এক সাদামাটা সহজ-সরল গ্রামের গল্প

রেজাউল মাসুদ
  প্রকাশিত : ১৩ জুন ২০২৪, ০৯:৪৫| আপডেট : ১৩ জুন ২০২৪, ১১:৫৭
অ- অ+

তিন যুগ আগের কথা কৈশোরের বেশির ভাগ সময় আমার কেটেছে মামাবাড়ি জামালপুর সদরের বন্ধরৌহায় আমাদের গ্রামের বাড়ী, লাগানো পাশের গ্রাম বনপাড়ায় মামাবাড়ি শৈশব, কৈশোরের অধিকাংশ সময় মামাবাড়িতে কেটেছে আমার বড় হয়েছি মামাতো ভাই বোনদের সঙ্গেই স্কুলে বৃহস্পতিবার দিন সব সময় হাফ ক্লাস হতো দুপুরে স্কুল থেকে ফিরেই চলে যেতাম মামাবাড়ি গরুর গাড়ীতে করে যেতাম, মাঁজে মাঝে আব্বার সাইকেলে মামার বাড়ী পোলাপানদের সাথে লাঠিম, ফুটবল, বর্ষাকালে ধইঞ্চাগাছ দিয়ে ডাংগুলি খেলা, দুপুর বেলা একসঙ্গে পুকুরে ঝাঁপাঝাপি করা, রাতের বেলা প্রচণ্ড গরম থাকা সত্ত্বেও ৭-৮ জন একসঙ্গে এক খাটে ঘুমিয়ে থাকার সময় ছিল সবচেয়ে সুখকর সেই থেকে সমবয়সী ও ইমেডিয়েট সিনিয়র দুরবর্তী মামাদের সঙ্গে গড়ে ওঠে আমার সখ্য, সম্পর্কটা মামার বদলে রূপ নেয় বন্ধুত্বে

জীবনের প্রথম টেলিভিশন দেখার অনুভূতি এখনো সুখ ছুঁয়ে যায়, সেই নয়–দশ বছর বয়সে মামার বাড়ীতে বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাড়ায় চালিত টিভি আনা হয়েছিল বিদ্যুৎ তো ছিল না, চালিয়েছিল ব্যাটারিতে সেই উঁচু বাঁশের মাথায় অ্যানটেনার সঙ্গে পরিচয় চোখ বুজলেই স্পষ্ট দেখতে পাই বাঁশের মাথায় অ্যানটেনা লাগানো সেই গ্রামের বাড়ি আর ১৪ ইঞ্চি সাদাকালো নিক্কন টিভিটা

সারাদেশের মতো জামালপুর সদর উপজেলার প্রতিটি এলাকায় সিনেমা প্রেমীরা তখন দলবেঁধে বসে যেতো সিনেমা দেখতে ব্যাটারীচালিত ১৪ ইঞ্চির সাদাকালো টিভিই তখন ছিলো ভরসা যাদের টিভি ছিল তাদের ঘর হয়ে উঠতো এক একটা মিনি সিনেমা হল

শুক্রবার এলেই তাড়াতাড়ি সব কাজ শেষ করে দুপুর তিনটার পর রব্বানী ভাইয়ের বাড়ীতে বিটিভির সিনেমা দেখতে বসে যেতাম শুক্রবারে সিনেমা দেখার স্মৃতি আসলে ভোলার মতো না নরুন্দি বাজারে জেঠার বাসায়ও যেতাম প্রায়‌ই! পুরো এলাকায় তখন রঙিন টিভি একটাই! এইসব দিনরাত্রী,ঢাকায় থাকি, প্রতিশ্রুতি, ম্যাকগাইভার''রোবোকপ' এবং 'দ্য এটিএম রবিনহুড' কিংবা সমুদ্র-রোমাঞ্চকর 'মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড সবই যেন আমার বর্নিল শৈশবের গল্পের একেকটা ক্যারেকটার আলিফ লায়লা নব্বই দশকের বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান, আরব্য রজনীর কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই টিভি সিরিজটি ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলো কেউ কেউ ‘আলিফ লায়লা’র চরিত্রগুলোর কথা চিন্তা করে আমার মত এখনও হেসে উঠতে পারে

সিনেমায় হাসির দৃশ্য আসলে তা দেখে সকলে প্রাণখুলে হাসতাম আবার আমাদের কেউ কেউ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিতো কিছুক্ষণ পরে কান্নার দৃশ্য দেখে সেই ব্যক্তিদের চোখে পানি দেখতাম রূপবতী কেশবতী এপি ১৫ কেশ তেল কিংবা আব্বুর জন্য ইকোনো, আম্মুর জন্য ইকোনো, সবার জন্য ইকোনো' আহ কি দারুন বিজ্ঞাপন ছিল!! আমাদের পুরো গ্রামে মাত্র চারটে টিভি! প্রতিবেশী এপাড়া–ওপাড়ার লোকজন তাই দল বেঁধে টিভি দেখতে আসতো রব্বানী ভাইয়ের ঘরে কি আর এত মানুষ জায়গা দেওয়া যায় টিভি আছে—এমন বাড়ির দরজায় টিভি বসিয়ে উঠোনের দিকে দিলেই হতো...শত মানুষের ভীড়ে উঠোনে বসে টিভি দেখার স্মৃতি কি ভোলা যায়!

এভাবেই সময় কেটে যায়, পালাবদল হতে থাকে ঋতুর আমি–আমরাও বড় হতে থাকি বড় হতে হতে আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের শৈশব–কৈশোর হারিয়ে ফেলি সেই রাতের বেলা উঠানে শুয়ে শুয়ে কালো আকাশে শুভ্র চাঁদ, তারা দেখার দিনগুলো হারিয়ে ফেলি মেঝেতে বসে সাদা–কালো টিভিতে প্রিয় অনুষ্ঠান দেখার সময়টা হারিয়ে ফেলি প্রিয় মানুষগুলো বড় হতে হতে অনুভব করি শৈশবটা সুন্দর ছিল শৈশবের বায়নাগুলো ছোট্ট ছিল, তবে শান্তি ছিল বেশ

লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ছাত্রলীগ নেতার ভিডিওর প্রশংসা নোবিপ্রবি অধ্যাপকের
ওষুধ ছাড়াই ঘরোয়া উপায়ে দূর করুন হজমের সমস্যা
সব দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে বাংলাদেশ: প্রেস সচিব
মে দিবস ২০২৫-এ বয়ে আনুক কর্মজীবীদের আশার আলো
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা