চা শিল্পের বিদ্যমান সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান বাগান মালিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার
 | প্রকাশিত : ২৩ মে ২০২৪, ১৮:৩০

চা শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান বাগান মালিকরা। সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করে নানা দাবি দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার সকালে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. ঊর্মি বিনতে সালাম এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন চা বাগান মালিক কর্তৃপক্ষ।

লিখিত বক্তব্যে চা বাগান মালিকরা বলেন, ‘চা শিল্পের অতিশয় সংকটময় সময়ে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছি। চা শিল্পের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’

তারা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর দিক নির্দেশনা ও অপরিসীম অবদানের কথা।

তারা বলেন, ‘২০২২ সালে চা শিল্প শ্রমিক আন্দোলনের মুখে যে অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তা থেকে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই চা শিল্প, সেই সংকট থেকে উদ্ধার পেয়েছিল।’

মালিকরা বলেন, ‘বর্তমানে চায়ের নিলামমূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় চা শিল্পের ভিত নড়ে গেছে। কয়েক লক্ষ শ্রমিক এবং কর্মচারী তাদের জীবীকা নির্বাহের জন্য প্রায় দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে নিলামমূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় অনেক বাগান শ্রকিদের মজুরী দিতে পারছে না। চলমান পরিস্থিতিতে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জরুরিভিত্তিতে এই সমস্যাবলীর সমাধানকল্পে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

বাগান মালিকদের দাবি, বর্তমানে চায়ের উৎপাদন খরচ প্রায় ২৫০ টাকা। তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চা বোর্ড, বাংলাদেশীয় চা সংসদ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টি ট্রের্ডাস অ্যাসোশিয়েশনের সমন্বয়ে চায়ের নিলামমূল্য নিম্নতম ৩শ টাকা নির্ধারণ করলে চা শিল্প আপাতত রক্ষা পেতে পারে। নিম্নতম মূল্যের ওপরে চায়ের মান অনুযায়ী নিলামমূল্য নির্ধারিত হতে পারে।

পঞ্চগড়ে উৎপাদিত চা আমাদের জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও দুঃখজনক হলেও ওখানে চা উৎপাদনের কোনো নিয়মনীতি না মেনে খুবই নিম্নমানের চা উৎপাদিত হচ্ছে। ফ্যাক্টরি থেকে কোনো ট্যাক্স-ভ্যাট পরিশোধ না করে অবৈধভাবে চা বিক্রি হচ্ছে। এই নিম্নমানের চা বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানসম্মত চায়ের নিলাম বাজারে যথাযথ মূল্য পাওয়া থেকে বাধার সৃষ্টি করছে।

ছোট বড় প্রায় সব বাগানই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে হাইপোথেটিক লোন নিয়ে থাকে এবং চায়ের নিলামমূল্য সরাসরি কৃষি ব্যাংকে জমা দিয়ে তা পরিশোধ করা হয়। এই ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯% থেকে বর্তমানে ১৩% করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় তা পরিশোধ করা বাগানগুলোর পক্ষে অসম্ভব।

বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯% রাখার জন্য এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমার ব্যাপারে শিথিলনীতি গ্রহণ, রুগ্ন ও উন্নয়নশীল চা বাগানকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি তোলেন বাগান মালিকরা।

চা বোর্ডের বাধ্যতামুলক ২.৫% সম্প্রসারণ আবাদ কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রেখে শূন্যস্থান পূরণ করার ওপর জোর দেওয়ারও দাবি তোলেন তারা।

বর্তমানে বাগানগুলোর হাতে সম্প্রসারণ কার্যক্রমে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত তহবিলও নেই দাবি করে তারা সম্প্রসারণ কার্যক্রম কয়েক বছরের জন্য স্থগিত রেখে শূন্যস্থান পূরণ করে উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে প্রাধানমন্ত্রীর সদয় দিক নির্দেশনা চান।

বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে ফ্যাক্টরিতে সবুজ কাঁচা চা পাতা (যা পচনশীল) প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে চায়ের মান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য চা ফ্যাক্টরিগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহেরও দাবী মালিকদের।

চা শিল্পের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় চা শিল্পকে ভ্যাট ও ট্যাক্স থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানান।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চা আমদানির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এমতাবস্থায় চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে চা আমদানি নিরুৎসাহিত করারর ব্যবস্থা গ্রহণসহ চা শিল্প বাঁচাতে সুদৃষ্টি কামনা করছেন বাগান মালিকরা।

স্মারকলিপি প্রদানকালে বাগান মালিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নিনা আফজাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (খাদিম চা বাগান) ও বালিসিরা হিল টি কো লি. (জঙ্গলবাড়ি চা বাগান) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল রশিদ চৌধুরী, দি সিলেট টি কো. লি. (মালিনিছড়া চা বাগান), দি দলই টি কো. লি. (দলই চা বাগান) ও রাজনগর টি কো. লি. (রাজনগর চা বাগান) এর মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আজম আলী।

এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন তেহসিন চৌধুরী, আব্দুস সবুর খান, এম এ জামান সোহেল, রুকন উদ্দিন খান, মুফতি মোহাম্মদ হাসান, এম এ মালিক হুমায়ুন, প্রফেসর শফিকুল বারি, ইউসুফ জোসেফ ফারগুসন, ইফজাল চৌধুরী, এম এ ওয়াকিল খান, রিংকু চক্রবর্তী প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/প্রতিনিধি/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :