১ লাখ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে কোকা-কোলাকে আইনি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
অ- অ+

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও মানহানির অভিযোগে এক লাখ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে কোকা-কোলা বাংলাদেশ লিমিটেডকে এবং দ্যা কোকা-কোলা কোম্পানিকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী।

রবিবার আইনজীবী জায়েদ বিন নাসের ডাকযোগে এবং ই-মেইলের মাধ্যমে এই নোটিশটি পাঠান।

নোটিশে বলা হয়, গত ৯ জুন ২০২৪ ইং তারিখ প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের দ্বারা শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়টিই স্পষ্ট হয়নি, পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে কোকা-কোলা। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বাংলাদেশে প্রচলিত দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ২৯৫ক এবং সাইবার সিকিউরিটি আইন, ২০২৩ এর ধারা ২৮ ও ৩৫ এর অধীনে কোকা-কোলা কোম্পানি অপরাধ করেছে।

এতে আরও বলা হয়, কোক স্টুডিও বাংলা বহুজাতিক কোম্পানি কোকা-কোলা কর্তৃক রোপিত একটি বিষবৃক্ষ। এই বিষবৃক্ষের বিষফল কয়েক বছর পরই আমরা সরাসরি পেতে শুরু করব। এটি জাতীয়তাবাদের ভিত নড়বড়ে করার পাঁয়তারা। বিভিন্ন কালজয়ী সৃজনশীল মৌলিক শিল্পকর্মকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে আসছে কোক স্টুডিও বাংলা, তথা কোকা-কোলা।

এর ফলে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৩ কে পদদলিত করা হচ্ছে। কোকা-কোলা কোক স্টুডিওর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪০ ও ৪৩ এরও লঙ্ঘন করে চলেছে প্রতিনিয়ত। এতে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০ সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত। মূল কথা হলো এর দ্বারা সংবিধানের অন্তরাত্মায় ছুরি চালানো হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব বিরাট হুমকির মুখে নিপতিত হয়ে আছে। প্রত্যেক ভূ-খণ্ডের নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা থাকে, থাকে নিজস্ব দাবি। কৃষ্টি-কালচার ও সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বাংলার রয়েছে নিজস্বতা। বাংলা সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। জগাখিচুড়ি সংস্কৃতির আবহ গড়ে তোলা এবং বিজাতীয় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে আকৃষ্ট করানোর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের জাতীয়তাবাদ ও নিজস্ব রুচিশীলতায় পরিবর্তন আনার লক্ষ্য নিয়ে নেমেছে কোকা-কোলা। অথচ বাংলা সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ ভাণ্ডার ও অর্জনের মানহানি করে, শিল্প গুণাগুণ নষ্ট করে ও শৈল্পিক অর্জনকে বিকৃত করে কোকা-কোলা কোম্পানি সামগ্রিকভাবে অপরিসীম ক্ষতি করে আসছে বিগত দুই বছর যাবৎ। এর ক্ষতিপূরণ টাকার অঙ্কে কোটির উপরে।

সমৃদ্ধশালী, রুচিসম্মত শিকড়কে আঁকড়ে ধরা বাংলা সংস্কৃতিকে মনে ধারণ করলে দেশে সংবিধান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে, প্রজন্ম হয়ে উঠবে দেশপ্রেমিক। পাশাপাশি কোকা-কোলার মত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় নামবে ধস। দেশের মানুষ সচেতন হয়ে উঠবেন, মানুষের অস্তিত্বের ভিত আরও মজবুত হবে, পরের প্রজন্ম বাংলাকে করবে আরও সমৃদ্ধশালী।

তাই কোক স্টুডিও বাংলার মতো পদক্ষেপের লক্ষ্য হচ্ছে এমনভাবে কাজ করা যাতে বাংলার ভিত নড়বড়ে হয় এবং প্রজন্মকে এমনভাবে গড়ে তুলতে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া, যাতে আগামী প্রজন্ম নিজ সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধশালী করা তো দূরের কথা বরং বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি আকর্ষিত হন ও নিজ সংস্কৃতিকে মন থেকে মুছে তা থেকে অনেক দূরে সরে যান।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে এবং সংবিধানের মূলনীতিকে আঘাত দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহিতা করছে কোকা-কোলা। নোটিশে কোক স্টুডিও বাংলার কার্যকলাপ কোকা-কোলা অনতিবিলম্বে বন্ধ না করলে কেনো সংবিধান ও আইন মেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানাতে পনেরো (১৫) দিন সময় দেয়া হয়েছে।

এই আইনজীবী বলেন, কোকা-কোলার অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও প্রতারণমূলক অপপ্রচারের ফলে অসামান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের জনগণের, যার সমস্ত দায়ভার কোকা কোলা কোম্পানির। আমার, আমার মক্কেলগণ, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবসহ অগণিত মানুষের অর্থনৈতিক, বিশ্বাসমত ও সামাজিক মূল্যবোধে আঘাত হানা হয়েছে, যার মূল্যমান কোটি কোটি টাকার বেশি।

আইনজীবী আরও বলেন, আমি নিজে বিইউপি আইন অ্যালামনাই সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে পৃথিবীব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ নেবার জন্য বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ অন্তত দশটি দেশের এক শতাধিক বিশ্বিবদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং অ্যালামনাই সংগঠনের (বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন) নেতৃবৃন্দ ও গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের কাছে চিঠি লিখেছি। আমার পাঠানো চিঠির পাণ্ডুলিপি লিগ্যাল নোটিশের সঙ্গে সংযুক্তি আকারে দেয়া হয়েছে।

লিগ্যাল নোটিশ অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনগণ সংবিধানের ৩৭, ৩৮, ৩৯ ও ৪৩ অনুচ্ছেদের সরাসরি প্রয়োগ ঘটানোর মাধ্যমে কোকা-কোলাকে বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। যে সিদ্ধান্ত দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৫ এর সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। কোকা-কোলা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের সাংবিধানিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ সুপ্রয়োগ ঘটাচ্ছেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মালিক দেশের জনগণ।

কিন্তু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার মাধ্যমে কোকা-কোলা কার্যত বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিচালনা করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। যেই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই সেই দেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম ফিলিস্তিনের উপর অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতামূলকভাবে চাপানো যুদ্ধে অবৈধ ইসরাইলের পক্ষ নেবার ইঙ্গিত দিয়ে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী অপরাধ করেছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। প্রচলিত দণ্ডবিধি অনুযায়ী বাংলাদেশে কোকা কোলা জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গসহ আরও বেশ কিছু অপরাধ সংঘটন করেছে।

পাশাপাশি বাংলাদেশে বলবৎযোগ্য বেশ কিছু আইনের কিছু ধারায় এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোকা-কোলা অপরাধ সংঘটন করেছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৪৪ অনুযায়ী মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করবার দণ্ডের বিধান রয়েছে। গত ৯ জুন ২০২৪ ইং তারিখ প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনে মিথ্যা তথ্য প্রদান স্পষ্টরূপে পরিষ্কার। জনগণের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কোকা-কোলা আর্থিকভাবে লাভবান হতে চেয়েছিল।

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে দেশে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে সেদেশের মানুষের মূল্যবোধ, চেতনা এবং বিশ্বাসকে আঘাত দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর পাঁয়তারা বরদাস্তযোগ্য নয়। পাশাপাশি যে দেশকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকার করে না সেই দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে ও প্রচলিত আইনে নানাধরণের গুরুতর অপরাধ করে কোকা-কোলা কোনোভাবেই বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে না।

গত ৯ জুন ২০২৪ ইং তারিখ থেকে কোকা-কোলার যেকোনো ধরণের মুনাফা করা অনৈতিকই শুধু নয়, অবৈধও বটে। বন্ধুপ্রতিম দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং বন্ধুপ্রতিম দেশের বিরুদ্ধাচারণ বাংলাদেশের সংবিধান এবং প্রচলিত ফৌজদারী আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কোকা-কোলা বাংলাদেশের সংবিধান এবং আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী। এই প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিচালনা করার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।

একদিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও প্রতারণা করে ব্যবসায় মুনাফা করার লক্ষ্যে বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট করার অপচেষ্টা করেছে কোকা-কোলা কোম্পানি, অন্যদিকে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের বিরুদ্ধে সুস্পষ্টভাবে ন্যাক্কারজনক অবস্থান দেখা যাচ্ছে। হিসাব কষে গত ৯ জুন ২০২৪ ইং তারিখের পর কোকা-কোলা যত পণ্য বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করেছে তার সম্পূর্ণ অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে দেবার দাবি জানাচ্ছি। এই বিজ্ঞাপন না সরালে কেনো কোকা-কোলার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে না তা জানানোর জন্য দ্য কোকা-কোলা কোম্পানি এবং কোকা-কোলা কোম্পানির বাংলাদেশি প্রতিনিধি কোম্পানি কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস লিমিটেডকে সাত (৭) দিন সময় দেয়া হচ্ছে।

নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এর ধারা ৪১ মোতাবেক কোন ব্যক্তি কোনো খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ বিপণন বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে, প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত বিজ্ঞাপনের শর্তাদি লঙ্ঘন করে বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্তিকর বা অসত্য তথ্য প্রদান করে অথবা মিথ্যা নির্ভরতামূলক বক্তব্য প্রদান করে ক্রেতার ক্ষতিসাধন করতে পারবেন না। অথচ কোকা-কোলা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন বানিয়ে বাংলাদেশের ক্রেতা সাধারণের অসামান্য ক্ষতি সাধন করেছে, এই ক্ষতিপূরণের মূল্যমান কোটি টাকার বেশি। (ঢাকাটাইমস/০৭জুলাই/এলএম/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
অনুমোদনহীন সংগঠন গঠনের বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছে বিএনপি
সংস্কার বিষয়ে বিএনপির আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই: মির্জা ফখরুল
মসজিদের দোতলা থেকে শিশুর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার 
দেশে ফিরেছেন ৬৬ হাজার ৩৬২ হাজি, মৃত্যু ৪৩ জনের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা