রাখাইনের রাজধানী ছাড়ছে জান্তা সেনারা, অভিযানের প্রস্তুতি আরাকান আর্মির

গোপনে রাখাইনের রাজধানী শহর সিতওয়ে ছাড়ছে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের জান্তা বাহিনী। রাখাইনের রাজ্যের প্রধান সামরিক জান্তা ঘাঁটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে শহর ছেড়েছে বলে আরাকান আর্মির (এএ) বরাতে জানিয়েছে থাইল্যান্ডে নির্বাসিত বার্মিজ সংবাদ সংস্থা ইরাবতি।
বুধবার ইরাবতির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মি রাথেডং শহরে আক্রমণ করছে এবং রাজ্যের রাজধানী সিত্তওয়েতে জান্তার আঞ্চলিক অপারেশন কমান্ডকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে ইরাবতি জানায়, অপারেশন কমান্ডের অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা ইতোমধ্যে শহর ছেড়ে চলে গেছে। এছাড়া আরাকান আর্মির সৈন্যদের অগ্রগতি ব্যাহত করতে ইয়াঙ্গুন-সিত্তওয়ে সড়কের একটি সেতু উড়িয়ে দিয়েছে। সিত্তওয়ের অনেক বাসিন্দাও অন্যত্র নিরাপদে চলে গেছে।
পড়ুন: মিয়ানমারে সামরিক শাসনের ৩ বছর, ভবিষ্যৎ কী?
এছাড়া রাজ্যের এই কেন্দ্রীয় ঘাঁটির সাধারণ সৈন্যদেরও অনেকে রাজধানী শহর ছেড়ে ২০০ কিলোমিটার দূরে থান্ডওয়েতে অবস্থান নিয়েছে।
উত্তর রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ শহর ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এএ। এরমধ্যে কালাদান নদীর তীরবর্তী কিয়াউকতাও, মিনবিয়া এবং ম্রাউক-উ এবং দক্ষিণ চিন রাজ্যের পালেতোয়া শহর রয়েছে। উত্তর রাখাইনে এখন শুধু বুথিডং ও রাজধানী সিতওয়ে শহরে জান্তা অবস্থান রয়েছে। নিজেদের শেষ অবস্থান রক্ষার চূড়ান্ত প্রচেষ্টার পাশাপাশি কমান্ডের সৈন্যদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করছে জান্তা বাহিনী। এ লক্ষ্যে এসব এলাকায় ব্যাপক গোলা বর্ষণ করছে জান্তা। তবে রাজধানীর পতন হলে উপকূলীয় অঞ্চলের সাধারণ ঘাঁটিগুলো সহজেই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে ধারণা।
আরাকান আমি বলছে, মঙ্গলবার জান্তা বাহিনী আকাশপথে ৫০০ পাউন্ড বোমা ফেলেছে। যা পূর্বে ব্যবহৃত বোমাগুলির চেয়ে অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক ছিল। ওইদিন বিকালে জান্তা ফাইটার জেটগুলি শহর এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে অধিক শক্তিশালী বোমা ফেলা শুরু করার পরে একটি সরকারি হাসপাতাল এবং শহরের মায়োমা বাজার ধ্বংস হয়ে যায়। এমনকি বেসামরিক বাড়িগুলোও ধ্বংস হয়েছে।
আরাকান এমি (এএ) বলেছে যে, জান্তার সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যের উপকূলীয় শহর রামরিতে আরও শক্তিশালী এবং ধ্বংসাত্মক বোমা ফেলতে শুরু করেছে যা শহরটিকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
জান্তা বাহিনী উপকূলীয় শহর পোন্নাগিউন, রাথেডং ও উত্তর রাখাইনের বুথিডং এবং রাজ্যের রাজধানী সিত্তওয়েতে শহর ও গ্রামের আবাসিক এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে।
এদিকে আরাকান আর্মি রাজধানী সিতওয়ে শহরে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা সামরিক জান্তা বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, যেকোনো সময় যুদ্ধ শুরু হতে পারে এবং যুদ্ধ শুরু হলে জান্তা গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা আরও বাড়বে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু শহর থেকে বেরোনের কোনো পথ নেই। আরাকান আর্মিকে ঠেকাতে রাজধানী শহরে প্রবেশের সমস্ত সড়ক পথ বন্ধ করে দিয়েছে সামরিক জান্তা।
(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/এসআইএস)

মন্তব্য করুন