পুরো দেশ যেন মৃত্যুপুরী: জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রধান সংবাদ

​​​​​​​শাহনূর শাহীন, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫৬ | প্রকাশিত : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৩৫

দেশে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩৬তম দিন আজ সোমবার। আন্দোলনকারীদের ভাষায় দিনটি ‘৩৬ জুলাই’। অর্থাৎ বিজয় না আসা পর্যন্ত জুলাই মাসকে শেষ করতে চান না তারা। গত জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সোমবারের জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রথম পাতায় প্রাধান্য পেয়েছে আন্দোলনের পরিস্থিতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা, সারাদেশে নিহতের সংখ্যাসহ চলমান ঘটনাবলী।

ঢাকা টাইমসের প্রথম পাতার শিরোনাম ‘সন্ত্রাসীদের শক্ত হাতে দমনে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর। পত্রিকাটির আরেকটি শিরোনাম সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না। সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছেন বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়।

সমকালের প্রধান শিরোনাম সরকার পদত্যাগের এক দফা। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আর ৯ দফা নয়, এবার সরকার পতনের এক দফা দাবিতে এসে ঠেকেছে ছাত্র আন্দোলন। এই এক দফা বাস্তবায়নে রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পাদদেশে জনসমুদ্রে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শুধু শিক্ষার্থী নয়, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে। একসময় ওই এলাকা রূপ নেয় জনস্রোতে।

ছাত্র-জনতার জমায়েতের ব্যাপ্তি একদিকে পুরান ঢাকার চানখাঁরপুল, অন্যদিকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। নানা স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে চারপাশ। ‘দফা এক, দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ, ‘৯ দফা বাদ দে, এক দফার ডাক দে, ‘দফা এক দুই তিন চার, শেখ হাসিনা গদি ছাড়, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’– এ রকম প্রতিবাদী স্লোগান আন্দোলনকারীর কণ্ঠে শোনা যায়।

আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার শিরোনাম মন্ত্রী এমপিদের বাড়ি ও দলীয় কারযালয়ে হামলাপ্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১২ এমপির বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ২৬ জেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এগুন। এছাড়া দুই মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতেও হামলা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন সপরিবারে দেশ ছেড়েছেন।

কালবেলার প্রথম পাতার শিরোনাম দ্রুত চূড়ান্ত পরিণতি চান আন্দোলনকারীরা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পরিস্থিতি বিবেচনায় একদিন এগিয়ে আনা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, চূড়ান্ত লড়াই; এই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত স্বাক্ষর রাখার সময় এসে গেছে। ইতিহাসের অংশ হতে সবাই ঢাকায় আসুন। যে যেভাবে পারেন ঢাকায় চলে আসুন। ছাত্র-জনতা এক নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাবে।

কালেরকণ্ঠের প্রথম পাতার শিরোনাম ‘নৈরাজ্যবাদীদের কঠোর হাতে দমনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর’। খবরে বলা হয়েছে, নৈরাজ্যবাদীদের দমন করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তারা সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। তারা ছাত্র নয়, তারা সন্ত্রাসী।

বণিকবার্তার প্রধান শিরোনাম ভয়ংকর সারা দেশ, নিহত শতাধিক। খবরের গ্রাফিতিতে বিভিন্ন জেলায় নিহতদের পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যায় সর্বোচ্চ ২০ জন নিহত হয়েছে সিরাজগঞ্জে। এছাড়া ঢাকা জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ জন। খবরে বলা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনকে ঘিরে গতকাল দেশের ১৯ জেলায় অন্তত ১০৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহতের সংখ্যা হাজারেরও বেশি।

যুগান্তরের প্রথম পাতার শিরোনাম দেশজুড়ে টানা কারফিউ, তিন দিনের সাধারণ ছুটি। খবরে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ও অসহযোগে স্থবির হয়ে গেছে গোটা দেশ। এরকম পরিস্থিতিতে রবিবার সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে সরকার। এছাড়া সোমবার থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

ইত্তেফাকের প্রথম পাতার অন্যতম শিরোনাম সিরাজগঞ্জে থানায় ঢুকে ১৩ পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা। খবরে বলা হয়েছে, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা করা হয়েছে। হামলায় ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও এনায়েতপুরে তিন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া রায়গঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার ভাইসহ ছয়জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ জেলায় মোট নিহতের সংখ্যা ২৫।

নয়া দিগন্তের প্রধান শিরোনাম ‘পুরো দেশ যেন মৃত্যুপুরী। প্রতিবেদনটিতে সারাদেশে হতাহতের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে বিভিন্ন জেলায় পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। ঢাকায় রণক্ষেত্র, নিহত ১১ জন, আহত পাঁচ শতাধিক। রাজপথ ছিল শিক্ষার্থীদের দখলে।

পত্রিকাটির প্রথম পাতার অন্যতম শিরোনাম ’অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা দিলেন শিক্ষকরা’। খবরে বলা হয়, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রদের এক দফার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা দিয়েছে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’। গতকাল দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘রূপান্তরের রূপরেখা বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে রূপরেখা প্রস্তাব করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

তাদের দেওয়া রূপরেখায় পাঁচটি বিষয়ের প্রথমটি হলো- অবিলম্বে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর সম্মতিক্রমে নাগরিক ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষক বিচারপতি, আইনজীবী ও নাগরিকসমাজের অংশীজনদের নিয়ে একটি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অন্তর্ভুক্তিমূলক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। এই সরকারের সদস্য নির্বাচনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভূমিকা পালন করবেন। এই সরকারের কাছেই শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগ করবে।

রূপরেখায় বলা হয়, প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, মূল অংশীজনের তালিকা প্রণয়ন এবং শিক্ষার্থী-জনতার ছায়া সরকার গঠনের প্রয়োজনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক যেকোনো দায়িত্বগ্রহণ বা পালন করতে প্রস্তুত আছে। এই রূপরেখা একটি প্রাথমিক প্রস্তাব মাত্র। প্রয়োজনে এই প্রস্তাবকে আরো বিস্তৃত করার জন্য এই নেটওয়ার্কের শিক্ষকরা ভবিষ্যতে কাজ করতে আগ্রহী বলে রূপরেখায় উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান শিরোনাম লাশের সারি রক্তাক্ত দেশ’। এই খবরে বলা হয়েছে, ঢাকাসহ জেলায় জেলায় সংঘর্ষ, গুলি, হামলা। নিহতের সংখ্যা ১০৪। পত্রিকাটির প্রথম পাতার আরেকটি শিরোনাম ছাত্রদের সঙ্গে নামছে জনতা, অসহযোগে স্তব্দ সারাদেশ। খবরে বলা হয়, দেশব্যাপী চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ। ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে এরই মধ্যে রাজপথে নেমেছে শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে অভিভাবক ও গৃহীনিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের মধ্যে।

প্রতিদিনের সংবাদের প্রধান শিরোনাম সংঘাতে নিহত ৯৪’। পত্রিকাটির প্রথম পাতার অন্যতম শিরোনাম ’মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ’। খবরে বলা হয়, ছাত্র আন্দোলনের এক দফা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবির বিরুদ্ধে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

ভোরের কাগজের প্রধান শিরোনাম জঙ্গি স্টাইলে হামলা, নিহত ৯৬। খবরে বলা হয় জামায়াত-বিএনপির তাণ্ডবে থানা, মন্ত্রী-এমপির বাসা, বিচারপতিদের গাড়ি, সরকারি স্থাপনা, সংবাদপত্র অফিস, প্রেসক্লাব, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটেছে।

সংবাদের প্রধান শিরোনাম সংঘর্ষ: গুলি, পিটুনি, আগুন, নিহত অন্তত ৯২। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে দিনভর সারাদেশে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ২০ জেলায় অন্তত ৯২ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ সদস্য এবং অন্যরা শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

ডেইলি স্টারের প্রধান শিরোনাম ‘অ্যাট লিস্ট নাইনটিথ্রি ডেড এজ ভায়োলেন্স গ্রিপ্‌স দ্য কান্ট্রি’। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সারাদেশে অন্তত ৯৩ জন নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা সহস্রাধিক। অসংখ্য বুলেট বাংলাদেশের সহিংসতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে গতকাল।

(ঢাকাটাইমস/০৫আগস্ট/এসআইএস/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)

সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী গ্রেপ্তার

প্রথমবারের মতো সেনাসদরে প্রধান উপদেষ্টা

মাজারের শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিসিদের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের

জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি নেওয়াদের তালিকা করছে সরকার

মুক্তির দিশারী মহানবীর আদর্শ মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণীয়: প্রধান উপদেষ্টা

বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা জানতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্র সচিব

ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দেবে এডিবি

সংসদ সচিবালয় থেকে খোয়া গেছে ৯০ লাখ টাকা!

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :