বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ রেখে কোন বন্ধুত্বের বার্তা ভারতের?

ক্ষমতার পালাবদলের আড়াই মাস পার হলেও এখনো বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করেনি প্রতিবেশি ভারত। ফলে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র’ বাংলাদেশকে ভারত কোন ‘বন্ধুত্বের’ বার্তা দিচ্ছে সেই প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে আওয়ামী লীগ সরকার পতন পরবর্তী প্রেক্ষাপটে মেডিকেল বা জরুরি ভিসা বাদে বাংলাদেশিদের অন্য কোনো ভিসা দিচ্ছে না ভারত সরকার। আর বাংলাদেশিদের ভ্রমণ ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনই স্বাভাবিক হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা।
ভারতের ভিসা জটিলতার কারণে ইউরোপে পড়তে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সংকটে পড়েছেন। কারণ, ভারতে থাকা ইউরোপের অনেক দেশের দূতাবাস বাংলাদেশিদের ভিসা ইস্যু করে থাকে।
এছাড়া চিকিৎসার জন্যও ভিসা পেতেও হিমশিম খাচ্ছেন বাংলাদেশি আবেদনকারীরা। সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এর প্রভাব পড়েছে। এমনকি বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইটের সংখ্যাও কমে গেছে।
গত ১৭ অক্টোবর নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বাংলাদেশিদের ভ্রমণ ভিসা নিয়ে কথা বলেন।
তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে স্বাভাবিক কাজকর্ম করার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হলে ভারত সরকার এটি নিয়ে পুরোপুরি কাজ শুরু করবে।
তবে রবিবার (২০ অক্টোবর) পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ভারতে ভ্রমণ ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনই স্বাভাবিক হচ্ছে না।
বন্ধ হওয়ার আড়াই মাস পরও ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে না পারার কারণ হিসেবে প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘লোকবল এখনো কম থাকায় বাংলাদেশিদের জন্য এখনই ভারতের ভ্রমণ ভিসা স্বাভাবিক হচ্ছে না। তবে চিকিৎসা ও শিক্ষাকাজে জরুরি ভিসা সীমিতভাবে চালু আছে।’
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে এখন একধরণের শীতলতা অথবা পারস্পরিকভাবে বোঝাপড়ার একটা সমস্যা আছে বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। তিনি বলছেন, ‘সম্পর্ক যে একেবারে অকার্যকর সেটাও বলা যাবে না।’
এর উদাহরণ দিয়ে এম হুমায়ুন কবির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি চলছে, ডিজেল আমদানি চলছে। সেদিক থেকে যোগাযোগ নেই এটা বলা যাবে না। কিন্তু পিপুল টু পিপুল যেই যোগাযোগ সেই জায়গা বোধ হয় ধীরগতি হয়ে পড়েছে।’
সাধারণ মানুষের কাছে ভিসা, ভ্রমণ করতে যাওয়া এগুলো আকর্ষনীয় বিষয় উল্লেখ করে সাবেক এ রাষ্ট্রদূত ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকারি পর্যায়ে এসব বিষয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে হয়ত, কিন্তু খুব কার্যকর কিছু হচ্ছে না।’
সেজন্য কূটনৈতিক-সরকার পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এম হুমায়ুন কবির। বলেন, ‘দুদেশের বোঝা-পড়ার যেসব ঘাটতি আছে সেগুলো মিটিয়ে ফেলা প্রয়োজন।’
‘সাধারণ মানুষ কষ্ট পায় এমন কিছুতে ভারতেরও স্বার্থ হাছিল হচ্ছে। কারণ, মানুষ এটাকে নেতিবাচক হিসেবেই নিচ্ছে। তারা মনে করছে ভারত আমাদের সহযোগিতা করছে না। ফলে ভারতের ভিসা সহজীকরণ করে দ্রুত চালু করা দরকার।’
সম্পর্ক উন্নয়নে দুটি প্রতিবেশি দেশের মধ্যে নিয়মিত কিছু রুটিন ওয়ার্ক থাকে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভিসা বন্ধ প্রসঙ্গে ভারত তাদের লোকবল কম থাকার কথা বলেছে, যা আমাদের যাচাই করার উপায় নেই।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এ বিশ্লেষক মনে করেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং ভারতের মিনিস্টার ফর এক্সট্যানাল অ্যাফেয়ারের মধ্যে দ্রুত বসা উচিত। সম্পর্ক উন্নয়নে কি কি করণীয় তা নিয়ে কথা বলার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
লাইলুফার ইয়াসমিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কথা না বললে ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা সন্দেহ থাকতে পারে। ফলে উচ্চ পযায়ের বৈঠক হওয়া উচিত। এতে দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কীভাবে উন্নয়ন হয় সেসব বিষয়ে আলোচনা দরকার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের লাইলুফার ইয়াসমিন ঢাকা টাইমসকে আরও বলেন, ‘তবে সম্পর্কে যখন চির ধরে তখন কিন্তু ভিসা দিলেই সম্পর্ক উন্নয়ন হয় না।’
(ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/এসএস/ডিএম)

মন্তব্য করুন