২০১৭ সাল থেকে জাবি ক্যাম্পাসে মাদক বিক্রি করে আসছিলেন মামুন: র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:২২

প্রভাবশালী সিনিয়র ছাত্রদের সহায়তায় ২০১৭ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদক বিক্রি করে আসছিলেন মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন। শুধু তাই নয়, সিনিয়র ওই শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী সুন্দরী নারীদের টার্গেট এবং ধর্ষণ এর মতো অপরাধেও লিপ্ত ছিলেন মামুন। সবশেষ তার পরিকল্পনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরুমের একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এলিট ফোর্সটির আইন গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা জানান।

এরআগে বুধবার রাতে ধর্ষণকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা এবং ধর্ষণের অন্যতম সহায়তাকারী মো. মুরাদকে নওগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

খন্দকার মঈন বলেন, কিছুদিন আগে মামুন আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নাম্বার রুমে স্বামীকে আটকে রেখে এক নারীকে জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষণ করে। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা জনকে আটক করতে সক্ষম হয়। গণমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ঘটনাটা আলোড়ন সৃষ্টি করলে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মামুন সহযোগী মুরাদ আত্মগোপনে চলে যায়।

মঈন বলেন, এই ঘটনার পর ভিকটিমের স্বামী মামলা করলে র‌্যাব মামলার প্রধান দুই পলাতক আসামিকে আটক করে।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মূল আসামি মামুন শুরুতে গার্মেন্টস পেশায় নিয়োজিত থাকলেও তার মূল ব্যবসা ছিল মাদক ব্যবসা। আর সেই ব্যবসার মূল ক্ষেত্র ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রেপ্তারকৃত মামুন প্রতি মাসে থেকে হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে আসতো কক্সবাজার থেকে। এই ইয়াবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বর্তমান শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করতো সে।

মঈন জানান, মামুনের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারকৃতরা অনেকদিন থেকেই মাদক ব্যবসা করে আসছে। ভিকটিমের বাসায় সাবলেট হিসেবে বসবাস করতেন মামুন। ভিকটিক তার স্বামীর সঙ্গে মামুনের বছরের অধিক সময় ধরে মাদক ব্যবসার সম্পর্ক রয়েছে। তারা একসঙ্গেই একই বাসায় থাকতেন। ভিকটিমের স্বামী মামুনকে মাদক ব্যবসায় সাহায্য করতেন।

র‌্যাব কমান্ডার বলেন, প্রতি মাসে থেকে বার এভাবে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে আসতো মামুন। জুতার ভিতরে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাংকে করে প্রতিবার থেকে আড়াই হাজার পিস ইয়াবা আনতো সে। এরই ধারাবাহিকতায় এই মাসের তারিখেও হাজার ৭০০ পিস ইয়াবা সে নিয়ে আসে ক্যাম্পাসে। কিন্তু বাসায় এতো মাদক রাখা নিরাপদ না ভেবে মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১৭ নাম্বার হলে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।

পরবর্তীতে মামুন ভিকটিমের স্বামীকে বলে, ভিকটিমকে মামুনের জামা কাপড় নিয়ে হলে আসতে। তখন ভিকটিম মামুনের জামা কাপড় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আসেন। এরপরেই মামুন মোস্তাফিজ ভিকটিককে নিয়ে কৌশলে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নির্জন এলাকায় ভিতরে নিয়ে যায় এবং গণধর্ষণ করে।

মঈন বলেন, এরপরে তারা রুমে গিয়ে ভিকটিমের স্বামীকেও ভয়ভীতি দেখায়৷ এই ঘটনার সূত্র ধরে তাদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। সিসিটিভি ফুটেজে ভিকটিমের স্বামীকে ভিকটিমের সামনে মারধর করতেও দেখা যায়। এরপরই তারা থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব মামুন তার সহযোগী মুরাদকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মামুনের বিরুদ্ধে কতটি মামলা কী ধরনের মামলা রয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, মামুন মাদক মামলায় বারের অধিক কারাভোগ করেছে। তার নামে ৮টির অধিক মাদক মামলা রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরের বটতলাকে কেন্দ্র করে তিনি তার লোকজন মাদকের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি করেছেন। তবে নারী নির্যাতনের মামলা এটিই প্রথম।

মঈন বলেন, মামলা প্রথম হলেও মামুন এই ধরনের অপকর্ম আগেও করেছে বলে স্বীকার করেছে। সে নিজেও আগে এমন অনেক নির্যাতন ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনকি অনেক সিনিয়র শিক্ষার্থীদের জন্য মাদক ব্যবসার আড়ালে নারী ধর্ষণের ঘটনায় তার সম্পর্ক রয়েছে। ভিকটিমদের ভয়ভীতি দেখানোর কারণে সমাজের কাছে লজ্জায় তা অনেকেই প্রকাশ করেনি। এমন তথ্যও আমরা পেয়েছি।

তিনি বলেন, শুধু মামুন নয়, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আরও অনেকেই এমন অনৈতিক মাদকের মতো অপকর্ম নিয়মিত করছেন। আমরা বেশ কিছু নাম পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই ৩১৭ নাম্বার রুমকে তারা গেস্ট রুম হিসেবে ব্যবহার করে এসব অপকর্ম করে আসছে বলেও জানা যায়।

মঈন বলেন, এটা বেশ অ্যালার্মিং। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন ঘটনা খুবই নেতিবাচক। শুধু জাহাঙ্গীরনগর নয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আসলে কেমন তা নিয়েও এখন ভাববার বিষয়। মামুনের মতো লোকজন নিজেরা অপকর্ম করার জন্য এই ধরনের কাজ করছেন। আমাদের অভিভাবক, শিক্ষক সমাজ গণমাধ্যমদের এই বিষয়ে কঠোর ভূমিকা নেয়া উচিত।

(ঢাকাটাইমস/৮ফেব্রুয়ারি/এলএম/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

শিল্পী পরিচয়ে ভয়ংকর মাদক কারবারে গায়ক রেবেল, কাজ করতেন ‘ভাইজানের’ হয়ে

২৮ অক্টোবর অছিম পরিবহনে ছাত্রদলনেতার আগুনে প্রাণ যায় নাঈমের, যেভাবে রহস্য উদঘাটন

কেরাণীগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার 

সোনালী লাইফের বহিষ্কৃত সিইও মীর রাশেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

কোস্ট গার্ডের অভিযানে ৪৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার

চাকরির পরীক্ষার আগেই মিলত উত্তর, চুক্তি ১২-১৪ লাখ টাকায়: ডিবি

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার, বিপুল কনটেন্ট জব্দ

এফডিসিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা: ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি

স্ত্রীসহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ডিবিতে যা বলেছেন কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :