মনে আছে প্রতারক আবু হানিফ তুষারের কথা? তিনি এখন কোথায়? তার সেই অস্ত্র নিয়ে কী তথ্য মিলল?

আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়া। প্রতারণার মাধ্যমে বহু মানুষকে সর্বশান্ত করেছেন। নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মনোনয়ন বাণিজ্যে নামেন তিনি। কৌশল হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে যাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা একদম ক্ষীণ তাদের টার্গেট করেন। এরপর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে ৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা দাবি করেন। দামি হোটেলে সাক্ষাৎ করতে যেতেন দামি গাড়ি নিয়ে। সেখানেই বসে হতো চুক্তি। মনোনয়ন প্রত্যাশী এমন ১০ থেকে ১২ জনের সঙ্গে প্রতারক হানিফ মিয়ার যোগাযোগের প্রমাণ পায় র্যাব। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করে বাহিনীটি।
১৭ অক্টোবর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে র্যাব হানিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। এসময় একটি বিদেশি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি ও একটি দামি গাড়ি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে ভাটারা থানায় মামলা করে।
প্রতারক হানিফ মিয়া এখন কোথায়? তার বিরুদ্ধে হওয়া অস্ত্র মামলার তদন্তের অগ্রগতি কতদূর- এসব নিয়ে ঢাকা টাইমস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রিয়াদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, “গত সপ্তাহে আলোচিত হানিফ মিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে হওয়া মামলার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। নিজেকে বড় নেতা বোঝাতে সঙ্গে অস্ত্র রাখতেন হানিফ। তবে সেটি ছিল অবৈধ। অস্ত্রটি হানিফ গ্রেপ্তার হওয়ার সময় তার গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।”
হানিফ মিয়ার অবস্থান সম্পর্কে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “তিনি এখনো কারাগারে আছেন; জামিন পাননি।”
পুলিশ বলছে, বহু মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছেন আবু হানিফ তুষার। নিজেকে সরকারপ্রধানের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে তিনি এসব অপকর্ম করেছেন। তবে কেউ সরাসরি অভিযোগ বা মামলা না করায় তার প্রতারণার বিষয় আড়ালেই থেকে গেল। পুলিশ শুধু অস্ত্র আইনে হওয়া মামলার তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিয়েছে।
জানা গেছে, আবু হানিফের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায়। ওই এলাকা থেকে দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এর আগেই গ্রেপ্তার হন।
যেভাবে উত্থান আবু হানিফের
একসময় মোটর মেকানিকের ব্যবসা করা আবু হানিফ তুষার কসবার স্থানীয় একটি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ঢাকায় চলে আসেন। ওঠেন ফার্মগেট নাখালপাড়া এলাকায়। মাধ্যমিকে স্বনামধন্য একটি স্কুলে ভর্তি হন৷ ২০০২ সালে এইচএসসি পাসের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। তবে অর্থের অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। সেসময় হানিফ মিয়া ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার এপিএস হন। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে আরেকটি বিয়ে করেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি হানিফকে। নাম পরিবর্তন করে হন আবু হানিফ তুষার। পরিচয় দিতে থাকেন প্রধানমন্ত্রী পরিবারের আত্মীয় বলে। বিভিন্ন উপায়ে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ। অল্পদিনেই বনে যান কোটিপতি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন হানিফ মিয়া দলটির একজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে যিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক। দ্বন্দ্বের কারণে দুইবার অস্ত্র এবং একবার মাদকসহ গ্রেপ্তার হন হানিফ মিয়া। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে হানিফ মিয়া সেই সুযোগ কাজে লাগান। ‘ তিনি (বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা না করলেও) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, একারণে তৎকালীন বিএনপি সরকার তাকে একাধিকবার কারাগারে পাঠিয়েছে’ -এমন প্রচার চালিয়ে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিতে থাকেন আওয়ামী লীগ সরকার থেকে।
যত সম্পদ গড়েছেন আবু হানিফ
প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন প্রতারক আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়া। তার এসব সম্পদের মধ্যে আছে সড়কে চলাচল করা বাস, জমি, ফ্ল্যাট, ব্যাক্তিগত প্রাইভেট কারসহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
প্রতারণা করে আবু হানিফ কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ‘তুষার পরিবহণ’ নামে একটি বাস সার্ভিসের ব্যবসা করতেন, যেখানে সাতটি বাস রয়েছে। এসব বাস ঢাকা-রংপুর রুটে চলাচল করে। এছাড়া তিনি একটি পত্রিকার মালিকানায় ছিলেন।
মনোনয়ন বাণিজ্য
প্রতারক আবু হানিফ এক সময়ে তুষার মনোনয়ন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তিনি একাদশ সংসদের বেশ কয়েকজন এমপিকে পরিবর্তন করে নতুনদের মনোনয়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাছাড়া একাধিক মন্ত্রীর আসনে অন্যদের মনোনয়ন পাইয়ে দেবেন বলে চুক্তিবদ্ধও হয়েছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/০৪ফেব্রুয়ারি/এসএস/এফএ)

মন্তব্য করুন