ফোনের নেটওয়ার্ক ডাউনের যন্ত্র বেচতেন তারা, ব্যবহার হতো দুর্গম এলাকায় অপরাধে

মোবাইলের স্বাভাবিক নেটওয়ার্কের সক্ষমতা নষ্ট করতে ব্যবহার হতো অবৈধ নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার। আর এসব যন্ত্র রাজধানী ঢাকা থেকে কিনে দুর্গম এলাকায় বসিয়ে অপরাধ কার্যক্রম চালাচ্ছে অপরাধীরা। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। মঙ্গলবার রাতে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বুধবার দুপুরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, স্বাভাবিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা প্রভাবিত করতে অপরাধীরা উচ্চমূল্যে এসব অবৈধ যন্ত্রপাতি কিনে দুর্গম এলাকায় বসে অপরাধ করে আসছে। রাজধানীর নিউ মার্কেটে অভিযান চালিয়ে অবৈধ নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার বিক্রি চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এগুলো বিক্রি করে আসছিল।
গ্রেপ্তাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. জাহাঙ্গীর আলম, ফয়সাল হোসেন, আশিক শেখ, মো. শরিফুল ও মো. রাসেল।
এদিকে র্যাব জানিয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারের সময় ১২টি নেটওয়ার্ক বুস্টার, ১৬টি বুস্টার আউটডোর এন্টিনা, তিনটি রেডিও ট্রান্সমিটার, ১২টি বুস্টার ইনডোর এন্টিনা, তিনটি বুস্টার ক্যাবল, ১৮টি কনভার্টার, ১৫টি চার্জার, ১০টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিমকার্ড, তিনটি হাত ঘড়ি, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, দু'টি এনআইডি কার্ড, ৩৪টি এটিএম কার্ড ও নগদ ৯ হাজার ৫৩০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে বিজ্ঞাপন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার বিক্রি করে আসছিল। তারা অবৈধভাবে নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বিক্রি করত।
‘রেডিও ট্রান্সমিটার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার টুজি, থ্রিজি এবং ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্কের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। এই কারণে বিভিন্ন অপরাধীরা অপরাধ করতে উচ্চমূল্যে এসব অবৈধ যন্ত্রপাতি কিনে দুর্গম এলাকায় বসে অপরাধ করে আসছে। এসব যন্ত্র ব্যবহার করে অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়ানোর চেষ্টা করে।’
তিনি জানান, ফোর-জি রাউটার আমদানির নামে এসব যন্ত্রাংশগুলো দেশের বাজারে নিয়ে আসা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন চোরাই পথের মাধ্যমেও তারা এসব যন্ত্রাংশ আমদানি করে থাকে। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে এসব যন্ত্র উচ্চমূল্যে বিভিন্ন অপরাধী চক্রের কাছে বিক্রি করত। এই চক্রটি বিগত পাঁচ বছরে অজস্র রেডিও ট্রান্সমিটার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার বিক্রি করেছে। তারা প্রতি সেট এন্টেনা ২০ হাজার টাকা এবং প্রতি সেট রেডিও ট্রান্সমিটার ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করত।
র্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, বিটিআরসির অনুমোদন ব্যতীত এসব যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ কেনা-বেচা দণ্ডনীয় অপরাধ। চক্রটি পাঁচ বছর ধরে অবৈধভাবে নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার বিক্রি করছে। চক্রের মূলহোতা জাহাঙ্গীর ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। এরপর কিছুদিন একটি মোবাইল কোম্পানির সেলসম্যান হিসেবে চাকরি করে। ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে সিসি ক্যামেরা মেরামত ও ইনস্টল করার কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে নিজেই নিউমার্কেট এলাকায় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ব্যবসা শুরু করে। এরপর আমদানি নিষিদ্ধ এসব অবৈধ বুস্টার, ট্রান্সমিটার ব্যবসা শুরু করে। তার সহযোগী আশিক, শরিফুল ও রাসেল সকলেই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের অভিজ্ঞ হওয়ায় জাহাঙ্গীর তার ব্যবসাকে প্রসারিত করার জন্য তাদেরকেও দলে নেয়। তারা টেকশপ বিডি নামে ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ বিক্রি করে আসছিল।
এসকল অবৈধ ডিভাইস বিক্রয়কারী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/এসএস/ইএস

মন্তব্য করুন