সরকার তার হীনস্বার্থে বেনজীরদের ব্যবহার করেছে: হাসনাত কাইয়ূম

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেছেন, ‘রাষ্ট্র দ্বারা হওয়া নির্যাতন, নিপীড়নের মধ্যে সব থেকে নির্মম ও নিষ্ঠুরতম জুলুম হচ্ছে গুম। সরকার মানুষকে বোঝাতে চায় যে— যেকোনো সময়, যেকোনো কারণে বা অকারণে এই রাষ্ট্র চাইলেই যে কেউ গুম হয়ে যেতে পারে। এজন্য হয়তো ১০০ মানুষকে গুম করে, কিন্তু তারা ভয় দেখাতে চায় কোটি কোটি মানুষকে। যাতে করে তাদের অন্যায্য ক্ষমতার বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে।’

সরকার তার হীনস্বার্থে বেনজীরদেরকে ব্যবহার করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বেনজীরকে যখন শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়া হয় তখন কি সে নিরাপরাধ ছিল? সে তো একদিনে গড়ে উঠেনি।’

শুক্রবার বিকালে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ’ উপলক্ষে মাফিয়াতান্ত্রিক ক্ষমতার ভয়াবহ বহিঃপ্রকাশ গুম বন্ধ করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বানে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সংগঠনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমনের পরিচালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য জাকিয়া শিশির। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সংগঠক হাবিবুর রহমান রিজু, ২০২০ সালে গুমের শিকার হওয়া সংগঠনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, ডিএসএ ভিকটিম নেটওয়ার্ক এর আহ্বায়ক গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার প্রমুখ।

এ সময় হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘এটা (সরকার) এখন ফ্যাসিবাদের ধাপ অতিক্রম করে মাফিয়াতন্ত্র হয়েছে। এই মাফিয়ারা কয়েকজন, এদের কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি নাই। এজন্য মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে এদের টিকে থাকার কোনো সম্ভবনা নাই। মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে বেনজীরের মতো সবাই পালাবে।’

এই রাষ্ট্রকে গণক্ষমতাতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ গড়তে পারবো।’

এ সময় হাবিবুর রহমান রিজু বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে জহির রায়হান থেকে শুরু করে আজ অবধি গুমের শিকার মানুষদের ওপর হওয়া বাংলাদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের দায় আছে। এই দায় নিয়েও সরকারগুলো টিকে থাকতে পারে সংবিধানের একপদকেন্দ্রিক ক্ষমতাকাঠামোর কারণে। তাই রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ডামি নির্বাচন করা এই মাফিয়াদের পতনের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধান সংস্কারের জন্য লড়াই করছে।’

গুমের শিকার দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, ‘হিউম্যান রাইট ওয়াচের ২০২১ সালের একটা রিপোর্ট অনুযায়ী ৮৬ জনকে গুম করার তথ্য প্রকাশ হওয়ার পরে তাদের আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। যারা আমাকে অন্যায়ভাবে গুম করেছিল আমি কি তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিচার চাইতে পারবো? কিংবা আমার পরিবার যে ভোগান্তির শিকার হয়েছিল, তার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার কার কাছে কীভাবে চাইবো? জনগণের সঙ্গে হওয়া রাষ্ট্রীয় জুলুমের বিচারের আইন কী? জনগণের ওপর হওয়া জুলুমের বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা কী?’।

ডিএসএ ভিকটিম নেটওয়ার্ক এর আহ্বায়ক গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার বলেন, ‘আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য যে, যারা গুম-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে; তাদেরকেই দেশ থেকে পালাতে হচ্ছে। আর যারা এগুলো করছে তারা বহাল তবিয়তে আছে। গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়নমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে জাকিয়া শিশির বলেন, ‘গুমের শিকার মানুষের স্বজনদের অবস্থা একবার ভাবেন। তারা তো জানেন না তাদের সন্তান, বাবা, স্বামী আসলে জীবিত নাকি মৃত। একজন মায়ের প্রশ্ন তার সন্তান জীবিত নাকি মৃত? একজন সন্তানের প্রশ্ন তার বাবা বেঁচে আছে নাকি সে এতিম? একজন স্ত্রী জানেন না সে সধবা নাকি বিধবা? গুমের শিকার পরিবার যখন দাবী করে অন্তত লাশটা হলেও দেন তাকে কবর দেই বা শশ্মানে পোড়াই। তখন মানুষের যে অসহায়ত্ব প্রকাশ পায় এর জন্য নিশ্চয়ই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ২০১৯ সালে গুমের শিকার ইসমাইল হোসেন বাতেনের ছোট ভাই খাইরুল আলম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির দপ্তর সমন্বয়ক নাঈমুল নয়ন, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল জলিল, ঢাকা জেলার সমন্বয়ক শাহাবুদ্দিন কবিরাজ লিটন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দপ্তর সমন্বয়ক সারোয়ার আলম ও এহসান আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের দপ্তর সমন্বয়ক জাহিদ রশিদ রানা ও মোহাম্মদ আজিজ, রাষ্ট্র সংস্কার যুব আন্দোলনের সমন্বয়ক মাশকুর রাতুল, উম্মে হাবিবা মায়া প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/৩১মে/জেবি/এসআইএস)