কোটা ইস্যুতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে দায় মুক্তি চায় সরকার

কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবি, যৌক্তিক দাবি নিয়ে আজকে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী রাজপথে রয়েছে। সরকার এই ন্যায্য দাবি, যৌক্তিক দাবিটাকে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এর দায় মুক্তি চায়। দেশের তারুণ্য এখনো রাজপথে আছে। অথচ সবচেয়ে ন্যায্য লড়াই মুক্তির লড়াইটা এখনো গড়ে উঠছে না।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে ভারতের সাথে দেশবিরোধী গোলামী চুক্তির প্রতিবাদে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
আলোচনা সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই উচ্চ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এই সংকটের সমাধান করা যাবে না। এটা আইনগত কোনো বিষয় না। এটা রাষ্ট্র এবং সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের একটি বিষয়। কোটা সংস্কারের যে দাবি আজকে গণদাবিতে পরিণত হয়েছে, যে ব্যাপারে জনগণের ঐক্যমত তৈরি হয়েছে নীতিগতভাবে সেটা মেনে নেয়া দরকার। এখানে প্রয়োজনে একটি কমিশন গঠন করে সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে আলাপ আলোচনা করে সমগ্র কোটা ব্যবস্থার একটা যৌক্তিক, গণতান্ত্রিক সংস্কার করা দরকার।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে তিনি বলেন, আমার স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র, আমার দেশের রাষ্ট্রপ্রধান... রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য মন্ত্রীরা কোথায় কোন দেশে যাবেন সেটাতো আমাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানিয়েছেন তারা (সরকার) ভারত সফরের পর চীন সফরে যাবেন। এক্ষেত্রে তারা টেকনোক্রেট অনুমতি নিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারকে চীন সফরের জন্য আগে ভারতের অনুমতি নিতে হয়েছে। ভারতের ভিসা আগে তাদের সংগ্রহ করেছে। এটাতে প্রধানমন্ত্রী কেবল নিজেকে এবং সরকারকে ছোট করেনি তারা পুরো দেশ এবং জনগণের মুখে চুনকালি মেখে দিয়েছে।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে সাইফুল হক বলেন, এই ২০২৪ সালে আপনারা ঠান্ডা মাথায় সচেতনভাবে বাংলাদেশের মানুষ যে এজেন্ডাগুলো দেখতে চেয়েছিল সেগুলোর কোনো দরকষাকষি ছাড়াই ঢাকায় ফিরে আসলেন। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী কোনো কিছু ছাড়াই দেশে ফিরে এসেছেন। ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী অভিমানের সুরে বলবেন আমরা আর কী বাকি রেখেছি ভারতকে দেবার। তার মানে বাস্তবেই তারা আর কিছু বাকি রাখেনি ভারতকে দিতে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমাদের দেশে কোনো একটা দিয়াশলাইয়ের দাম যদি সকালে হয় পাঁচ টাকা বিকালে সেটার দাম হয়ে যায় দশ টাকা। তারপরও শত শত লোক নামে না যে কেন দাম বাড়ানো হলো। আমরা সবাই বলি দাম বাড়ছে সিন্ডিকেটের কারণে। কই তাহলে সিন্ডিকেটের জন্য তো মিছিল কেউ করছে না। এটা কেন বলছি জানেন, কারণ আমাদের নিজেদের ভাবা দরকার। এটাইতো সেই তারুণ্য যে এই দেশের স্বাধীনতার পতাকা তুলেছিল। পাকিস্তানি সৈন্যের সামনে রক্তের নদী বয়ে গিয়েছিল তবুও কেউ সেই পতাকা নামাতে পারেনি। সেই ইতিহাস কে রচনা করেছে, এই দেশের তারুণ্য। সেই যুবক সেই তারুণ্য এখনো রাজপথে আছে অথচ সবচেয়ে ন্যায্য লড়াই মুক্তির লড়াইটা এখনো গড়ে উঠছে না। আমরা এখনো একজন আরেকজনকে মন খুলে বলতে পারছি না যে আপনার এই ভুলের কারণে এই কাজ হয়নি। এখনো আমরা খোলাখুলি খোলাখুলি বলতে পারছি না, আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে পারছি না যে অতীত আমরা কী ভুল করেছিলাম।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্ববান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের আবার দাঁড়াতে হবে। সেটা ২৮ অক্টোবর হোক বা যেকোনো সময় হোক। আগে যেরকমভাবে দাঁড়িয়েছিলাম সেভাবেই দাঁড়াতে হবে। সর্বব্যাপী যুগপৎ করতে হবে আমাদের।
দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপা’র সহ সভাপতি রাশেদ প্রধান প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/০৯জুলাই/এমআই/ইএস)

মন্তব্য করুন