টাঙ্গাইলে তীব্র দাবদাহে হাসপাতালে বাড়ছে রোগী

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল
  প্রকাশিত : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:৪৫| আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:০১
অ- অ+

সারাদেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। গরমে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন। সরকারের পক্ষ থেকে সারাদেশে তিনদিনের হিট অ্যালার্টের সময় শেষ হওয়ার পর আরও তিনদিন সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ দেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইলও এর ব্যতিক্রম নয়। গত কয়েকদিন ধরে টাঙ্গাইলে ৩৮ থেকে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠানামা করছে। এদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে স্বস্তিও মিলছে না। ফলে তীব্র দাবদাহে ঘরে-ঘরে রোগী দেখা যাচ্ছে। শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষের মধ্যে গরমজনিত রোগ বাড়ছে। সোমবার টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে দাবদাহের কারণে গরমজনিত রোগীর চাপের চিত্র দেখা গেছে। টাঙ্গাইলের আবহাওয়া অফিস বলছে এপ্রিলজুড়ে তীব্র তাপমাত্রা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তীব্র গরমে ঘেমে-নেয়ে একাকার। বাতাসের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার কারণে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি ও সংক্রমণও বেশি। তাই আবহাওয়ার বৈরিতায় রোগবালাই বেড়ে গেছে। ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, চর্মরোগ রোগী। মৌসুমি রোগে আক্রান্তদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতি বছর গ্রীষ্ম, বর্ষাকালে মৌসুমি ফ্লুজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ে। ঠান্ডা পানি পান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের প্রবণতাও যায় বেড়ে। এ সময় পানিবাহিত রোগ বেড়ে যায়। দূষিত খাবার ও পানি দিয়ে এই সংক্রমণ ছড়ায়।

টাঙ্গাইল সদর হাসপাতাল ঘুরে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর খবর নিয়ে জানা গেছে, অসহনীয় গরমের কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এ ছাড়াও বর্তমানে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে গরমজনিত জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া, স্ট্রোকের রোগী রয়েছে। অধিকাংশ রোগী শ্বাসকষ্টেও ভুগছেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রচণ্ড গরমে শিশুদের শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, পেটের সমস্যা, হাঁপানি, সর্দি, জ্বর-কাশি বেশি হচ্ছে, যেটা ভাইরাল ফ্লু। এছাড়াও টাইফয়েড ও পানিবাহিত হেপাটাইটিস এবং জন্ডিসের প্রবণতা বেড়েছে। কারণ তাপপ্রবাহের কারণে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সি মানুষের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়ে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে হিট স্ট্রোকের মতো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এতে ভয়ের কিছু নেই।

বেড়েছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গরমের তীব্রতায় বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। টাঙ্গাইলে সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সিট রয়েছে ১২টি। রবিবার থেকে সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত শিশুসহ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে ৪৬ জন। এসব রোগীর শরীরে প্রচণ্ড জ্বরও রয়েছে। সাত বছর বয়সি হুমায়রা, দেড় বছর বয়সি মৌমি, দেড় বছর বয়সি সোহানা, এক বছর বয়সি নুসরাত ও প্রাপ্ত বয়স্ক যেসব ডায়রিয়া রোগী সোমবার ভর্তি হয়েছে তাদের শরীরে প্রচণ্ড জ্বরও রয়েছে। রোগীর চাপে সিট না পেয়ে বারান্দায় শুয়ে আছে এই ওয়ার্ডের অধিকাংশ রোগী। শিশু ওয়ার্ডেও একই চিত্র।

টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রাপ্তবয়স্করা গরম মানাতে পারলেও শিশুরা সহজে গরম মানাতে পারে না। এজন্য গরমজনিত রোগে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। খাওয়ায় অনীহা, বমি, অতিরিক্ত কান্নাকাটিসহ জ্বর, ঠান্ডা এবং পেটের সমস্যার রোগী বাড়ছে। শিশুদেরকে গরম পরিহার করানোসহ শিশুর পছন্দমতো খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানো, বেশি তরল খাবার ও পুষ্টিকর খাবার বাড়ানোর পরামর্শ দেন এই শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

মেডিসিন বিভাগেও একই চিত্র। সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত এ বিভাগে ভর্তি হয়েছে ১১০ জন রোগী। এদের মধ্যে জ্বর-ঠান্ডা শ্বাসকষ্ট ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে অধিকাংশ রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে বিভিন্ন ক্লিনিক বা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে থাকা জ্বরের রোগীরা জানান, এবারের জ্বর ভিন্ন নমুনার। তাপমাত্রা ১০৩/৪ ডিগ্রি, সাথে প্রচণ্ড শরীর ব্যথা। স্বাভাবিক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধে জ্বর সারছে না। সাবোজেটরি ব্যবহারে তাপমাত্রা নেমে আসলেও পরক্ষণেই তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক (বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত) মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজাউদ্দিন তালুকদার বলেন, তীব্র তাপে গরমজনিত রোগ বাড়ছে। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, ডায়াবেটিস বৃদ্ধি ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী বেশি দেখা যাচ্ছে। গরমে লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করাটা জরুরি। প্রচণ্ড দাবদাহে বেশি বেশি তরল খাবার, ওরেন্স জুস ও বিভিন্ন ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দেন এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। প্রাপ্ত বয়স্কদের কিছুক্ষণ পরপর সারাদিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি খাওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। যারা কঠোর পরিশ্রম করে ঘাম ঝরায় তাদেরকে পানির সাথে খাবার স্যালাইন বা লবণ পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন। গরমজনিত জ্বরে প্রথমেই অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে টানা তিনদিন প্যারাসিটামল খাওয়ার পর জ্বর না সারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন তিনি। এছাড়া ঢিলেঢালা কাপড় পরা, বাইরে গেলে ছাতা, টুপি, ক্যাপ ব্যবহার করাসহ বিশুদ্ধ পানির বোতল রাখার কথাও বলেন এই চিকিৎসক।

(ঢাকা টাইমস/২২এপ্রিল/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনে কিশোর, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু 
ইতালি সফর শেষে দেশে ফিরলেন বিমানবাহিনী প্রধান
বিমানবন্দরে পেটের ভেতর ইয়াবা বহনকালে মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার-নির্বাচন কোনোটা ঠিকমত করতে পারবে কিনা সংশয়: মঞ্জু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা