কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ে লাল শাক খেলে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫৫

শাক-সবজি খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ক্ষতিকারক সব ফাস্ট ফুড হয়ে উঠেছে আমাদের নিত্যদিনের খাবার। সে কারণেই আমরা ভুগছি একাধিক জটিল-কঠিন রোগে। তাই খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাতের কাছে পাওয়া যায় উপকারী এমন কিছু শাক ও সবজি নিয়মিত খেলেই আমাদের স্বাস্থ্যের উপকার মিলবে। সহজেই পাওয়া যায় এমন শাকের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো লাল শাক।

লালশাক সবার কাছেই প্রিয় একটি পুষ্টিকর শাক। লাল শাক দেখতে যেমন সুন্দর তেমন খেতেও সুস্বাদু। সারা বছরই লাল শাক পাওয়া যায়। অতি পরিচিত শাকগুলোর মধ্যে লালশাকের তুলনা মেলা ভার। হিমোগ্লোবিনে পূর্ণ লাল শাক। আমাদের শরীরে রক্ত তৈরি করে কার্যকর লাল শাক । চিকিৎকেরা সব সময় সবুজ শাক-সবজি বিশেষ করে লাল শাক খেতে বলেন।

লাল শাকের ইংরেজি নাম রেড আমারান্থ ও বৈজ্ঞানিক নাম আনারান্থাস ওলেরাসিয়া। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কম বেশি লাল শাকের চাষ হয়। রান্নার পর শাকের রং গাঢ় লাল রঙ হয়। বেলে দোঁ-আশ থেকে এঁটেল দোঁ-আশ মাটি এবং যেখানে পানি জমে না এমন জমিই চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। আমাদের দেশের অনেক জায়গায় এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাল শাক চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।

১০০ গ্রাম লাল শাকে রয়েছে ১০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম ডায়াটারি ফাইবার, ৪.৬ গ্রাম প্রোটিন, ৪২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৩৪০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১১ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৩৬৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ মিলিগ্রাম আয়রন, ১.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ এবং ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। আর এই সবকটি উপাদানই যে শরীরের গঠনে ভীষণভাবে কাজে লাগে, তা আলাদা করে বলার কিছু নেই। বিশেষত ওজন কমাতে এই শাকের জুড়ি নেই।

লাল শাকের মধ্যে কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে যা শরীরের পক্ষে উপকারি। ৩০ বছর বয়সের পর আমাদের শরীরে নানান সমস্যা দেখা যায়। সেই সব দূরে রাখতে লাল শাক খুবই উপযোগী। যারা ডায়েট করছেন তারা অবশ্যই খাদ্য তালিকায় লাল শাক রাখুন। এক ঝলকে দেখে নিন, নিয়মিত লাল শাক খেলে কী কী উপকার পাওয়া যায়।

কিডনির কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়

কিডনির ফাংশন ভালো রাখতে ও কিডনি পরিষ্কার রাখতে লাল শাক খুব ভালো কাজ করে। নিয়মিত লাল শাক খেলে কিডনির কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত লাল শাক খেলে একদিকে যেমন কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ে, তেমনি অন্যদিকে রক্তে উপস্থিত একাধিক ক্ষতিকর উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

ক্যানসারের ঝুঁকি রোধ করে

লাল শাকে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সাররের সেল ও টিউমারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। লাল শাকে উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড, লোহা, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, একত্রে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে৷

চোখের রেটিনার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

লাল শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যা আমাদের চোখের রেটিনার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করে। যারা গ্লুকোমিয়ার সমস্যায় ভুগছেন, তারা প্রতিদিন নিয়ম করে লাল শাক খান। উপকার পাবেন।

অস্বাভাবিক চুল ঝরে পড়া রোধ করে

আপনার কী চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে? তাহলে, লাল শাক ভাল করে বেটে তার মধ্যে এক চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন এই মিশ্রণটি খান। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এতে চুল পড়া কমে যাবে অনেকটাই।

দাঁতের অনেক রোগ দূর হয়

আপনার দাঁতে কী হলদে রঙের ছাপ পড়েছে? তাহলে দাঁতের হলদে ভাব কাটাতে, বেশ কিছুদিন লাল শাকের মূল দিয়ে দাঁত মেজে, লবণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে দাঁতের মধ্যে থাকা হলুদ ভাব কেটে যায়। এছাড়াও দাঁতের অনেক রোগ দূর হয় লাল শাক খেলে। এমনই পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দূর করে

লাল শাকে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যানিমিয়া রোগীরা এই শাকটি খেতে পারেন। দুই আঁটি লাল শাককে পিষে রস সংগ্রহ করে তার সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে যদি নিয়মিত খেতে পারেন, তাহলে শরীরে কখনও রক্তের অভাব হবে না।

হার্ট ভালো থাকে

লাল শাকে থাকা ‘ফাইটোস্টেরল’ নামক একটি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে, তেমনি নানাবিধ হার্টের রোগের অ্যান্টিডোট হিসেবেও কাজ করে। সপ্তাহে কম করে ২-৩ দিন যদি লাল শাক খাওয়া যায়, তাহলে হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়

লাল শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে বাওয়েল মুভমেন্ট যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজমের আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপও হ্রাস পায়।

হাড় মজবুত হয়

লাল শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন কে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার হাড় শক্তপোক্ত হয়ে উঠলে অস্টিওপরোসিস মতো হাড়ের রোগ যে আর ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

জ্বরের চিকিৎসায়

সাধারণ জ্বরে যারা ভুগছেন, তারা এই ঘরোয়া পদ্ধতিটির সাহায্য নিতে পারেন। এক্ষেত্রে একটা প্যানে পরিমাণ মতো পানি নিয়ে তাতে এক মুঠো লাল শাক ফেলে দিন। তারপর পানি ফোটাতে শুরু করুন। যখন দেখবেন ফুটতে ফুটতে পানির পরিমাণ অর্ধেক হয়ে গেছে, তখন আঁচটা বন্ধ করে দিন। এরপর পানি ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এমনভাবে কয়েকদিন করলেই দেখবেন জ্বর পালিয়েছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ক্যালরির পরিমাণ কম থাকার কারণে ডায়াবেটিস রোগিদের জন্য লাল শাক উপকারী। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। আবার লাল শাক শরীরের ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

লাল শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। তাই হাই প্রেশারের রোগীরা নিয়মিত লাল শাক খেলে রক্তচাপের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এর মাধ্যমে শুধু প্রেশারই কমবে না বরং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমবে।

কোলেস্টরল কমায়

লাল শাককে বলা হয় কোলেস্টরলের যম। রক্তে কোলেস্টরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা রক্তনালীর ভেতর জমে রক্তপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে। এতে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ একাধিক রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে। তাই চিকিৎসকরা খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমানোর পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে লাল শাক দারুণ কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, লাল শাকে এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা খারাপ কোলেস্টোরেল কমাতে সাহায্য করবে।

(ঢাকাটাইমস/২৪ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :