উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার

মোকামতলা মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ, এক বছরে ৯ জনের মৃত্যু!

ওয়াসীম আহম্মেদ, শিবগঞ্জ (বগুড়া)
| আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১২:১৩ | প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৯

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা বাজার এলাকায় মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ। ফোর লেন রাস্তা নির্মাণে জনগুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে পারাপারের ব্যবস্থা না রেখে দেওয়া হয়েছে রোড ডিভাইডার।

প্রকল্প প্রস্তুত ও বাস্তবায়নে দেওয়া হয়নি স্থানীয় নিরাপত্তায় গুরুত্ব। এতে রাস্তা পারাপারের সময় প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। গত এক বছরে এই এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল ছাত্রীসহ প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন। এছাড়া রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

এই মরণফাঁদ থেকে রক্ষা পেতে মোকামতলায় ফুট ওভার ব্রিজ ও আন্ডার পাস্ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সুত্রে জানা যায়, গত বছরের মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত মোকামতলা বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জনের প্রাণহানী ঘটেছে।

সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ মার্চ মোকামতলা বন্দরের অদূরে চন্ডিহারা অমরাপুরি নামক স্থানে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস চাপায় আবুল কাশেম (৬৫) ও জাহিদুল ইসলাম (৫৬) নামে দুইজন নিহত হন। নিহত আবুল কাশেম উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের প্রয়াত মোজাহার আলীর ছেলে ও জাহিদুল ইসলাম একই গ্রামের প্রয়াত ময়েজ উদ্দিন প্রামানিকের ছেলে।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি মোকামতলা চৌমাথায় মহাসড়ক পারাপারের সময় ট্রাকচাপায় নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী সাইদুল ইসলাম (৪৬)। তিনি বগুড়া সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের ধাওয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

গত বছরের ১ ডিসেম্বর মোকামতলা বাজার এলাকায় মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে কাভার্ডভ্যান চালক মিরাজ নিহত হন। তিনি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার জয়দেব কৈপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

তারও আগে ২৭ সেপ্টেম্বর মোকামতলার নিউ গোল্ডেন চাইল্ড স্কুলের সামনে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় স্বপ্না বেগম (৩৫) নামের এক অটোভ্যান যাত্রী নিহত হয়েছে। স্বপ্না বেগম (৩৫) শিবগঞ্জের মোকামতলা ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের সুমন মিয়ার স্ত্রী।

ওই বছরের ৮ জুন রাত ৮টার দিকে মোকামতলা বাজার এলাকায় পায়ে হেঁটে মহাসড়ক পারাপারের সময় হযো আলী মোন্না (৭০) নামের একজন নিহত হন। তিনি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মিরপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

এর আগে ১৪ এপ্রিল পায়ে হেটে মোকামতলা বাজারের মহাসড়ক পার হওয়ার সময় বাস চাপায় সুলতান মিয়া নামে এক অটো ভ্যানচালক নিহত হন। তিনি দিনাজপুরের রানীগঞ্জের শ্রী হরি গ্রামের বাসিন্দা।

এর দিনদিন আগে ১১ এপ্রিল মোকামতলার অদূরে চৌকিরঘাট নামক স্থানে মোকামতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী মানসুরা আক্তার পিকআপের চাপায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায়। মানসুরা আক্তার উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের মালাহার গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেনের মেয়ে।

এর আগের মাসে ১৯ মার্চ মোকামতলা বাজার এলাকার জয়পুর রাস্তা মোড়ে রাস্তা পারাপারের সময় মোকামতলার ভাগকোলা এলাকার অটোভ্যান চালক আব্দুল বারী ট্রাকের চাপায় নিহত হন।

স্থানীয়রা জানান, মোকামতলা বন্দরের মহাসড়কের পশ্চিমে ইউনিয়ন পরিষদ, মোকামতলা মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মোকামতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মোকামতলা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামে মসজিদ, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, খেলার মাঠ ও বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়সহ আবাসিক এলাকা রয়েছে।

অপরদিকে রাস্তার পূর্ব পাশে মোকামতলা ইউনিয়নের বৃহৎ হাট, সরকারি ভূমি অফিস, বেশ কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মোকামতলা মডেল প্রেসক্লাব ও ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। মোকামতলা চৌমাথা থেকে রয়েছে সোনাতলা-সাঘাটা সড়ক।

রাস্তার উভয় পাশে জনগুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠান থাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে মহাসড়কের উভয় পাশে পারাপার হতে হয়। অন্যদিকে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মোকামতলা দিয়ে উত্তর বঙ্গের সব জেলার যানবাহন চলাচল করে।

সরেজমিনে মোকামতলা বন্দর এলাকায় গেলে দেখা যায়, বন্দরের পাঁচ কিলোমিটারের মাঝে লোক পারাপারের জন্য কোনো মিডিয়ান গ্যাপ (ইউটার্ন) রাখা হয়নি। বন্দরে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এবং সোনাতলা-শিবগঞ্জ বন্দরগামী চৌরাস্তায় রোড ডিভাইডার ঢালাই না করে সাময়িকভাবে লোক পারাপারের জন্য প্রায় দশ ফিট জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে।

বিভিন্ন রুটের যানবাহন রাস্তা পরিবর্তনের জন্য আন্ডারপাস ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে বন্দরের চৌরাস্তা থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে। যে কারণে চৌরাস্তায় শিবগঞ্জ ও সোনাতলা রোড থেকে আগত নানা ধরনের যানবাহন রাস্তা পরিবর্তন করতে গিয়ে উল্টো পথে চলাচল করছে। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

মোকামতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাখাওয়াত শামীম বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি দ্রুত গতিতে চলাচল করে। বন্দরে ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে রাস্তা পার হতে হচ্ছে।’

ব্যবসায়ী রুহুল আমিন ফটু বলেন, ‘মোকামতলা বন্দরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সোনাতলাগামী চৌরাস্তার মোড় সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান; যা বর্তমানে মরণফাঁদ। ব্যস্ততম এই স্থান দিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণিপেশার লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে। অথচ এখানে ফুট ওভার ব্রিজ তো দূরের কথা জেব্রা ক্রোসিংও দেওয়া হয়নি।’

কথা হয় শংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা রহিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন , ‘মেয়েকে নিয়ে আমি প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করি। চার লেন হওয়ার কারণে রাস্তা অনেক প্রশস্ত হয়েছে যা পায়ে হেঁটে পার হতে গিয়ে দ্রুতগতির যানবাহন প্রায়ই খুব কাছে চলে আসে। আমাদের প্রতিদিন এই ঝুঁকি নিতে হচ্ছে, এখানে একটা পথচারী সেতু ও আন্ডারপাস থাকলে আমরা নিরাপদে পার হতে পারতাম।’

এ ব্যাপারে সাসেক প্রকল্প ২ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক আহসান হাবিব জানান, ‘মোকামতলা বাজারের চৌমাথা এলাকায় একটি ফুট ওভার ব্রীজ নির্মানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী ঈদুল আযহার আগেই ব্রিজটি নির্মাণ সম্পন্ন হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/প্রতিনিধি/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :