ফের আতঙ্কে সুনামগঞ্জের বন্যা কবলিতরা, ভোগান্তিতে কয়েক লাখ মানুষ

গত দশ দিন পূর্বে বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে ফের বন্যার দেখা দিয়েছে। আগের বন্যার পানিতে নদ নদী ও হাওরে পানি ভরাট থাকায় বন্যা কবলিতদের মধ্যে আতঙ্কে ভর করেছে।
ইতোমধ্যেই ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার নিন্মাঞ্চলে বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক, বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল। সড়কে পানি ওঠায় জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ উপজেলার। তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর আরপিননগর, সাহেববাড়ী ঘাট, তেঘরিয়া, বড়পাড়া নদীর পাড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট। এছাড়া ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার নিন্মাঞ্চলে গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নিন্মাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে।
ব্যবসায়ী সাদেক আলী জানান, গত ২৩ জুনের পর থেকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে মানুষ বাড়িঘরে ফেরেন। আবার কেউ কেউ এখনো বাড়িতে ফিরতে পারেননি। মানুষের স্বস্তি ফেরার আগেই আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দশদিন আগে জেলার প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছিলেন। ৭০২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। এরমধ্যে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেছিলেন প্রায় ২৬ হাজার বন্যা কবলিত মানুষ। বাসাবাড়ি, জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ার সঙ্গে রাস্তাঘাটেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে জানা যায়, মেঘালয়ে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেই সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা দেখা দেয়। এই পানি মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি থেকে সুনামগঞ্জ আসতে ৬-৮ঘন্টা সময় লাগে। মূলত উজানের ভারী বর্ষণ পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি করে। আর এতেই সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহিরুন নেসা জানান, তিনি ঈদের দিন থেকে পরিবার নিয়ে এক সপ্তাহ আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে চারদিন হল বাড়ি ফিরেছেন। এখন আবারও পানি বাড়ছে। আগের বন্যাতেই কাঁচা ঘরবাড়ি ও জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। এখন আবার পানি ঢুকলেই ক্ষতি হবে। জহিরুন নেসা বলেন, ‘পরিবার লইয়া এই পানির মাঝে বড় বিপদেই আছি। কবে যে আমাদের দূর্ভোগ শেষ হবে আল্লাহ ভাল জানেন।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের বাসিন্দা মনোয়ার মিয়া বলেন, ‘আমার বাড়ি নদীর পাড়ে। গত বন্যায় ঘরে পানি উঠে অনেক ক্ষতি করেছে। আবারও পানি আসছে। ঘরের কোনো খানি-খাদ্য নাই। কী করে পরিবার নিয়ে চলি।’
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান এরশাদ মিয়া জানান, উজানের ঢলের কারণে এলাকার অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষের বাড়ি ঘরেও পানি ঢুকেছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলার সীমান্ত নদী দিয়ে এবার প্রচুর পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে। এ কারণে পানি বাড়ছে। তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, মেঘালয়ের ভারি বর্ষণের সঙ্গে সুনামগঞ্জেও বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদ নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত বন্যা হতে পারে। সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে ত্রান বিতরণ করা হচ্ছে জানিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘বন্যা মোকাবিলার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন বন্যা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পুরো জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। প্লাবিত হয় জেলার ১ হাজার ১৮টি গ্রাম। আট লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়। মানুষের বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নেয় ২৫ হাজার পরিবার।
(ঢাকাটাইমস/০২জুলাই/প্রতিনিধি/এসআইএস)

মন্তব্য করুন