নরসিংদীতে ঐতিহ্যবাহী 'পলো বাওয়া' উৎসব

নরসিংদী প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ মার্চ ২০২৪, ১৮:০৬
অ- অ+

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী খলিলাবাদ বিলে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পলো বাওয়া উৎসবে মেতেছেন মাছ শিকারিরা।

সোমবার দুপুরে উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের খলিলাবাদ গ্রামের খলিলাবাদ ঐতিহ্যবাহী বিলে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।

বিলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় বহু দূরদূরান্ত থেকে আসা শিকারিরা সকাল থেকে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মিনি ট্রাকে হাজির হন। পলো নিয়ে বিলে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিকারিরা ঝাঁকে ঝাঁকে দল বেঁধে হৈ হুল্লোড় করে নেমেছেন খলিলাবাদ বিলে। উৎসবে কিশোর থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব বয়োবৃদ্ধও রয়েছেন। হাজারো অধিক শিকারি পানিতে নেমে পলো, মাছ রাখার থলে নিয়ে কচুরিপানা সড়িয়ে হই হুল্লোড়ে মাছ শিকার ও উৎসব পালন করতে দেখা গেছে।

উৎসবটি উপভোগ করতে সকাল থেকে সারাদিন নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর, কিশোরী ও শিশুরাসহ বয়োবৃদ্ধ সবাই বিলের পাড়ে উল্লাস করে আনন্দ উপভোগ করেন।

মাছ শিকারি ও স্থানীয়রা জানান, শত বছরের বেশি সময় ধরে চলা খলিলাবাদ বিলে মাছ শিকারিরা পলো দিয়ে মাছ ধরে উৎসব চলে। প্রতি বছরই ফাল্গুন-চৈত্র মাসের কোন একদিনে এই উৎসব করে। উৎসবটিকে ঘিরে নরসিংদীসহ পার্শ্ববর্তী জেলার গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ সহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার দুই হাজারও অধিক শিকারি প্রতি বছর এ উৎসবে অংশ নেয়। তবে বিলে পানি ও মাছের ওপর ভিত্তি করে বছরে দুইবারও উৎসব হয়। আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও মানুষ এসে এখানে মাছ ধরেছেন। নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলার শখের মাছ শিকারিদের এক একনামে দল রয়েছে। সেই দলের প্রধানরা মিলে সিদ্ধান্ত নেন একেক সপ্তাহে একেক বিলে মাছ শিকার করবেন। সেই ঘোষণা গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ছড়িয়ে দেয় পরিচিতদের কাছে। এভাবেই নির্দিষ্ট দিনে সকাল থেকে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মিনি ট্রাকে হাজির হয়ে পলো উৎসবে মেতে উঠেন তাঁরা।

মাছ শিকারিরা জানান, উৎসবের দিন সকালে নিজ নিজ পলো, হাতাজাল, উড়ালজাল ও লাঠিজালসহ নানা ধরনের মাছ ধরার জিনিসপত্র নিয়ে বিলের পাড়ে গিয়ে সমবেত হন হাজারো শিকারি। ঘড়ির কাটায় নির্ধারিত সময় বেজে উঠলেই সবাই মিলে এক সঙ্গে পলো নিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। মাছ ধরে আনন্দ পাই। নিজ হাতে ধরা মাছ পরিবারের লোকজন নিয়ে মজা করে খাই।

গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে আসা সাগর কাজী, মোতালিব, আহাম্মেদ আলী নামে ষাটোর্ধ্ব এক মাছ শিকারি বলেন, 'আমি এসেছি গাজীপুর থেকে। ১৭ বছর যাবত প্রতি বছর এখানে আসি। এবারও এসেছি। মাছ পাওয়া না পাওয়া বিষয় না। সবাই মিলে আনন্দ করছি, হৈ হুল্লোড় করছি এটাই অনেক মজা খুব আনন্দ।'

৬৫ বছরের বৃদ্ধ আলাউদ্দিন কাজী নামে একজন বলেন, 'উৎসবে মাছ ধরতে আনন্দ লাগে। দিনব্যাপী আনন্দে গান হই হুল্লোড়ে চলবে এই পলো-বাওয়া উৎসব। বেঁচে থাকলে আগামীতেও আসবো।'

গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে আসা ৭৪ বছরের বৃদ্ধ আরমান সরকার মাছ শিকারি বলেন, 'আমি একটি বড় বোয়ালসহ ছোট মাছ পেয়েছি। এতেই আমি খুশি। টাকা দিলেও এই মাছ আমি কিনতে পারবো না। এটা শখের জিনিস। আমি বাড়ি নিয়ে পরিবারকে নিয়ে মজা করে খাবো।'

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, 'প্রতি বছরই এই বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো-বাওয়া উৎসব হয়। এই বিল সবার জন্য উন্মুক্ত। সবাই এখানে সারা বছরই মাছ ধরতে পারে।'

(ঢাকা টাইমস/০৪মার্চ/প্রতিনিধি/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘সীমান্তে পুশইন নিয়ে সরকার নীরব, কোথায় পাওয়ারফুল খোদা বখস: রিজভী
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় বিজিবির হাতে নারী-শিশুসহ আটক ১৪
ক্রিমিনাল ডাটাবেইজ পর্যালোচনার মাধ্যমে ছিনতাইকারী চক্র শনাক্ত করেছি: নাসিরুল ইসলাম
‘ওয়্যার ৩৬৫’ চালু করলো ব্র্যাক ব্যাংক  
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা