ভেষজ গুণসমৃদ্ধ টমেটো ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়

খাবারের স্বাদ বাড়াতে কাঁচা ও পাকা টমেটোর জুড়ি নেই। রান্না করে খেতে বেশ মজাদার। সারা বছর জুড়ে এখন পাওয়া যায় টমেটো। ভেষজ গুণসমৃদ্ধ টমেটো সবজি হিসাবে ব্যবহার ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেও এর ব্যবহার সুপরিচিত। দেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে টমেটো রপ্তানিরও প্রচুর অর্থ উপার্জন করে আসছে।
টমোটো গাছের বৈজ্ঞানিক নাম সলানাম লাইকোপারসিকাম। টমেটোর নানা ধরণ রয়েছে যেমন প্লাম টমেটো, চেরি টমেটো, গ্রেপ টমেটো, বিফস্টিক টমেটো এবং টমবেরি। সারা পৃথিবীতে নানা রকমের টমেটো চাষ করা হয় কিন্তু সব থেকে প্রচলিত ধরনের টমেটো হল লাল রঙের টমেটো।
টমেটো গাছ সাধরণত ৪ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হয় ও এর পাতা একটু লোমশ ধরনের হয়ে থাকে। লাল টমেটো ছাড়া হলুদ, কমলা, কালো,বাদামি, সাদা, গোলাপি ও বেগুনি রঙের টমেটোও চাষ করা হয়ে থাকে।
টমেটোতে রয়েছে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’। টমেটো খেলে রক্তের লাল কণিকা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের ফ্যাকাশে ভাব ও রক্তস্বল্পতা দূর হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, শরীরের পুষ্টির জন্য যা যা দরকার লৌহ এবং অন্য ক্ষার টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। আপেল, কমলালেবু, আঙুর প্রভৃতি দামি ফলের চেয়ে টমেটোতে রক্ত তৈরির ক্ষমতা বেশি আছে। এতে লবণ, পটাশ, লোহা, চুন আর ম্যাঙ্গানিজ যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে আছে ০.৯ গ্রাম আমিষ, ৩.৬ গ্রাম শর্করা, ০.৮ মি. গ্রাম আঁশ, ০.২ মি. গ্রাম চর্বি, ২০ কিলোক্যালরি শক্তি, ৪৮ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২০ মি. গ্রাম ফসফরাস, ০.৬৪ মি. গ্রাম লৌহ, ৩৫১ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ২৭ মি. গ্রাম ভিটামিন ‘সি’।
নিয়মিত টমেটো বা টমেটোর রস খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। আসুন জেনে নিই টমেটোর রস খাওয়ার উপকারিতা-
রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ায় টমেটো। মানব দেহের জ্বালানি স্বরূপ হলো রক্ত। রক্ত দেহের সকল অংশে অক্সিজেন এবং সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বয়ে নিয়ে যায়। দেহে রক্তের কোনো উপাদান কম থাকলে সুস্থভাবে বাঁচা সম্ভব নয়। হিমোগ্লোবিন মূলত রক্তে অবস্থিত প্রোটিন। এটি রক্তের লোহিত রক্ত কণিকায় থাকে এবং রক্তের মাঝে প্রয়োজনীয় ঘনত্ব বজায় রাখে। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে দেহ অক্সিজেনের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে রক্তশুন্যতার মতো রোগও হয়। পুষ্টিবিদদের মতে, খাদ্যাভাসে সামান্য পরিবর্তনেই এ রোগের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণে প্রতিদিনের ডায়েটে রাখতে হবে টমেটো।
টমেটোতে রয়েছে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’। টমেটো খেলে রক্তের লাল কণিকা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের ফ্যাকাশে ভাব ও রক্তস্বল্পতা দূর হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, শরীরের পুষ্টির জন্য যা যা দরকার লৌহ এবং অন্য ক্ষার টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। আপেল, কমলালেবু, আঙুর প্রভৃতি দামি ফলের চেয়ে টমেটোতে রক্ত তৈরির ক্ষমতা বেশি আছে। এতে লবণ, পটাশ, লোহা, চুন আর ম্যাঙ্গানিজ যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য টমেটা খুবই উপকারি। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে টমেটো দেহের শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন টমেটা খেতে দেওয়া উচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত টমেটো খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
নিয়মিত টমেটো খেলে রক্ত শুদ্ধ হয়। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তাদের জন্য টমেটো বেশ উপকারী। প্রতিদিন এক বা দুইবার টমেটো খেলে রক্তস্বল্পতার সমস্যা অনেকটাই দূর হতে পারে।
ভিটামিন এ দ্বারা সমৃদ্ধ টমেটো চোখের জন্যে দারুণ উপকারী। বিশেষত চোখের মণি ভালো থাকার একটি প্রধান কারণ হল ভিটামিন এ যার ঘাটতি হলে অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে। টমেটোয় থাকা লাইকোপেন সেই সমস্ত রেডিক্যাল দূর করে যা চোখের নানা রোগের কারণ হতে পারে। এমনকি, সূর্যের প্রখর তাপ থেকে চোখকে রক্ষা করে এই লাইকোপেন।
টমেটোর রসে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম। একটি ১০০ গ্রাম টমেটোতে মাত্র ১৭ গ্রাম ক্যালরি থাকে। এতে মূলত পানির পরিমাণ বেশি থাকে। একটি টমেটোতে প্রায় ৯৪ শতাংশ খালি পানিই থাকে। তাই এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা যায়, টমেটো থাকা লাইকোপেনে প্রাকৃতিকভাবে মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর ফলে শরীরের মেদ ঝরে ওজন দ্রুত কমে। এছাড়া টমেটো শরীরে কারনিটাইন নামক একটি অ্যামাইনো এসিড তৈরি করে যা শরীরের মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
টমেটোয় রয়েছে নানা রকমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন জিটা ক্যারোটিন, ফাইটোফ্লুএন্স ও ফাইটোন। এগুলো শরীরের ফোলাভাব কমিয়ে আর্থ্রাইটিস রোধ করতে সাহায্য করে।
টমেটোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যেমন- লাইকোপিন। তাই এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের ফ্রি রেডিকেলস দূর করে এবং ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আর ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। টমেটোর কারণে ডিএনএ সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। বিশেষ করে প্রস্টেট ক্যানসার রোধ করতে সক্ষম লাইকোপিন। তাই সকলের জন্য টমেটো খাওয়া উপকারী হলেও, পুরুষদের বেশি করে টমেটো খাওয়া দরকার। গাঢ় লাল রঙের টমেটো রস খেলে পুরুষের দেহে পুরুষত্বহীনতা দূর হয়।
টমেটোতে রয়েছে ক্যালসিয়াম। যা হাড়ের জন্য অনেক উপকার। আপনার হাড় দুর্বল থাকে তবে টমেটো খেতে পারেন।
মাড়ি থেকে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ভিটামিন সির অভাবে মাড়ি থেকে যদি রক্তপাত হয়। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। তাই প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে মাড়ি থেকে যদি রক্তপাতের বিষয় থাকে উপকার পাবেন।
নিয়মিত টমেটোর রস খেলে ত্বক সুস্থ থাকে। আর ত্বক হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত। সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ফলে ত্বকে বলিরেখা পড়ার পরিমাণ কমে যায়। টমেটো একটি প্রাকৃতিক সংকোচক (অস্ট্রিঞ্জেন্ট)যা আপনার ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। মুখের ওপর প্রয়োগ করা টমেটোর রস দীর্ঘ ছিদ্র নিরাময় করে, ত্বক থেকে ব্রণ এবং গাঢ় দাগ কমাতে সাহায্য করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, তৈলাক্ত ত্বকের স্বাভাবিক প্রতিকার হিসেবে টমেটোর রস সবচেয়ে সেরা।
টমেটোর রস যেভাবে বানাবেন
টমেটোর রস বানাতে লাগবে ২টি টমেটো, ১ কাপ পানি ও স্বাদ মতো লবণ। টমেটো ভাল করে পানিতে ধুয়ে নিন। তারপর ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এবার একটি ব্লেন্ডারে সেই টুকরোগুলো দিয়ে পানি দিয়ে মিনিটপাঁচেক ঘোরান। হয়ে গেলে একটি গ্লাসে রসটি ছেঁকে নিয়ে স্বাদ মতো লবণ মিশিয়ে নিলেই তৈরি টমেটোর রস।
(ঢাকাটাইমস/৩০ অক্টোবর/আরজেড)

মন্তব্য করুন