মাদারীপুরে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বাড়ি দখল, আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
মাদারীপুরে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নাম ভাঙিয়ে বেগম বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমার পৈতৃক বাড়ি দখলে নিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারী এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।
মাদারীপুরের শহীদ হারুন সড়কের দরগাশরীফ এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার রাজধানীর বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
বুধবার এই ঘটনার প্রতিকার ও বিচার চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন এই শিক্ষার্থী।
ফাতেমার অভিযোগ, পূর্ব থেকে চলে আসা দখলদারিত্বের ধারাবাহিকতায় গণঅভ্যুত্থানে যোগদানের অপরাধে বিএনপি নেতার নাম ভাঙিয়ে আমার মায়ের ভিটেমাটি ভাঙচুর করে জায়গা দখলে নিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুব আহসান শিমুল। শিমুল মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিমের অনুসারী এবং শিমুল পৌরসভার মেয়র ইয়াদ আলীর ঘনিষ্ঠজন।
সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কিছু কর্মকর্তার আত্মীয় এমন পরিচয় দিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের ওপর মাহবুব শিমুল নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ করেন কলেজ শিক্ষার্থী ফাতেমা।
ফাতেমা বলেন, ‘গত ৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী শিমুল গংরা আমাদের বাড়িঘর ভাংচুর করে। এমতাবস্থায় ভয় ও আতঙ্কে অন্যত্র দিন কাটছে আমার পরিবারের। তিনি বলেন, আন্দোলনে জড়িত থাকায় ভয় তো ছিলই। প্রতিবেশি একজন যখন খবর দিলো, তখন গিয়ে দেখি আমাদের ঘর ভেঙে যাবতীয় মালপত্র লুটপাট করছে শিমুল ও তার লুটেরা বাহিনী। তারা আমাদের বাড়িসহ চারদিকে বেড়া দিচ্ছিল, বাধা দিতে গেলে শিমুল আমাকে আমাকে মারতে আসে এবং নানাভাবে হুমকি দেয়। সে আমাকে বলে, ‘‘তোদের পতন করা হবে। প্রয়োজনে খুন ও গুম করা হবে।’’ তখন আমাকে ও আমার ভাইকে ধরে নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে শিমুলের সঙ্গে থাকা কাজল, সাহিদ খান, শাহানা নাসরিন রুবি ও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন।’
‘আমাদের বাড়ির জমি দখল করে বাউন্ডারি দিচ্ছিল। তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনীকে জানাই। সেনা সদস্যরা এসে নিষেধ করলেও শিমুল তা অমান্য করে। সেনাবাহিনীতে বড় পদে তার আত্মীয় আছে বলে পরিচয় দেয়। এক পর্যায়ে সেনাবাহীন ধমক দিলে চুপ হন শিমুল। কিন্ত ততক্ষণে তার লোকেরা আমাদের বাড়ির জমিতে বেড়া দিয়ে আটকে দেয়’, অভিযোগ ফাতেমার।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনী নিষেধ করার পরও গেইট বানাচ্ছেন কেন প্রশ্ন করলে শিমুল তখন মাদারীপুর বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মুরাদ সাহেবের নির্দেশে এসব করছেন বলে দাবি করেন। এমনকি নিজেকেও বিএনপির লোক দাবি করেন।
ফাতেমা বলেন, ‘আমি বিএনপির সেই নেতার বাড়ি যাই এবং তাকে জিজ্ঞাসা করি। তখন তিনি সব অস্বীকার করে, বলে আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না। শিমুল আমার ক্লাশমেট, তাই হয়তো আমার নাম ব্যবহার করেছে। আমরা বন্ধু হতে পারি কিন্তু সে আওয়ামী লীগ। পৌরসভা চেয়ারম্যান ইয়াদও আমার বন্ধু। আমরা দুই দল করি। শিমুল ইয়াদের পক্ষের লোক। এতদিন আওয়ামী লীগের থেকে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে, এখন রাতারাতি বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে দখল শুরু করে দিয়েছে। আমি তার এসব সাপোর্ট করি না। সে তোমাদের ঘর ভাঙ্গার পরে রাতে এসে আমার পায়ে পড়ে বলছে— বন্ধু ভুল করে ফেলছি ঘর তো ভেঙে ফেলছি তুই আমাকে বাঁচিয়ে নে। আমি তাকে বলছি তুমি ভুল করছো। রাষ্ট্রের এই অবস্থায় বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে এটা তোমার করা উচিত হয়নি।’
ফাতেমার দাবি এই ঘটনার বিচার চেয়ে সামাজিক মীমাংসার প্রস্তাব দিলে সেই বিএনপি নেতা তাতে রাজি হননি। এ কারণে তিনি সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে বিচার দাবি করছেন।
ফাতেমা বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে আমরা এই বাড়িতে বসবাস করি। আমার বাবা এই বাড়ির জমি কিনেছেন। কিন্তু প্রভাবশালী এই সন্ত্রাসীরা এর আগেও সরকারি জমি দাবি করে আমাদের বাড়ি দখলের চেষ্টা করেছে। আমরা কোর্টে মামলা করলে, সামাজিকভাবে আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতার প্রভাবে মামলার খারিজ করান। এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারা রাতারাতি ভোল্ট পাল্টে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আমাদের বাড়ি দখল করেছে। আমি এর প্রতিকার চাই। রাষ্ট্রের কাছে এর বিচার চাই।’
(ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/এসকে/এসআইএস)
মন্তব্য করুন