বিল বকেয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন, অবৈধ বিদ্যুতে চলছে ইউপি কার্যালয়

মো. জাকির হোসেন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০২৪, ১৩:২৩

প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু বিল পরিশোধ না করেই অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে খোদ একটি স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের। পরিষদের ভবনে ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি। কিন্তু বকেয়া পরিষদ না করে এবং পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই অবৈধ সংযোগে বিদ্যুৎ ব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বাবু (পাইলট)।

অভিযোগ রয়েছে উপঢৌকন গ্রহণের মাধ্যমে এই বেআইনি কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্মীরা। যে কারণে এক সপ্তাহেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা। এমনকি কর্তৃপক্ষের একেকজন একেকরকম ভাষ্য দিচ্ছেন বিষয়টি নিয়ে। ইউপি ভবনে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ সংযোগ অবৈধ স্বীকার করলেও ‘কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন’ এমন প্রশ্নের সদুত্তর দেননি কেউই।

জানা যায়, গত প্রায় এক বছর যাবত কোনো বিল পরিশোধ করা হয়নি খাতামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের। এতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা বকেয়া জমা হয়। এই বকেয়া পরিশোধে পর পর তিনবার নোটিশ দেওয়া হলেও কর্ণপাত করেননি চেয়ারম্যান বা ইউপি কর্তৃপক্ষ। পরিশেষে গত ৯ মার্চ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এরপর বিল পরিশোধ না করে নিজস্ব লোক দিয়ে পুনরায় সংযোগ দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন চেয়ারম্যান বাবু।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পরিষদ ভবনে যথারীতি বিদ্যুৎ রয়েছে এবং সচিবের কক্ষে তার চেয়ারে বসে হিসাব সহকারী ফরহাদ হোসেন কম্পিউটারে কাজ করছেন। জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও কিছু টাকা দিয়ে চালু রাখা হয়েছে।’

কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বাবু (পাইলট) মুঠোফোন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের বিষয় একবাক্যে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, পরিষদের বিদ্যুৎ কাটবে কেন? আমাদের কোনো বিল বকেয়া নেই। তাহলে কেন তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর অসংখ্যবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড অফিসের লাইনম্যান সাখাওয়াত হোসেন জানান, ‘সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে চেয়ারম্যান উপরে কথা বলে বকেয়া ৪০ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য সময় নিয়েছেন।’

সাখাওয়াত বলেন, ‘বিল না দেওয়া পর্যন্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। আমরা কেটে দেওয়ার পর তারা নিজেরা লাগিয়ে ব্যবহার করলে তা আমার জানা নেই। যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো, তারা ব্যবস্থা নেবেন। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারবো না।’

বিস্তারিত জানতে পল্লীবিদুতের কো-অর্ডিনেটর ফারুক হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোন কথা হলে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান যেন প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বড়। তাই বার বার তলব করলেও তিনি গুরুত্ব দেননি। তাই সংযোগটা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এখন নিজেই সংযোগ দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকলে তা চেয়ারম্যানের বিষয়। যদি মিটারসহ সংযোগে ব্যবহার করে তবে বিল রিডিং মিটারে উঠবে। তাতে কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু আমরা সেই অনুমতিও দেইনি। তাই এটাও অবৈধ।’

‘তাহলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন’ প্রশ্ন করলে তিনি এরিয়া ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

এরিয়া ইনচার্জ মঞ্জরুল ইসলামকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত সংযোগ প্রদান ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে না। এখনো ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ বিল দেননি। তাই আমরা নিজেরা বা অন্যকে দিয়ে সংযোগ নেওয়ার অনুমতিও দেইনি। তাহলে কীভাবে ইউনিয়ন পরিষদে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে জানতে চাইলে তিনিও আমতা আমতা করেন। দেননি কোনো সদুত্তর।

(ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :