ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে হিন্দু মহাজোটের সাক্ষাৎ, ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় আলোচনা
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (আইএবি) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষা করেছেন করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দলীয় কার্যালয়ের সৌজন্য সাক্ষাতে যান হিন্দু মহাজোটের একটি প্রতিনিধি দল।
যৌথ বৈঠকে নেতৃবৃন্দের মাঝে দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এর পরিচালনায় এতে আলোচনা করেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট নির্মলেন্দ রায়, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রমানিক ও জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোট সভাপতি সজিব কুন্ডু তপু।
এসময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, ‘আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সব সময় ছিল। উপমহাদেশে মুসলমানদের শাসনের সময়েও হিন্দুরা ভালো ছিলো। আমার দাদাজান হিন্দুদের জন্য মাদরাসা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমাদের এলাকার হিন্দুরা আমাদেরকে খুব ভালো জানে। আমরা চাই হিন্দুদের সাথে আমাদের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন উল্লেখ করে ফয়জুল করীম বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হলো সকলের সাথে সাম্য ও মানবিক মর্যাদা থাকতে হবে। ৫ আগষ্ট আমি বঙ্গভবনের মিটিংয়ে আপনাদের নিরাপত্তার কথা বলেছি। আপনাদের নিরাপত্তায় আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। ধর্মবর্ণ বাদ দিয়ে সকলে মিলে আমরা হাতে হাত রেখে শপথ গ্রহণ করে বলবো আমরা সকলে এক ও অভিন্ন।’
এসময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘চরমোনাই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ এছহাক রহ. মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দুদেরকে আশ্রয় দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছিলেন।’
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট নির্মলেন্দ রায় বলেন, ‘ইসলামে বলা হয়েছে অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে সমান অপরাধ। অমুসলিমদের নিরাপত্তা দেওয়া মুসলমানদের দায়িত্ব। আমরা হঠাৎ এদেশে আসিনি, এদেশের সন্তান আমরা। আপনারা যেভাবে আমাদের পাশে দাড়িয়েন তা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরন করছি।’
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রমানিক বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকার দেশকে বাবার সম্পত্তি মনে করেছিল। সর্বশেষ দুটি নির্বাচনে সাধারণ মানুষ কোনো ভোট দিতে পারেনি। ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে আপনাদের গতিশীল নেতৃত্বের কারণে মন্দীরে কোনো সমস্যা হয়নি।’
গোবিন্দ প্রামানিক আরও বলেন, ‘সকল মন্দিরের কমিটি আওয়ামী লীগের লোক দিয়ে করেছ, যার কারণে আওয়ামী গঠন করা মন্দির কমিটির লোকজন পালিয়েছে। বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন দেখানোর জন্য কিছু ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বে মন্দিরে হামলা জ্বালাও পোড়াও হয়েছে। ৫ আগষ্টের পরেও ম্যাসাকার করার জন্য আওয়ামী লীগ অপচেষ্টা চালিয়েছে।’
জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোট সভাপতি সজিব কুন্ডু তপু বলেন, ‘অনেক হিন্দু মন্দীর পাহারা না থাকায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ছাত্র ও যুব নেতৃবৃন্দ যে ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য আপনাদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এবারকার পরিবর্তনের ফলে সাধারণ হিন্দুরা মনে করে এবার বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ হবে। আমরা আগামী দিনগুলোতে আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে বিশ্বজিৎ হত্যা ও নাসির নগরে হিন্দুদের উপরে জুলুম নির্যাতনের বিষয়ে ভারত, মদী সরকার এবং তাদের মিডিয়া টু শব্দ করেনি। হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, ছাত্রনেতা শরিফুল ইসলাম রিয়াদ, কে এম শরীয়তুল্লাহ প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/এসআইএস)