কোটা সংস্কার আন্দোলন
প্রতিবন্ধী স্বামীকে কেন হত্যা করা হলো, প্রশ্ন কোরবান শেখের স্ত্রী শিল্পীর

‘ছেলে ও মেয়েকে বিসিএস ক্যাডার বানাবেন। এ স্বপ্ন নিয়ে ছোট্ট দোকান করে সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছিলেন আমার স্বামী। অথচ তাকে গুলি করে হত্যা করা হলো। কিন্তু কেন? কেন আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হলো। এখন আমি কীভাবে সন্তানদের লেখা-পড়া করায়ে মানুষ করব।’
এভাবে সাংবাদিকদের কাছে কথাগুলো বলছিলেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার পূর্ব রতনদিয়া গ্রামের কোরমান শেখের (৪৯) স্ত্রী শিল্পী আক্তার।
পাশেই বসেছিলেন রতন শেখের ছেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক ও প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রমজান শেখ ও মেয়ে সাভার ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিতু আক্তার মিতা (২০)।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন কালুখালীর পূর্নিব রতনদিয়ায় নিহত কোরমান শেখের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত কোরমান শেখের ছেলে রমজান শেখ বলেন, ‘আমার বাবা সামান্য মুরগি ব্যবসা করে কত কষ্ট করে আমার বোন আর আমাকে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন। আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হলো। বাবাকে এভাবে হত্যা করা হবে সেটা কখনো ভাবিনি। আমার মা-বোনকে এখন কে দেখাশোনা করবে। আমার ও আমার বোনের লেখাপড়া করার দায়িত্বটা কে নেবে?’
নিহত কোরমান শেখের মেয়ে মিতু আক্তার মিতা বলেন, ‘গুলির শব্দ শুনে দুপুরের দিকে মায়ের নির্দেশে বাবাকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলি। বাবা এলো ঠিকই কিন্তু লাশ হয়ে। আমিতো চাইনি আমার বাবা লাশ হয়ে ফিরে আসুক। বাবা ছাড়া এখন আমরা কীভাবে বাঁচব? আমাদের সংসার চালানো ও বেঁচে থাকার দায়িত্বটাই বা কে নেবে। আল্লাহর কাছে আমি আমার বাবার হত্যাকারীর বিচার চাই।’
স্ত্রী শিল্পী আক্তার বলেন, আমার প্রতিবন্ধী স্বামীকে যারা গুলি করে হত্যা করল, আমি সেই খুনিদের বিচার চাই।
উল্লেখ্য, ২০ জুলাই দুপুর একটার দিকে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে পড়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওইদিন রাত ১১টার দিকে তার নিজ বাড়ি কালুখালী উপজেলার বাগমারা গ্রামে কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। সেই থেকে নিহত কোরমানের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় স্ত্রী। অঝোরে কাঁদছেন তিনি। বাবার শোকে পাথর হয়ে গেছেন দুই সন্তানও।
ঢাকাটাইমস/০২আগস্ট/পিএস

মন্তব্য করুন