।

বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিদিন ব্যায়াম করলে মগজে নতুন কোষের জন্ম হয়। ব্যায়াম করার ফলে এই হিপোক্যাম্পাস উত্তেজিত ও স্ফীত হয়ে উঠে এবং স্মৃতি ধরে রাখতে সহায়তা করে। আবার প্রতিনিয়ত কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ সরবরাহ হয়, যা কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

(ঢাকাটাইমস/৪ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :