মানিকগঞ্জে বর্ষা শুরুর আগেই পদ্মার ভাঙন আতঙ্ক

বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই মানিকগঞ্জের শিবালয়ে পদ্মা পাড়ের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতঙ্ক। পদ্মায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় উপজেলার নয়াকান্দির আরুয়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্রোত ও ঢেউয়ে নদী পাড়ের তিন ফসলি জমি ভেঙে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেক বাড়িঘরের কিছু অংশ ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে পুরো এলাকা নদীগর্ভে চলে যাবে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন। বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই ভাঙন রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে পদ্মা গ্রাস করে নেবে তীরবর্তী এলাকার মানুষের ফসলি জমি এবং শেষ আশ্রয়টুকু!
তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য দাবি জানিয়েছেন তারা।
এলাকাবাসী জানায়, ১৯৯৮ সাল থেকে নয়াকান্দি এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়। দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে পদ্মার ভাঙনে আরুয়া ইউনিয়নের অর্ধেক অংশই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে এ এলাকায় প্রায় দেড়শ-দুইশ বাড়িঘর, গাছপালাসহ বহু ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। সম্প্রতি নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পাটুরিয়া ঘাটের পূর্ব দিক থেকে বড়রিয়া, নয়াকান্দি, মান্দ্রাখোলা ও মালুচি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। বিশেষ করে নয়াকান্দি এলাকায় বেশ কিছু ফসলের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া নয়াকান্দির মুন্সীবাড়ি, হালদার বাড়ি ও অনেক গাছপালা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ না করলে এগুলো নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
নয়াকান্দি এলাকার আসলাম প্রামাণিক জানান, দীর্ঘ ২ যুগের বেশি সময় ধরে পদ্মায় আমাদের ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। আমার ফুপুর বাড়িসহ বহু জায়গা-জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফুপার ১০-১২টি বড় বড় মরিচের ভিটা, তিন ফসলি জমি ও ধানের জমি ভয়াল পদ্মায় গিলে খেয়েছে। গত বছর এ জায়গার কিছু অংশে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। কিন্তু এবার বর্ষা শুরুর আগেই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বস্তাগুলো ভেঙে যাচ্ছে।
নয়াকান্দি গ্রামের বাদল মিয়া জানান, ভয়াল পদ্মা আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। অতি তাড়াতাড়ি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা রউফ মুন্সী জানান, নদীর পাড়ে শেষ বাড়িটি আমার। পদ্মায় একবার বাড়ি ভেঙে গেছে। বহু জমি ছিল আমাদের। প্রায় সবই নদীতে চলে গেছে। এখন শুধু বাড়িটি রয়েছে। সর্বনাশা পদ্মা আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিছে। এই বাড়িটি কখন যেন পদ্মায় চলে যায়। দিন-রাত সব সময় ভাঙনের ভয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কাটাচ্ছি।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করছি। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন বলেন, নয়াকান্দির কাছেই কুষ্টিয়া স্কুলের পাশের এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে নয়াকান্দি এলাকায় কাজ শুরু করব।
(ঢাকা টাইমস/১৩জুন/এসএ)

মন্তব্য করুন