ভাড়াটিয়া সেজে নারীদের স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিতেন তারা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০২৪, ১৩:৪২
অ- অ+

দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বাসায় প্রবেশ করে অভিনব কায়দায় প্রতারণার মাধ্যমে নারীদের স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের হোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- মো. আলী হাসান সোহেল ও মোছা. সালমা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি স্বর্ণের চেইন, দুটি স্বর্ণের কানের দুল, একটি ইমিটেশন নেকলেস, প্লাস্টার মোম, দুটি মোবাইল এবং ৫০০ টাকা।

মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আরাফাত ইসলাম।

আরাফাত বলেন, “গত ৩০ এপ্রিল খুলনার বানরগাতী এলাকার একটি বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়া সেজে বাড়ির মালিকের স্ত্রীর কাছ থেকে কৌশলে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।”

এছাড়া কুমিল্লা, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াটিয়া সেজে বাড়ির নারীদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে অভিনব কায়দায় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে জানান র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক।

তিনি জানান, সোমবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১, সিপিএসসি, নরসিংদীর যৌথ আভিযানিক দল নরসিংদী সদর থানাধীন বাসাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে খুলনার বানরগাতী এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাড়াটিয়া সেজে নারীদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের অন্যতম মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, “ভুক্তভোগীর স্বামী আব্দুর রহমানের খুলনার বানরগাতী এলাকায় পঞ্চমতলা একটি বাড়ি রয়েছে। বাড়ির একটি রুম ভাড়া দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেখে গত ২৮ এপ্রিল স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দুজন এসে বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলেন। গ্রেপ্তার আলী হাসান সোহেল বাড়ির মালিককে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন এবং বর্তমানে খুলনার মোহাম্মদ নগরে বাড়ি নির্মাণ করবেন। এজন্য কয়েক মাসের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবেন।

বাসা ভাড়া চূড়ান্ত করে অগ্রিম দুই হাজার টাকা দিয়ে চলে যান তারা। ঘটনার দিন সকালে আলী হাসান সোহেল তার সহযোগী সালমাকে নিয়ে ভুক্তভোগীর ভবনের তৃতীয় তলায় আসেন। এসময় তাদের হাতে প্লাস্টিকের বালতিতে কিছু মাছ ও টুল ছিল। বাড়িতে এসে গ্রেপ্তারকৃতরা ভুক্তভোগীকে জড়িয়ে ধরে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করতে থাকেন। এসময় ভুক্তভোগীর স্বামী রুমের ভেতরে প্রবেশ করলে আলী হাসান সোহেলের কথিত স্ত্রীর কৌশলে ভুক্তভোগীর পঞ্চম তলার একটি রুমে নিয়ে গিয়ে গলায় ও হাতে থাকা স্বর্ণালংকার পরিষ্কার করে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে তা খুলে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান।

একই কৌশলে খুলনার খালিশপুর, দৌলতপুর ও পশ্চিম বানিয়াখামার, কুমিল্লা, নরসিংদী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তারা বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে এসে বাড়ির নারীদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে কৌশলে স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।

আরাফাত ইসলাম আরও বলেন, “চক্রটি যশোর ও চট্টগ্রামে একই কৌশলে প্রতারণার পরিকল্পনা করেছিল। এভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়ার একাধিক চক্র যোগসাজশে এই প্রতারণা করতো।”

কমান্ডার আরাফাত বলেন, “আলী হোসেন চক্রটির মূলহোতা। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৭-৮ জন। আলী হাসান ও তার মামী ৩-৪ বছর ধরে অভিনব কায়দায় মানুষের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিচ্ছে। বাসা ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি দেখে বিভিন্ন বাসায় গিয়ে স্বর্ণালংকার পরা নারীদের টার্গেট করে। বাড়ি ভাড়ার অগ্রিম টাকা দিয়ে যাওয়ার কিছু দিন পরে বাসায় নারিকেল, দুধ, তাজা মাছ, ফলমূলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র উপহার হিসেবে নিয়ে আসে। এগুলো তাদের নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে বলে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে।”

তিনি বলেন, “একটি বালতিতে রিঠা ফল ভেজানো ফেনাযুক্ত পানিতে একটি প্লাস্টার মোমের দলা রাখা থাকে যা ফেনার জন্য ভুক্তভোগীরা দেখতে পায় না। পরবর্তীতে অনুরূপ অন্য একটি প্লাস্টার মোমের দলার মধ্যে ভুক্তভোগীদের স্বর্ণালংকারগুলো ঢুকিয়ে পরিষ্কারের কথা বলে এই দলাটিও একই বালতিতে রেখে দেয়। কিছুক্ষণ পরে বালতিতে আগে থেকে রাখা ফাঁকা দলাটি তুলে একটি বাটিতে রেখে ঢাকনা লাগিয়ে ভুক্তভোগীদের ফ্রিজে রাখতে বলে। এ কথাও বলে দেয় যে, আধা ঘণ্টার আগে এই বাটি খোলা যাবে না। কেন না এর ভেতরে এসিড পানি আছে। পরবর্তীতে এসিড মিশ্রিত বালতির পানি বাইরে ফেলে দেওয়ার নাম করে স্বর্ণসহ প্লাস্টারের দলা নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়।”

এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃতরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে যেন তাদের চিনতে না পারে সেজন্য তারা বোরকা এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার করতো। একই কৌশলে ৩ জুন নরসিংদীর বাসাইল এলাকার একটি বাড়িতে স্বর্ণালংকার চুরি করে পালানোর সময় র‌্যাব-১১ এর গ্রেপ্তার হয়।

আলী হোসেন একজন স্বর্ণকার এবং সালমা তার অন্যতম সহযোগী। আলী হোসেনের এর আগে আশুলিয়ায় একটি স্বর্ণের দোকান ছিল। তিনি ৩-৪ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় এই প্রতারণার কাজ করে আসছেন।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, “যারা বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকেন তারা অবশ্যই ভাড়াটিয়াদের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইবাছাই করে বাড়ি ভাড়া দেবেন।

(ঢাকাটাইমস/০৪জুন/এসএস/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বার্ষিক ওরস শুরু শনিবার
আমিরাত সফর শেষে দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা 
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রাইজমানি ঘোষণা, কত পাবে চ্যাম্পিয়ন দল
সিরাজদিখান থানায় হামলা: ৬০ জনকে আসামি করে মামলা, গ্রেফতার ২ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা