তীব্র দাবদাহে তিস্তায় আশীর্বাদ বরফগলা পানি

রেজাউল ইসলাম বাবু, রংপুর ব্যুরো
| আপডেট : ০২ মে ২০২৪, ১৮:১২ | প্রকাশিত : ০২ মে ২০২৪, ১৮:০৩

তীব্র দাবদাহে হিমালয় ও ভারতের সিকিম, গ্যাংটকসহ বিভিন্ন এলাকার বরফগলা পানিতে বৃদ্ধি পেয়েছে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। গত এক সপ্তাহ ধরে ছয় থেকে সাত হাজার কিউসেক পানি ভারতের গজলডোবা ব্যারেজ দিয়ে বাংলাদেশ অংশের তিস্তা নদীতে প্রবেশ করায় সেচ ক্যানেলগুলোতে বেড়েছে পানি। এতে করে খরায় শুকিয়ে যাওয়া জমিতে কৃষকেরা সেচ দিতে পারছেন। ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ দুইশ কিউসেকে এসে দাঁড়ায়। এতে করে কৃষকেরা বোরো মৌসুমে নির্ধারিত জমিতে ঠিকমতো সেচ দিতে না পারায় বেড়ে যায় উৎপাদন খরচ।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, চলমান তাপপ্রবাহ তিস্তায় পানির প্রবাহ সেচের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। দাবদাহে হিমালয় পর্বতসহ ভারতের সিকিম রাজ্যে বরফ গলতে শুরু করেছে। বরফগলা পানি ভারতের গজলডোবা দিয়ে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করছে। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বৃষ্টির পানিও আসছে তিস্তায়। ফলে এটা তিস্তার সেচ এলাকার কৃষকের জন্য আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিলে তিস্তায় পানি থাকে আড়াই থেকে ৩ হাজার কিউসেক। এবার পানি পাওয়া যাচ্ছে ৬ হাজার কিউসেকের ওপরে। তাই এবার তিস্তা সেচ এলাকায় পানির খুব একটা সংকট নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার পুরোটাই পূরণ হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় সেচ দেওয়া এবং নদীর প্রবাহমাত্রা ঠিক রাখতে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি প্রবাহমাত্রা থাকা দরকার ১৫ হাজার কিউসেক। শুধু সেচ প্রকল্প এলাকায় প্রয়োজন প্রায় ১০ হাজার কিউসেক এবং নদীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজন ৬ হাজার কিউসেক পানি। কিন্তু শুকনো মৌসুমে তিস্তায় প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যায় না। শুষ্ক মৌসুমে বোরো চাষের সময় ব্যারেজ পয়েন্টে কয়েক বছর ধরে পাওয়া গেছে মাত্র ২-৩ হাজার কিউসেক পানি। ব্যারেজের ৪৪টি গেট বন্ধ রেখে সেচ প্রকল্পে পানি সরবরাহ করায় মূল নদীতে প্রবাহ বন্ধ থাকলেও সেচ ক্যানেলগুলো টইটম্বুর। যে পরিমাণ পানি তিস্তায় পাওয়া যাচ্ছে, তার সবটুকুই সেচ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের সেচ খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ হাজার কিউসেক পানি ভারতের গজলডোবা দিয়ে তিস্তা নদীতে প্রবেশ করছে। এতে করে সেচে ক্যানেলগুলোতে আমরা পর্যাপ্ত পানি প্রবেশ করতে পারছি। প্রতিটি সেচ নালা পানিতে পূর্ণ হয়েছে। আশা করি কৃষকেরা তাদের জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে পারবে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেচ ক্যানেলের নালাগুলো প্রায় শুষ্ক ছিলো। গত এক সপ্তাহ ধরে নদীতে পানির প্রবাহ বেড়েছে। সেচ নালাগুলো এখন পানিতে টইটুম্বুর। কৃষকেরা তাদের জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে পারছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি। সেচের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পূরণ হয়েছে।

সেচ-সুবিধা পাওয়া রংপুর সদর উপজেলার ভিন্নজগৎ এলাকার কৃষক খলিলুর রহমান জানান, হঠাৎ করে গত সাত দিন ধরে সেচনালাগুলো পানিতে ভরপুর হয়ে গেছে। বৈশাখ মাসে সাধারণত এরকম পানি সেচ নালায় দেখা যায় না। এখন পানির চিন্তা নেই। সেচ ক্যানেলে পানি থাকলে আমন মৌসুমে পানি নিয়ে আর চিন্তা থাকবে না বলে জানান এই কৃষক।

(ঢাকাটাইমস/০২মে/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :